চর্বি (Fat) বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য কি? চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রকারভেদ, কাজ ও উৎস

স্নেহ জাতীয় খাদ্য বা ফ্যাট বা চর্বি কি?

চর্বি (Fat) বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্যের উপাদানের একটি। এটি অনেক দিন পর্যন্ত আমাদের শরীরে অবস্থান করে এবং প্রয়োজনের সময় পুষ্টির যোগান দেয়। শরীরের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ও Fat হিসেবে জমা হতে পারে। তবে আমাদের শরীরে ফ্যাট জাতীয় খাবারের মূল উৎস হলো বিভিন্ন ধরণের খাবার। 

যখনই আমাদের সামনে স্নেহ জাতীয় খাবার শব্দটি চলে আসে তখনই আমাদের মনে হয় ব্যাপারটি হয়ত খারাপ। কোলেস্টেরোলের সাথে এর সম্পর্ক এই ব্যাপারটিকে আরো খারাপ করে তুলেছে। কিন্তু যত প্রশ্নই আসুক না কেনো স্নেহ জাতীয় খাদ্য ছাড়া আমাদের টিকে থাকা দুস্কর এবং কোনোভাবেই ব্যাপারটা ব্যবহারিক নয়।

চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রকারভেদ

ফ্যাটকে মোটাদাগে চার ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. স্যাচুরেটেড ফ্যাট
  2. মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট
  3. পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট
  4. ট্রান্স ফ্যাট

এছাড়া উপাদানের ধরণের উপরেও এই খাদ্য উপাদাঙ্কে ভাগ করা সম্ভবঃ 

  • ফ্যাটি এসিড
  • লিপিড
  • তেল
  • প্রাণিজ চর্বি
  • উদ্ভিজ্জ চর্বি

স্নেহ জাতীয় খাদ্যের পরিপাকঃ চর্বি জাতীয় খাবার পরিপাকে যে এনজাইমটি মূল ভূমিকা রাখে তা হলো লাইপেজ। এই এনজাইমের প্রভাবে স্নেহ জাতীয় খাদ্য বা চর্বি জাতীয় খাবার ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ফ্যাটি এসিড চেইনে পরিণত করে যা পরবর্তীতে আমাদের শরীর দ্বারা গৃহিত হয়। 

ফ্যাটের কাজ

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আসলেও কি আমাদের শরীরে স্নেহ জাতীয় খাদ্য বা চর্বি জাতীয় খাদ্যের কোনো প্রয়োজন রয়েছে? আসলে এর প্রয়োজনীতা অনেক। Fat জাতীয় খাদ্য আমাদের শরীরকে শক্তি দেয়। শর্করার এভাবে এটি মূল শক্তির উৎস হিসাবেও কাজ করতে পারে। একই সাথে কোষের স্বাভাবিক কাজের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। এরা আমাদের অনেক অভ্যন্তরিন অঙ্গকে রক্ষা করে এবং শরীরকে শীতের সময় গরম রাখে। নানা রকমের হরমোন তৈরিতেও এর অবদান আছে। 

আধিক্য জনিত সমস্যা 

  1. অত্যাধিক পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ ওজন বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে। একই সাথে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যগ্রহণ ব্যাপারটিকে আরো খারাপের দিকে নিতে পারে।
  2. উচ্চ রক্ত চাপ ও হৃদরোগ।
  3. কোলেস্টেরল বৃদ্ধি। 
  4. ইনসুলিন রেসিসটেন্স ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
  5. ব্রেইন স্ট্রোক।
  6. ক্যান্সার ইত্যাদি। 

স্বল্পতাজনিত সমস্যা

  • ত্বকে খসখসে ভাব ও দাগ তৈরি
  • ভিটামিন স্বল্পতা
  • শারীরিক দূর্বলতা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি
  • নখ নিজে থেকেই খসে যাওয়া কিংবা ভেঙ্গে যাওয়া
  • ক্ষত শুকাতে দেরি হয়, ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 
  • কোলেস্টেরল ট্রান্সপোর্টেশনে সমস্যা দেখা দেয়। 

স্নেহ জাতীয় খাদ্য সমৃদ্ধ খাবার

নিচে এমন কিছু খাবার এর তালিকা দেওয়া হলো যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এমন ফ্যাট রয়েছেঃ

  • এভোকাডো
  • পনির
  • ডার্ক চকলেট
  • ডিম
  • তেলযুক্ত মাছ
  • বাদাম
  • চিয়া সিডস
  • দই
  • অলিভ ওয়েল

স্নেহ জাতীয় খাদ্যের লেভেল ঠিক রাখার উপায়

আমাদের শরীরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ Fat থাকা আত্যাবশ্যক। একজন মহিলার জন্য এর পরিমাণ শরীরে মোট ওজনের ১০% থেকে ৩০% আর পুরুষদের জন্য এর পরিমাণ ৮% থেকে ১৯%। এই কারনেই আমাদের খাবারে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে স্নেহ জাতীয় খাদ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। যেভাবে আমাদের খাদ্যে ফ্যাটের পরিমাণ ঠিক রাখবোঃ 

১। ক্যালোরির পরিমাণ পরিমাপ করে

২। যথাযথ নিউট্রিশন সম্পর্কে ধারণা থাকলে আমরা কোন কোন খাবারে Fat আছে জানতে পারবো এবং কতটুকু গ্রহণ করতে হবে তা বুঝতে পারবো

৩। শরীরের যেন অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে না পারে সেজন্য ব্যায়াম করতে হবে, একই সাথে অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের প্রয়োজনীয় Fatও ঝেরে ফেলতে পারে। সেজন্য জানতে হবে কতটুকু ব্যায়াম আমদের শরীরের উপযোগী।

৪। কার্ডিওভাস্কুলার ট্রেনিং কিংবা সংক্ষেপে কার্ডিও শরীরের মেটাবলিজমকে ত্বরাণ্বিত করতে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি ঝেরে ফেলার জন্য খুবই দরকারি। 

পরিশেষে, স্নেহ জাতীয় খাদ্য একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান। একটি উপাদানকে পুরোপুরী সরিয়ে রেখে আমরা সুষম খাবার নিশ্চিত করতে পারি না। আর সুষম খাবার ব্যতীত আমাদের সুস্থ্য থাকাও অনেকটাই অসম্ভব না বলার অপেক্ষা রাখে না।