সুষম খাদ্য কি? সুষম খাদ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সুষম খাদ্য কাকে বলে:

যে সব খাদ্য মানুষের প্রয়োজনীয় সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে তাদেরকে সুষম খাদ্য বলা হয়।

শর্করা, আমিষ, স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ লবণ, পানি; এই ছয়টি খাদ্য উপদান মানবদেহের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য অতি জরুরী। মানবদেহের সার্বিক পুষ্টিচাহিদা পূরণ এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন এই উপাদানগুলোকে একটি সঠিক অনুপাতে খাওয়া প্রয়োজন। 

প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এই ৬ ধরনের খাবার সঠিক অনুপাতে উপস্থিত থাকলে তাকে balanced diet বা সুষম খাদ্য বলা হয়ে থাকে।

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে, মানুষের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং প্রতিদিনের কাজ-কর্মের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পুষ্টির যোগান দিতে সক্ষম সুষম খাদ্য।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন আমাদের নির্দিষ্ট পরিমান পুষ্টি এবং ক্যালরি গ্রহনের প্রয়োজন রয়েছে। সুষম খাদ্য আমাদের সেই প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। এজন্য প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সেই দৈনন্দিন পুষ্টি এবং ক্যালরির চাহিদাকে সঠিকভাবে পূরণ করে রাখার মাধ্যমে দেহকে সুস্থ রাখতে পারি এবং একই সাথে নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগ-সমস্যা থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারি। 

শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে বজায় রাখতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং ক্যালরির চাহিদাকে পূরন করতে গ্রহণ করা খাবারের মাঝে একটি সুষম বন্টন থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। তা না হলে খাবারের সাথে সাথে শারীরিক পুষ্টির মাঝে ভারসম্যহীনতা দেখা দেবার সুযোগ বেড়ে যাবে। যা থেকে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেবার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে, যা চূড়ান্তভাবে শরীরে নানা প্রকার রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে এবং অন্যান্য রোগে শরীরকে আক্রান্ত করে তুলতে পারে।

শৈশবে সুষম খাদ্যের ঘাটতি শিশুদের দৈহিক এবং মানসিক বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবার ফলে অপুষ্টিজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যা কিনা একটি মেধাবী জাতি গঠনে অন্ত্রায় হিসেবে কাজ করবে।

এছাড়াও অসাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহনে অভ্যস্ততা শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, যা ওবেসিটি, হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার, ডাইবেটিস, হৃদ্রোগের সম্ভাবনাকে আরো ত্বরান্বিত করে। 

সুষম খাদ্যের উপাদান

বিজ্ঞানসম্মত ভাবে, শর্করা, আমিষ, স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ লবণ, পানি; এই ছয়টি উপাদান সঠিক এবং পরিমিত অনুপাতে প্রতিদিন খাওয়া হলে মানবদেহ সঠিক পুষ্টি উপাদান পেতে পারে। যা  মানুষের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

1. শর্করা:

মানবদেহে শক্তি সরবরাহের প্রধান উৎস, শর্করা। সাধারণত ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই, ওটস, নুডলস,  আলু, পাস্তা জাতীয় খাবার শর্করার প্রধান উৎস। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরির প্রায় ৬০-৭০% ক্যালরি এজাতীয় খাবার থেকেই আমাদের দেহ পেয়ে থাকে। শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে বিশেষত জটিল শর্করা, যেমন গমের আটার রুটি, লাল চাল, ওটস—ইত্যাদি খাবারকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ।

2. আমিষ:

মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম, কলিজা ও বীজজাতীয় খাবার আমিষের প্রধান উৎস। দৈহিক বিকাশে আমিষের কোন বিকল্প নেই। প্রাণিজ আমিষের উৎস মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি। এদেরকে প্রথম শ্রেনীর আমিষ বলা হয়। অন্যদিকে ডাল, বীজ জাতীয় আমিষকে উদ্ভিজ্জ আমিষ বলা হয়, যাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেনীর আমিষ বলা হয়। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ক্যালরির প্রায় ১০-১২% ক্যালরি আমিষ থেকে পেয়ে থাকি।

3. স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার:

তেল, ঘি, মাখন এই শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরির প্রায় ২০-২৫% ক্যালরি এজাতীয় খাবার থেকেই পাই। দৈনিক পরিমিত পরিমাণে স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। বিশেষত হেলদি ফ্যাট, যেমন: অলিভ, সরিষা, সানফ্লাওয়ার বা বাদামের তেলকে প্রতিদিনের খাবারের মাঝে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন।

4. ভিটামিন ও খনিজ লবণ:

শাক-সবজি ও ফলমূল ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রধান উৎস। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে এই দুটি খাদ্য উপাদানই আমাদের জন্য খুব জরুরি। দেহের মেটাবলিজমের পাশাপাশি, স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুকোষের সঠিক কার্য সম্পাদনের এদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, দেশীয় ফলকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি।

5. পানি: 

শারীরিক ও মানসিক কার্যক্রমকে নির্বিঘ্ন রাখতে দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিৎ।

6. দুধ ও দুধজাতীয় খাবার:

এ ছাড়াও দুধ, দই, ছানা, পনির দেহের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদানের পাশাপাশি ও আমিষের চাহিদাকেও পূরণ করে থাকে। যা আমাদের দৈহিক বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির  পাশাপাশি হাড়কে শক্ত করতে এবং মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

সুষম খাদ্য পিরামিড

মানুষের দৈনিক খাদ্য চাহিদাকে পুষ্টির প্রয়োজনভেদে আমেরিকার কৃষি বিভাগ ( United States Department of Agriculture) সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করে এবং একটি খাদ্য পিরামিড অনুসরণের সুপারিশ করে।

পরবর্তীতে পুষ্টিবিজ্ঞান (Nutrition science) সকল খাদ্যকে মোট ৫টি ভাগে ভাগ করে এবং তা দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পছন্দ মতো সুষম খাদ্য অনুসরণ করার জন্য পরামর্শ দেয়।

একজন মানুষের দেহের সার্বিক পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী খাবারের প্লেটে কোন ধরনের খাবার কতটুকু থাকা প্রয়োজন তা নির্দেশ করতে Healthy Eating Plate ধরণার উল্লেখ করেন। নিচে সেটি বোঝানোর জন্য একটি ছবি সংযুক্ত করে দেয়া হল। এই পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে প্রতিবেলার খাবারের ক্ষেত্রে সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব।