BMI কি? BMI পরিমাপ করার সূত্র ও চার্ট

BMI কি:

BMI এর পূর্ণরূপ হলো Body Mass Index. বিএমআই মূলত একটি পরিমাপ যাতে একজন মানুষের ওজন ও উচ্চতার সমন্বয়ে মানুষটির শরীরের চর্বির পরিমাণের উপরে একটা ধারণা করা। তবে এটি সরাসরি আমাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ নির্ণয় করে না, এটি মূলত একটি আনুমানিক ধারণা করে নেয়। এই ধারণা এর উপরে মানুষের ওজন কম না বেশি তার একটা অনুমান করা হয়।

অধিক বিএমআই হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটা মানুষের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি আর Body Mass Index কম হলে দেখা যায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে চর্বিও ওই মানুষের মাঝে নেই। এর থেকে আমরা ধারনা করতে পারি, কার অধিক পরিমাণে খাদ্য খাওয়া দরকার আর কার খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া দরকার। অতিরিক্ত চর্বির সাথে হার্টের অসুখ, স্নায়ুর অসুখের সংযোগ রয়েছে, এজন্য বিএমআই একটি ভালো সহায়ক হতে পারে।

তবে Body Mass Index অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক নাও হতে পারে। যেসব মানুষ পেশীবহুল কিংবা খেলাধুলার সাথে জড়িত তাদের শরীরে ফ্যাট না থাকা স্বত্বতেও Body Mass Index বেশি হতে পারে।

BMI চার্ট:

BMI এর মান সঠিকভাবে জানার জন্য ও তা অনুযায়ী কাজ করার জন্য চার্ট রয়েছে। দেশভেদে ও অর্গানাইজেশনের পার্থক্যভেদে এই তালিকা ভিন্ন হতে পারে। নিচে WHO (World Health Organization) প্রণোদিত তালিকা দেওয়া হলো:

ক্যাটাগরি বিএমআই (kg/m2)
আন্ডারওয়েট ক্লাস ৩ < ১৬.০
আন্ডারওয়েট ক্লাস ২ ১৬-১৬.৯
আন্ডারওয়েট ক্লাস ১ ১৭-১৮.৪
নরমাল (স্বাভাবিক) ১৮.৫-২৪.৯
ওভারওয়েট ( প্রি ওবিজ) ২৫-২৯.৯
ওবিজ ক্লাস ১ ৩০-৩৪.৯
ওবিজ ক্লাস ২ ৩৫-৩৯.৯
ওবিজ ক্লাস ৩ ≥ ৪০


তবে ২ বছর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত Body Mass Index নির্ণয়ের পদ্ধতি এক হলেও ভিন্ন তালিকা অনুসরণ করা হয়। এই পদ্ধতি বয়স্ক মানুষের জন্যও অনেক সময় উপযুক্ত না

BMI পরিমাপ করার উপায়ঃ

বিএমআই = (ওজন ÷ উচ্চতা২)

উচ্চতা২ অর্থ উচ্চতা X উচ্চতা
(এখানে ওজন ‘কেজি’ এবং উচ্চতা ‘মিটারে’ হিসাব করতে হবে।)

উপরের পদ্ধতি অনুসারে কারো ওজন যদি ৭৫ কেজি হয় আর উচ্চতা যদি হয় ১.৯ মিটার, তবে তার BMI হবে 

উচ্চতা২ এর মান: ৩.৬১
তাহলে তার Body Mass Index হলো ২০.৭৭

উপরে উল্লেখিত চার্ট থেকে আমরা দেখতে পাই মানুষটির BMI স্বাভাবিক রয়েছে।

স্বাস্থ্যের সাথে BMI এর সম্পর্ক:

বিএমআই এর সাথে স্বাস্থ্যের বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। Body Mass Index বেশি থাকার সাথে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার সংযোগ রয়েছে।
১। হৃদরোগ
২। উচ্চ রক্তচাপ
৩। লিভারের সমস্যা
৪। আর্থ্রাইটিস
৫। ডায়াবেটিস
৬। স্ট্রোক
৭। গল স্টোন
৮। বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার - ব্রেস্ট, কোলোন ও কিডনি ক্যান্সার

বিএমআই কম হলেও নানা রকমের সমস্যা থাকতে পারে।

১। পুষ্টিহীনতা
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
৩। রক্তশুণ্যতা
৪। হার্টে সমস্যা
৫। নিন্ম রক্তচাপও
৬। হাড়ের পুরুত্ব কমে যাওয়া

নরমাল BMI এর উপকারিতা:

১। ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।
২। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৩, শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হতে দেয় না। 
৪। হাড় ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
৫। ফার্টিলিটি বাড়িয়ে দেয়। 

স্বাস্থ্যকর বিএমআই রাখার উপায়:

১। নিয়মিত ব্যায়াম করা
২। সুষম খাবার খাওয়া
৩। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার কমিয়ে দেওয়া
৪। কায়িক পরিশ্রমের দিকে নজর দেওয়া
৫। পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো

পরিশেষে বলা যায়, বিএমআই এর পরিমাপ রাখা আমাদের জন্য ভালো সাব্যস্ত হতে পারে। এতে করে আমরা যেমন আমাদের ওজন নিয়ে সতর্ক থাকবো ঠিক একই ভাবে শারীরিক পরিশ্রমের দিকের খেয়াল রাখবো। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এই পদ্ধতি সার্বজনীন না। এথলেট, বডি বিল্ডার, কিংবা অতিরিক্ত বয়স্ক মানুষদের উপরে এই পদ্ধতি কাজে নাও লাগতে পারে।

যদি আমরা এই পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেই তখন আমাদের মাথায় অবশ্যই থাকতে হবে কম বিএমআই কিংবা বেশি বিএমআই কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক না, আমাদের জন্য উপকারী হলো স্বাভাবিক বিএমআই ধরে রাখা। তবেই আমরা সুন্দর ও সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।