Lactose বা ল্যাকটোজ

Lactose কি?

Lactose হলো এক ধরণের প্রাকৃতিক চিনি জাতীয় পদার্থ যা মূলতঃ দুধে পাওয়া যায়। তাই ল্যাকটোজকে বলে দুধের চিনি বা Milk Sugar. গঠনগত দিক থেকে এটি কার্বোহাইড্রেট অথবা শর্করা, আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এটি একটি স্যাকারাইড বা চিনি জাতীয় পদার্থ৷ মূলতঃ গ্লুকোজ আর গ্যালাক্টোজ একটার সাথে অন্যটা যুক্ত হয়ে ল্যাকটোজ তৈরি করে। প্রথমের দুইটি মনোস্যাকারাইড কিংবা এক অনুসম্পন্ন চিনি আর সর্বশেষটি ডাইস্যাকারাইড অর্থাৎ দুই রকমের চিনি একটি আরেকটির সাথে মিলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তৈরি করেছে৷

Lactose নামটা কোথা থেকে এসেছে যদি আমরা জানতে চাই তাহলে আমরা দেখতে পাবো শব্দটা মূলতঃ দুইটা অংশে আলাদা করা যায়। ল্যাটিন শব্দ Lac অর্থ দুধ। আর -ose সাধারণত ব্যবহৃত হয় চিনি জাতীয় পদার্থগুলোর বেলায়। এই জন্যই আমরা এই হালকা মিষ্টি স্বাধের পদার্থটিকে দুধের চিনি বলে থাকি। এটির আনবিক সংকেত C12H22O11.

ল্যাকটোজ কি প্রাকৃতিক নাকি কৃত্রিম চিনি?

Lactose মূলতঃ প্রাকৃতিক। যেকোনো স্তন্যপায়ী প্রাণিদের দুধে এই চিনি পাওয়া যায়৷ একইভাবে যেকোনো দুগ্ধ জাতীয় খাবারেও এটি রয়েছে। তবে নানা রকমের খাবার তৈরির জন্য বিশেষ করে ফুড ইন্ডাস্ট্রির জন্য স্ফটিক বা ক্রিস্টালাইজড ফর্মে ল্যাকটোজ পাওয়া যায়৷

কি কি খাবারে ল্যাকটোজ পাওয়া যায়?

যেকোন রকমের দুধ এবং দুধজাতীয় খাদ্যে, এমন কি সাধারণ রান্নার তাপমাত্রায় এর কিছু হয় না। এজন্য ক্ষির, পায়েস, পুডিং, কাস্টার্ডে Lactose আছে। সেই সাথে প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে তৈরিকৃত আইসক্রিম, ইউগার্ড, কার্ড, ক্রিমসহ নানা রকম খাবারে এটি পাওয়া যেতে পারে।

Lactose কীভাবে হজম হয়?

Lactose পরিপাকের মূল জায়গা হলো আমাদের ক্ষুদ্রান্ত। ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরে ভিলাই (Villi) রয়েছে। আমরা দুধ বা এই জাতীয় কিছু খেলে ভিলাই এক ধরণের এনজাইম বা উৎসেচক নিঃস্বরণ করে। এর নাম হলো ল্যাকটেজ (Lactase). এটি আরো একটা নামে পরিচিত, বিটা-ডি-গ্যালাক্টোসাইডেজ। এই এনজাইম ল্যাকটোজকে দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করে৷ এর একটি হলো গ্লুকোজ, আরেকটি হলো গ্যালাক্টোজ। এই দুই ধরণের চিনি জাতীয় পদার্থ আমাদের শরীর সরাসরি গ্রহণ করতে পারে। শৈশবকালে আমরা নিয়মিত দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করে থাকি, এই সময় ল্যাকটেজ এনজাইমের নিঃস্বরণও বেশি থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দুধগ্রহণের প্রবণতা কমতে থাকে তাই ল্যাকটেজ তৈরির ক্ষমতাও আমাদের শরীর হারাতে থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বয়সকালে আমাদের দুধ হজমে সমস্যা হয়। 

তবে এমন অনেকে আছে যারা জন্মগতভাবেই ল্যাকটেজ তৈরি করতে পারে না৷ তাদেরকে ল্যাকটোজ ইনটোলারেন্ট (Lactose Intolerant) বলে।

আরো পড়ুন : Immune System (ইমিউন সিস্টেম)

Gluten free diet (গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট)

Lactose Intolerant কারা? 

এমন অনেকে আছেন যারা জন্মের পর থেকেই Lactase নামের এনজাইম উৎপন্ন করতে পারে না। এই কারনে তারা ল্যাকটোজ পরিপাক করতে পারে না। তারা এ জাতীয় খাবার গ্রহণের পর তা পরিমান না হওয়া অবস্থায় Gastrointestinal Tract (Gut) এ চলে যায়। আমাদের Gut এ সাধারণ ব্যাকটেরিয়াল ফ্লোরা থাকে। এরা আমাদের শরীরের একটি অংশ এবং শরীর থেকে পুষ্টি নিয়ে এরা আমাদের শরীরের নানা উপকার করে। কিন্তু ল্যাকটোজ যখন সরাসরি Gut এ চলে যায়, তখন এই ফ্লোরা এটিকে ভাঙ্গা শুরু করে। তখন Gastrointestinal Disturbance তৈরি হয় যা পরবর্তীতে রুপ নেয় বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ডায়রিয়া, মাথা ঘোরানো, পেট ফেঁপে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গে। 

একজন মানুষ জন্মের পর পরই ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্ট নাও হতে পারে৷ এটি সময়ের সাতে ধীরে ধীরেও তৈরি হতে পারে৷ তবে এখন অনেক বিকল্প খাবার কিংবা প্রসেসড খাবার  আছে যেগুলো ল্যাকটোজ ফ্রি।

Lactose কেন জরুরী?

আমরা হয়ত এই সিদ্বান্ত নিয়ে বসে থাকতে পারি ল্যাক্টোজের প্রয়োজন নেই! কিন্তু সমস্যা না হলে এই কাজটা না করাই উত্তম। কারন ল্যাকটোজের বেশ কিছু দরকারি উপকারিতা আছে। 

  1. আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। কিন্তু ক্যালসিয়ামকে আমাদের শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে না। ল্যাকটোজ এই কাজে সাহায্য করে। 
  2. শুধু ক্যালসিয়াম না ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক গ্রহণেও এর অবদান রয়েছে।
  3. যে সব চিনিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হলে সেগুলো ডায়বেটিক রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ। প্রাকৃতিক চিনিগুলোর মাঝে ল্যাকটোজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশ কম। (আমরা সাধারণভাবে যাকে চিনি বলি, সেটির মুলনাম হলো সুক্রোজ) 
  4. ল্যাকটোজ নরমাল ফ্লোরায় ভালো ব্যাকটেরিয়ার (যেমনঃ ল্যাকটোব্যাসিলাই)  বিস্তৃতে সাহায্য করে। এই ভালো ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন করে এবং কিছু ব্যাকটেরিয়া ভিটামিনের জোগান দেয়।