ডায়েটারি ফাইবার (Dietary Fiber) কি? ফাইবারের প্রকারভেদ, উপকারিতা ও উৎস

ডায়েটারি ফাইবার (Dietary Fiber) কি?          

অল্প কথায় ডায়েটারি ফাইবার হলো আমাদের খাবারে উপস্থিত সেই সকল শর্করা যা আমাদের পরিপাক তন্ত্র হজম করতে পারে না । এটির উপস্থিতি উদ্ভিজ্জ খাবার ভালো হওয়ার পেছনে অন্যতম বড় কারণ। সব Fiber যে একই রকম কাজ করে তেমনটাও না। একেক রকমের Fiber একেকভাবে কাজ করে থাকে তাই এদের স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও আলাদা আলাদা রকমের। 

ফাইবারের প্রকারভেদ (Types of Dietary Fiber)

পানিতে দ্রবীভূত হয় কিনা এর উপরে ভিত্তি করে Fiber দুই রকমের: 

1. পানিতে দ্রবণীয় (Water Soluble)

Water Soluble ফাইবার পানিতে মিশে যায় এবং গাট ফ্লোরা এই ধরণের Fiber কে ভাঙ্গতে পারে। এজন্য এই ধরণের ফাইবারকে ফার্মান্টেবল Fiber বলা হয়। 

3. পানিতে অদ্রবণীয় (Water Insoluble)

Water Insoluble ফাইবার পানিতে মিশে না এবং যেহেতু Gut flora একে ফার্মান্টেশন করতে পারে না সেহেতু একে নন ফার্মান্টেবল Fiberও বলে।

ডায়েটারি ফাইবারের উপকারিতা

আমাদের প্রতিদিনের খাবারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকা আবশ্যক। তাহলে আমরা বেশ কিছু উপকার পাবো। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো:

হৃদস্বাস্থ্যের উন্নতিঃ

Fiber আমাদের কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেমের উন্নতি করে। ক্লোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং হার্ট ব্লক এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

GUT এর সুস্থ্যতায়ঃ

ডায়েটারি ফাইবার আমাদের gut কে সুস্থ রাখে। কোলো-রেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। Gut flora রক্ষণাবেক্ষণে এর বড় ভূমিকা রয়েছে।

ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমাতেঃ

গবেষণায় এই ব্যাপারটি সাব্যস্থ্য যে আমাদের খাদ্যে উপস্থিত ফাইবার ডায়াবেটিস কমাতে অবদান রাখে। এরা আমাদের শরীরের ভিতরে শর্করা জাতীয় খাবারের গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে রক্তে স্যুগার লেভেল কম রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতেঃ

যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য বেশি বেশি Fiber সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া একটি ভালো দিক হতে পারে। এটি পেট ভরা অনুভূতিকে অনেকটা সময়ে স্থায়ী করতে পারে, যার ফলে খাবার গ্রহণের হার কমে যায়। 

কৌষ্ঠকাঠিন্য দূরিকরণে:

কৌষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা কমাতে ফাইবারের ভূমিকা রয়েছে। 

ডায়েটারি ফাইবারের উৎস

নানা রকমের খাবার থেকে আমরা ফাইবার পেতে পারি। কিন্তু প্রকারের ভিন্নতার কারণে ফাইবারের উৎসও আলাদা। নিচে কিছু উৎস উল্লেখ করা হলো:

সলিউবল ফাইবারের উৎস

১. শিম ও ডাল জাতীয় শস্য - শিমের বিচি, মটরশুটি, মসুর ডাল, ছোলা, মটরশুটি ইত্যাদি
২. নানা রকমের ফল - কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
৩. ওটস, বার্লি ও ওটস দিয়ে তৈরিকৃত খাবার
৪. বাদাম - চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম।
৫. নানা রকমের সবজি- ব্রকলি, বাধাকপি, পুই শাক, বেগুন ইত্যাদি

ইনসলিউবল ফাইবারের উৎস

১. হোল গ্রেইন ফুড - গম, বাদামি চাল
২. নানা রকমের ফল - আঙ্গুর, কিউই, আনারস ইত্যাদি।
৩. নানা রকমের শাক সবজি - ফুল কপি, আলু, পালং শাক, এসপারাগাস।
৪. বাদাম জাতীয় খাবার- কাঠবাদাম, আখরোট।
৫. বীজ জাতীয় খাবার- কুমড়ো বিচি, তিল, চিয়া সিড।

তবে এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো একই সাথে দুই রকমের ফাইবারই রয়েছে। যেমনঃ আপেল, চিনা বাদাম ইত্যাদি।

ফাইবারের ভারসাম্যহীনতাজনিত সমস্যাসমূহঃ 

ফাইবার আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর গুরুত্ব বিবেচনা করে একে ৭ম খাদ্যাপাদান হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। শরীরে পর্যাপ্ত ফাইবারের অভাবে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো:

  1. দূর্বলতা
  2. বার বার মুড সুইং হওয়া
  3. কন্সটিপেশন এবং ডায়রিয়া
  4. অবডোমিনাল ক্রাম্প
  5. হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন কমে যাওয়া
  6. চুল পড়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
  7. Gut Flora এর অবস্থার অবনতি
  8. নিদ্রাহীনতা
  9. হাড়ের জোড়াতে ব্যাথা এবং সম্ভাব্য আর্থাইটিস
  10. হৃদরোগ
  11. কোলো-রেক্টাল ক্যান্সার
  12. যৌনইচ্ছা কমে যাওয়া
  13. IBS (Involuntary Bowel Syndrome)
  14. ডায়াবেটিস
  15. দুধ ও দুধ জাতীয় (ল্যাকটোজ) খাবার পরিপাকে সমস্যা
  16. কোনো কিছু গিলতে সমস্যা হওয়া 

Dietary Fiber গ্রহণের মাত্রাঃ

ইন্সটিউট অব মেডিসিনের ভাষ্য মোতাবেক প্রত্যেকের খাবারে নিন্মরুপ পরিমান Fiber থাকা উচিৎঃ 

দৈনিক ডায়েটারি ফাইবার গ্রহণের মাত্রা
  পুরুষ মহিলা
বয়স ৫০ এর কম ৩৮ গ্রাম ২৫ গ্রাম
বয়স ৫০ এর বেশি ৩০ গ্রাম ২১ গ্রাম  

পরিশেষে, আমাদের প্রতিদিনের খাবারে Fiber থাকাটা দরকারি। আর এই উপাদান না থাকলে আমাদের শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয় আর এর সংখ্যাও কোনো অংশে কম নয়। এই অপরিসীম গুরুত্বের কারনে ডায়েটারি Fiber কে সপ্তম খাদ্যাপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।