ভিটামিন সি বা Vitamin C কি? ভিটামিন সি এর উপকারিতা, উৎস এবং অভাবজনিত লক্ষণ

ভিটামিন সি বা Vitamin C কি?

ভিটামিন সি হলো এক ধরণের Water Soluble বা পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যার সাধারণ রাসায়নিক নাম হলো এসকরবিক এসিড (Ascorbic Acid). এটি এক প্রকার Antioxidant যা ফ্রি-রেডিক্যাল থেকে আমাদের শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে। আমাদের শরীর নিজ থেকে ভিটামিন সি তৈরী করতে পারে না, তাই বিভিন্ন খাদ্য উৎস থেকে এটি গ্রহণ করতে হয়। 

বেশ কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে যাদের কাজ এসকরবিক এসিডের মতোই, তাদেরকেও একত্রে Vitamin C এর আওতাভুক্ত করা হয়। এর ভিতরে কিছু জৈব লবণ এবং ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক এসিডও (Dehydroascorbic Acid)  রয়েছে।

এই ভিটামিন আবিষ্কারের জন্য অ্যালবার্ট জেন্ট জিয়র্গি এবং ওয়াল্টার নরম্যান 1937 সালে যথাক্রমে ফিজিওলজি, মেডিসিন এবং রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

ভিটামিন সি এর কাজ বা উপকারিতা :

গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন সি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে এবং এটি মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি ভিটামিন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যক্রমের কারণে শরীরে এর অনেক উপকারিতা অনেক বেশি। যেমন: 

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

নানা রকমের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের সংক্রমণের বিপক্ষে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভাইরাল অসুখের বিপক্ষেও এর ব্যাপক অবদান রয়েছে। বর্তমানে করোনা মহামারির সময় Vitamin C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

২. দাঁত ও ত্বকের সুরক্ষায়:

দাঁত ও ত্বকের সুরক্ষায় ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ। হাড় এর গঠনেও এর অবদান আছে। দাঁতের পাশাপাশি এটি মাড়িকেও সুস্থতা প্রদান করে। 

৩. ক্ষত নিরাময়ে:

ক্ষত নিরাময়ে জন্য নানা রকমের উপাদানের প্রয়োজন হয়। এই সকল উপাদান তৈরিতে এই ভিটামিন মুখ্য ভূমিকা রাখে। 

৪. ফ্রি রেডিক্যাল কমাতে:

আমরা জানি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্রি রেডিক্যাল নানা রকমের সমস্যা করে থাকে। এসকরবিক এসিড এই ফ্রি রেডিক্যাল সমূহের বিপক্ষে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। 

ভিটামিন সি এর উৎস:

যেহেতু আমাদের শরীরের এই ভিটামিন তৈরি করতে পারে না এবং Water Soluble ভিটামিন হওয়ার কারণে অবশিষ্ট পরিমাণ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই  ঘাটতি পূরণের করতে প্রাকৃতিক উৎস থেকে এই ভিটামিন নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। আমরা নানা রকমের উৎস থেকে ভিটামিন সি পেতে পারি। এর ভিতরে অন্যতম হলো: 

  • সাইট্রাস জাতীয় ফল: লেবু, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, মৌসাম্বি ইত্যাদি 
  • টক জাতীয় ফল: তেঁতুল, বরই, কামরাঙ্গা, আমলকী, জলপাই, করমচা, আমড়া ইত্যাদি 
  • অন্যান্য ফল: পেয়ারা, মরিচ, পাকা পেঁপে , আনারস, বেদানা, জামরুল 
  • বিভিন্ন প্রকার শাক: যেমন- সজনে শাক, কচু শাক, পুইশাক, ধনে পাতা 
  • সবজি: করলা, কাচা টমেটো, সজনে, কাচা আম, চাল কুমড়া, কাচা কলা ইত্যাদি 

যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায় সেগুলো নিচে ভিটামিন এর পরিমাণসহ দেয়া হলো:

  • প্রতি ৬৪ গ্রাম লাল ক্যাপসিকাম বা বেল পেপার (কাঁচা) এ ৯৫ মিলিগ্রাম
  • প্রতি ৬৪ গ্রাম কাঁচা মরিচ এ ৬০ মিলিগ্রাম
  • প্রতি ৯৬ গ্রাম কমলার রসে  ৯৩ মিলিগ্রাম 
  • একটি মাঝারি কিউই ফলে প্রতি ৬৪ মিলিগ্রাম
  • প্রতি ৬৪ গ্রাম বা ১/২ কাপ রান্না করা ব্রকলিতে ৫১ মিলিগ্রাম
  • ১/২ কাপ স্ট্রবেরি পরিবেশনে ৪৯ মিলিগ্রাম
  • প্রতি ৬৪ গ্রাম টমেটো এ ৯৫ মিলিগ্রাম

