কিটো ডায়েট (Keto Diet) কি?
কিটো ডায়েট হচ্ছে একটি খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট প্ল্যান যার প্রধান মনোযোগ হলো “স্বল্প শর্করা এবং অধিক স্নেহজাতীয় খাদ্য”। এই ডায়েটের মুল লক্ষ্য হলো শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা এবং স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাদ্যগ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া। শর্করা কমে যাওয়ার কারণে শরীর “কিটোসিস” নামের মেটাবলিক বা বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া শুরু করে। এর ফলে শরীর খুব দ্রুততার সাথে চর্বি ভাঙ্গা শুরু করে ফলে ওজন কমে। একই সাথে আমাদের লিভারে মাঝে চর্বি কিটোনে পরিবর্তিত হয় যা মস্তিষ্ককে শক্তি যোগায়।
কিটো ডায়েটের আওতাভুক্ত খাবারসমূহ:
কিটো ডায়েটের এক বিশাল অংশ জুড়ে আছে নানা রকমের চর্বি জাতীয় খাদ্য। এর ভিতরে রয়েছে মাখন, ঘি, নারিকেল তেল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, পনির, সবুজ শাক সবজি, ফল-মূল, এভোকাডো, জলপাই, বাদাম, চকলেট ইত্যাদি। যে খাবারই থাকুক না কেনও, কিটো এর মুল লক্ষ্য হলো শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে ফেলা।
কিটো ডায়েটের সুবিধা:
- ওজন হ্রাস: কিটো ডায়েটের মুল সুবিধা হলো, এতে খুব দ্রুত চর্বি ভাঙ্গা শুরু হয়। এর ফলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়, এবং খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমা শুরু করে। একই সাথে রক্তে স্যুগার এর পরিমাণ কমে আসে।
- মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে: এই খাদ্যাভ্যাসের জন্য তৈরিকৃত কিটোন মস্তিষ্কে শক্তি যোগান করে এর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একই সাথে এলজাইমার’স ডিজিস রোধে কিটো ডায়েটের ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।
- ত্বককে সতেজ করে। একনির মতো ত্বকের সমস্যার উন্নতি ঘটে।
- খিঁচুনির মাত্রা কমিয়ে আনতে: এপিলেপ্সি ফাউন্ডেশনের ভাষ্যমতে কিটোসিস সেই সব রোগীদের খিঁচুনির মাত্রা কমিয়ে নিয়ে আসে যাদের উপরে অন্য নানা রকমের চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে দেয় নি।
- অনেক প্রি-মেনোপসাল নারীদের ওভারিতে সিস্ট দেখা যায়। একে PCO বলে। ধারণা করা হয় কিটো এই রোগের প্রকোপতা কমাতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার ও টিউমারের চিকিৎসায়: শর্করা ক্যান্সার সেল গ্রোথ আর টিউমারের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেহেতু কিটো ডায়েটে শর্করার পরিমাণ কম থাকে সেহেতু ক্যান্সার ও টিউমারের বৃদ্ধি অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত হয়।
আরো দেখুনঃ ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং
কিটো ডায়েটের অসুবিধা:
প্রতিটা ডায়েট প্ল্যানেরই সুবিধা-অসুবিধা দুইটাই রয়েছে। কিটো ডায়েটও এর ব্যতিক্রম না।
- কিডনির রোগ: এ ধরণের ডায়েটে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো, কিডনিতে পাথর জমার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
- খাদ্যাপাদানের ঘাটতি: অনেক ক্ষেত্রেই যারা এই খাদ্যাভ্যাস মেনে চলছেন তাদের ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের হার কমে যায়, যার ফলে নানা রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা যেতে পারে।
- ইটিং ডিসঅর্ডারঃ এই ডায়েট খুবই কঠোর ডায়েট প্ল্যানগুলোর একটি এই কারণে অনেকের অনেক সময় “ইটিং ডিসঅর্ডার” দেখা দেয়। আবার এই কঠোরতার জন্য লম্বা সময় চালিয়ে যাওয়াটাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই স্থূলতা আবার ফিরে আসতে পারে।
- রক্তে স্যুগার লেভেল অনেক কমে যেতে পারে।
- Keto Flu: কিটোসিস প্রক্রিয়ার সাথে মানিয়ে নেওয়ার বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: কোষ্ঠকাঠিন্য , দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, বমি, মাথা ব্যথা ইত্যাদি । একে Keto Flu বলে।
- মহিলাদের মাসিক চক্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিটো প্রশ্নোত্তর
1. সাধারণত কতদিন সময় লাগে কিটোসিস শুরু হতে?
সাধারণত মানুষ দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর কিটোসিসে প্রবেশ করে এবং এই সময় থেকেই ওজন কমা শুরু হয়।
2. কমপক্ষে কতদিন কঠোরভাবে কিটো মেনে চলা উচিত?
কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ দিন প্রতি সপ্তাহে কিটো ডায়েট মেনে চলা উচিত। বাকি দিন স্বাভাবিক শর্করা গ্রহণ করা যায়। তবে এই ব্যাপারে মতবিরোধ আছে।
3. চিট ডে (Cheat Day) কি রাখা উচিত?
একদিন বা দুই দিন স্বাভাবিক শর্করা গ্রহণ কর যেতে পারে। কিন্তু চিট ডে এর নামে অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ হিতে-বিপরীত হতে পারে। কারণ এতে করে কিটোসিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
4. গর্ভাবস্থায় কি কিটো মেনে চলা যাবে?
অকাট্য প্রমাণ না থাকার কারণে ডাক্তাররা সাধারণত গর্ভাবস্থায় এটি মেনে না চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন না।
পরিশেষে, কিটো ডায়েটের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক রকমের মতবাদ আছে। অনেকে এটাকে ভালো বলেন অনেকে একে মন্দ। কিন্তু এই কথা সত্যি একই পন্থা যেমন অনেকের জন্য বেশ ভালো হতে পারে, ঠিক একই ভাবে অনেকের জন্য একদমই ভালো না হতে পারে।
এই জন্য ডায়েটেশিয়ান, নিউট্রিশন এক্সপার্ট অথবা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত এতে করে আমরা আমাদের শরীরের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।