Immune System বা ইমিউন সিস্টেম কি? এটির প্রকারভেদ

ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা  কি?

Immune System অথবা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের শরীরের সেই জৈবিক কাঠামো যা আমাদেরকে বিভিন্ন রকমের রোগ-জীবানু থেকে রক্ষা করে। শুধু রোগ জীবানু নয়, আমাদের শরীরের অংশ নয় এমন যে কোনো "ফরেন পার্টিকেল" কে অপসারণ এবং তা থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করাই ইমিউন সিস্টেমের কাজ।

কি কি উপাদান নিয়ে ইমিউন সিস্টেম গঠিত?

ইমিউন সিস্টেম আমাদের শরীরের বাইরের নানা রকমের কাঠামো এবং অভ্যন্তরীণ নানা উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি। আমাদের ত্বক,মিউকাস মেমব্রেন, চুল, লোম থেকে শুরু করে আমাদের শরীরের ভিতরের শ্বেত রক্ত কণিকা, এন্টিবডি অথবা বাহ্যিকভাবে গ্রহণ করা ভ্যাক্সিন, এন্টিবায়োটিক সবই আমাদের ইমিউন সিস্টেমের উপাদান কিংবা সাহায্যকারী উপাদান।

এই সিস্টেমের এর অংশ/স্তরঃ

Immune System এর অংশ হিসেবে প্রথম শ্রেনীর প্রতিরক্ষা বলতে রয়েছে আমাদের ত্বক, মিউকাস মেমব্রেন। আমাদের ত্বক আমাদের শরীরকে নানারকমের জীবানুর প্রবেশ করা থেকে রক্ষা করে, কিংবা ত্বকের নিচের মিউকাস মেমব্রেন নিশ্চিত করে রোগ-জীবানু যেন ত্বক ভেদ করার পরেও আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে না পারে। 

Immune System এর দ্বিতীয় শ্রেনীর প্রতিরক্ষা আছে বেশ কিছু পদের শ্বেতরক্ত কণিকা। নিউট্রোফিল, মোনোসাইট সহ নানা রকমের শ্বেতকণিকা আমাদের শরীরে জীবানু প্রবেশ করলে তাদের মেরে ফেলে। মুলতঃ প্রথম শ্রেণীর প্রতিরক্ষা ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় শ্রেণীর উপরে দ্বায়িত্ব বর্তায়। এছাড়া কিছু কণিকা আছে যারা এইসব জীবানুকে ফেগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় খেয়ে ফেলে। 

দ্বিতীয় শ্রেণিরর পর রয়েছে সর্বচ্চ শ্রেণির প্রতিরক্ষা। যেখানে বি-লিম্ফোসাইট নামক কণিকা নির্দিষ্ট জীবানুর জন্য নির্দিষ্ট এন্টিবডি প্রস্তুত করে। এবং সাধারণত একরকমের জীবানুর জন্য তৈরি এন্টিবডি অন্য জীবানুর উপরে কাজ করে না। এছাড়া তৈরি হয় মেমোরি সেল। যা পরবর্তীতে একই জীবানুর আক্রমণ হলে তাড়াতাড়ি সনাক্ত করে দ্রুত এন্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে। 

Types of Immune System (প্রকারভেদ):

  1. ইনেট বা প্রাকৃতিক ইমিউনিটি
  2. একুয়ার্ড বা অর্জিত ইমিউনিটি

ইনেট ইমিউনিটি (Innate) নিয়ে আমরা জন্মগ্রহণ করি অর্থাৎ জন্মের সময় থেকেই এটি আমাদের শরীরের একটি অংশ। যেমনঃ ত্বক, মায়ের থেকে পাওয়া এন্টিবডি।

এক্যুয়ার্ড (acquired) বা অর্জিত ইমিউনিটি  আমরা জন্মের পর থেকে অল্প অল্প করে অর্জন করি৷ যখন নতুন কোনো জীবানু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখন আমাদের শরীর এদের বিপক্ষে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠন করে। এতে করে ভবিষ্যতে কোনো সময়ে এই জীবানুগুলো আক্রমন করলেও আমাদের অসুখ হয় না কিংবা হলেও তা যেন খুব বেশি মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায় না। 

মায়ের কাছ থেকেও জন্মের সময় বাচ্চারা একধরণের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে নানা রকমের রোগ-জীবানুকে এরা সনাক্ত করতে সাহায্য করে আর প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত কোষগুলো তখন ব্যবস্থা নেয় এদের বিপক্ষে৷ মাতৃগর্ভে থাকার সময় অমরার মাধ্যমে শিশু শুধু পুষ্টিই লাভ করে না, মায়ের কাছ থেকে রোগ প্রতিরোধ এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এন্টিবডিও পেয়ে যায়। একইভাবে অনেককিছু পেয়ে যায় জন্মের পরে মায়ের দুধ থেকেও।

আমরা ছোটবেলায় Vaccine নিয়ে থাকি। এটিও একধরণের অর্জিত ইমিউনিটি। ভ্যাক্সিন মুলতঃ জেনেটিক্যালি মোডিফাইড ব্যাকটেরিয়া। এমন হতে পারে এটি জীবিত, মৃত কিংবা অংশবিশেষ। তবে পরিবর্তনের ফলে এটির রোগ তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু শরীর তা বুঝতে পারে না এবং সাধারণভাবেই এর বিপক্ষে প্রতিরোধক হিসেবে এন্টিবডি তৈরি করে থাকে যা ভবিষ্যতে কাজ দেয়।

এন্টিবডি মুলতঃ কাজ করে ব্যকটেরিয়ার বিপক্ষে, ভাইরাসের উপরে নয়। আবার একটি নির্দিষ্ট এন্টিবডি একটি নির্দিষ্ট ব্যাক্টেরিয়া বা নির্দিষ্ট গোত্রের ব্যাক্টেরিয়ার বিপক্ষেই কাজ করে৷ অর্থাৎ ডাইরিয়া তৈরি করা জীবানুর বিপক্ষে যা কাজ করবে তা হয়ত চর্মরোগ তৈরি করা জীবানুর বিপক্ষে সাধারণত কাজ করবে না।

Immune System এর অসুখ

 ইমিউন সিস্টেমের নানা অসুখ হতে পারে, যেমনঃ- AIDS. এই ক্ষেত্রে শরীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে থাকে। এই জন্য এর পুর্ণরুপ এক্যুয়ার্ড ইমিউন ডিফেসিয়েন্সি সিন্ড্রোম। এমন অসুখও আছে যাতে করে আমাদের শরীরের কোষগুলোকেই আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা Foreign বলে সনাক্ত করা শুরু করে। এই বিপদজনক রোগকে বলে অটোইমিউন ডিসিস।

কীভাবে Immune system শক্তিশালী হবে?

পুষ্টিকর খাবার যেগুলোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং মিনারেলস আছে সেসব খাবার খেতে হবে। এইসব ভিটামিন আর মিনারেলস আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং এন্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে।

উপরে আলোচনা থেকে আমরা অনুধাবন করি, যেন সুস্থ থাকে আমাদের ইমিউন সিস্টেম; যেন সুস্থ থাকি আমরা। সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার খাবো, সতর্কতা স্বরুপ ভ্যাক্সিন নিবো।