ভিটামিন সি এর দৈনিক চাহিদার পরিমাণ: 

আমাদের দেহে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে Vitamin C গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। তবে বয়স অনুযায়ী এর চাহিদা কম বেশি হতে পারে। 

ভিটামিন সি গ্রহণকারী  চাহিদা (মিলিগ্রাম)
শিশু ৩০ -৩৫ মিলিগ্রাম
প্রাপ্তবয়স্ক  ৪৫ মিলিগ্রাম
গর্ভবতী ৫৫ মিলিগ্রাম
প্রসূতি  ৭০ মিলিগ্রাম

যারা ধূমপায়ী তাদের এই ধূমপানের ঝুঁকি কমাতে অতিরিক্ত পরিমাণে Vitamin C খাওয়া প্রয়োজন। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা যে পরিমাণে এই ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করি, সে পরিমাণে আমাদের দেহে এটি প্রবেশ করে না। এর অন্যতম কারণ হলো রান্নায় Vitamin C নষ্ট হয়ে যায়। আমরা সাধারণত প্রতিদিনকার খাবার থেকেই এর চাহিদা পূরণ করে ফেলতে পারি। অতিরিক্ত Vitamin C আমাদের দেহ থেকে প্রসাবের সাথে বের হয়ে যায়। 

ভিটামিন সি এর অভাবজনিত লক্ষণ ও রোগ:  

যেহেতু Vitamin C একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সেহেতু এর অভাবে নানা রকমের রোগ ও শারীরিক সমস্যা হতে পারে এবং এদের নানা প্রকারের উপসর্গ ও লক্ষণ থাকতে পারে। যেমনঃ 

স্কার্ভি রোগ: 

আগের দিনের নাবিকদের দীর্ঘসময় জাহাজে করে কাটানোর জন্য স্কার্ভি নামের রোগ হতো এই রোগে অনেকে মারা যেতেন। এই সময় জেমস লিন্ড ১৭৪৭ সালে একটি অভিনব কাজ করেন। তিনি জাহাজে লেবু ও কমলা তোলা শুরু করে। এভাবে কয়েক যাত্রায় দেখা গেলো এই ফলগুলো নিয়মিত খাওয়ার ফলে স্কার্ভি রোগ হয় না। এই চিকিৎসার পেছনে যার অবদান ছিলো তা হলো ভিটামিন সি। Vitamin C এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। 

এছাড়াও এই ভিটামিনের অভাব জনিত কারণে নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলাও দেখা দেয়:

  1. অসুস্থতা বোধ
  2. ক্লান্তিবোধ
  3. অবসন্নতা 
  4. তন্দ্রাভাব 
  5. ক্ষত ধীরগতিতে শুকায়
  6. স্নায়ুরোগ
  7. জ্বর, খিঁচুনি ইত্যাদি 

আধিক্য জনিত সমস্যা: 

আমাদের দেশ সহ প্রায় সকল দেশেই Vitamin C এর চুষে খাওয়ার উপযোগী সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। এগুলোর বেশির ভাগের স্বাদ ভালো হওয়ার কারণে দেখা যায় অনেকেই বাচ্চাদের চকলেটের বিকল্প হিসেবে এগুলো দিয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, দিনে মাত্রাতিরিক্তও গ্রহণ করা হয়ে যায়। যা শরীরের জন্য বিপদজনক হতে পারে। Vitamin C বেড়ে গেলে যে সমস্যাগুলো দেখা যেতে পারে: 

  • বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া
  • বুক জ্বালাপোড়া করা, 
  • তলপেটে অতিমাত্রায় ব্যথা হওয়া
  • মাথাব্যথা
  • অনিদ্রা
  • বুক জ্বালাপোড়া করা
  • ডায়রিয়া ইত্যাদি 

পরিশেষে, ভিটামিন সি আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সাপ্লিমেন্ট কখনোই খাবারের বিকল্প হয় বরং এরা সহায়ক। তাই যে কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পূর্বে আমাদের নিউট্রিশন এক্সপার্ট কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।