ডায়েট প্ল্যান (Diet Plan) কি? Diet Plan এর প্রকারভেদ ও গুরুত্ব

ডায়েট প্ল্যান (Diet Plan) কি?

Diet Plan শব্দটা শোনার পর পরই আমাদের মাথায় যে কথাটা ঘুরপাক খায় তা হলো স্বল্প মেয়াদে কঠোর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কিংবা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এর ব্যাপকতা এর থেকেও বেশি। সুস্থ্য জীবন যাপনের লক্ষ্যে আমাদের খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস পরিবর্তন এবং ব্যায়াম ও অন্যান্য শারীরিক শ্রমের সাথে এর সমন্বয় সাধনই হলো ডায়েট প্ল্যান।

এই অভ্যাস পরিবর্তন ওজন কমানো, শারীরিক অসুস্থতা কমানো, শারীরিক শ্রমের সাথে সমন্বয় সহ নানা কারনে হতে পারে। তবে স্বল্পমেয়াদের তুলনায় দীর্ঘ মেয়াদে ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় সুস্থতা দিতে পারে। 

ডায়েট প্ল্যানের প্রকারভেদ (Types of Diet Plan)

নানা প্রয়োজনীয়তার উপরে ভিত্তি করে আলাদা আলাদা রকমের Diet plan প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আমাদের প্রয়োজন মোতাবেক এই খাদ্যাভ্যাসগুলো অনুসরণ করতে পারি। 

1. মেডিটেরিয়ান ডায়েট

সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং লম্বা সময় চালিয়ে যাওয়ার উপযোগী  Diet plan গুলোর একটি। এটি নানা রকমের শাক-সবজি, শীম জাতীয় খাবার, মাছ এর উপরে বেশি জোড় দিয়ে থাকে। একটিতে নির্দিষ্ট পরিমানে ডিম, মুরগী খাওয়ার কথা বলা হয় এবং এই ডায়েটে রেড মিট খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। 

2. DASH ডায়েট

DASH - Dietary Approaches to Stop Hypertension. নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই ডায়েটের মুল লক্ষ্য হলো উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে নিয়ে আসা। 

3. MIND ডায়েট

মেডিটেরিয়ান ও DASH ডায়েটের সংমিশ্রণে তৈরি একটি Diet plan যার মুল লক্ষ্য হলো আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ও সমন্বয়।

4. কিটো ডায়েটে

কিটো ডায়েট মুল লক্ষ্য কিটোসিস। আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেট এর পরিবর্তে ফ্যাটকে শক্তির উৎস হিসেবে গ্রহণ করলে কিটোসিস শুরু হয়। অধিক চর্বি জাতীয় খাদ্যগ্রহণ এবং স্বল্প কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ, দ্রুত ওজন কমানো এই ডায়েটের মুললক্ষ্য। 

5. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ডায়েট প্ল্যানের মুল লক্ষ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস করা এবং সম্ভব হলে দিনের একটা বড় সময় কোনো খাবার না খেয়ে থাকা। এটি ওজন কমানো এবং শরীরের মেটাবলিজম ঠিক করতে অনুসরণ করা হয় । 

6. ভেজিটেরিয়ান/ ভিগান (Vegan) ডায়েট

যদিও দুইটি Diet এর মাঝে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে এদের ভিতরে মিলও আছে অনেক। দুইটি প্ল্যানই উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণের উপরে জোড় দেয় এবং প্রাণীজ আমিষের উপরে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। ধর্মীয় অনুশাসন, প্রাণী অধিকার, স্বাস্থ্য নানা কারনে এই ডায়েট অনুসরণ করা হয়। 

7. Low Carb ডায়েট

এটি মুল লক্ষ্য কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমান একদম কমিয়ে দেওয়া এবং তা অমিষ ও চর্বি দিয়ে পুর্ণ করা। 

8. কার্নিভর (Carnivore) ডায়েট

এই ডায়েটের মুল ভিত্তিই হলো প্রাণীজ আমীষ। শর্করা, উদ্ভিজ্জ যে কোনো খাবার এই ডায়েটে নিষিদ্ধ। 

এছাড়াও ভ্লিউমেট্রিক ডায়েট, লায়ন ডায়েট, ইওগার্ট ডায়েট, ফ্লেক্সিটেরিয়ান ডায়েট, মায়ো ক্লিনিক ডায়েট, এটকিনস ডায়েট, ডব্লিউ-ডব্লিউ, পালেও ডায়েট সহ শতাধিক নানা রকমে ডায়েট প্ল্যান রয়েছে।

ডায়েট প্ল্যানের গুরুত্বঃ

সুস্থ্য জীবন-যাপনের মূল ভিত্তি হলো ভারসাম্য। এজন্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন আর আমাদের পুষ্টি গ্রহণে ভারসাম্য ঠিক রাখা উচিত। 

আমাদের শরীরের প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক পুষ্টি।  তাই আমাদের অবশ্যই নানা রকমের খাবার গ্রহণ করতে হবে যা পুষ্টিতে সমৃদ্ধ যেমনঃ তাজা ফল, শাক-সবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। নানা রকম খাবার গ্রহণের কারণ সব খাবারে সব রকমের পুষ্টি উপাদান থাকে না। আলাদা আলাদা খাবার আমাদের বিভিন্ন রকমের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করতে পারে। 

আমাদের খাদ্যাভ্যাস আমাদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা, শারীরিক সুস্থতা, ঘুম, মেজাজ-মর্জি ইত্যাদির উপরে প্রভাব ফেলে। খাবার গ্রহণে অনিয়ম হলে আমাদের প্রতিদিনের জীবনেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে।

প্রচলিত Diet প্ল্যানের সীমাবদ্ধতাঃ 

  • ডায়েট প্ল্যানগুলো একটা প্রয়োজন থেকে তৈরি। একটি হয়ত কারো উপরে খুব ভালো কাজ করছে অন্যটি হয়ত অণ্য আরেক জনের উপরে। 
  • বেশ কিছু ডায়েট প্ল্যান আছে যা কিছু রোগে আক্রান্তদের করা উচিত না। যেমনঃ কার্নিভর ডায়েট কিডনি রোগীদের অনুপযোগী। 
  • বেশ কিছু Diet plan খুবই ব্যয়বহুল 
  • লম্বা সময় চালিয়ে যাওয়া যাবে এমন ডায়েট প্ল্যানের কিছুট অভাব রয়েছে
  • অনেক ক্ষেত্রেই এই খাদ্যাভাসগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু অনেক সময় অভ্যাসে  কিছুটা ব্যতীক্রম ও পরিবর্তন করা প্রয়োজন পড়তেই পারে। 

যাদের ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা উচিতঃ 

এর উত্তর হলো সবারই। কিন্তু সব Diet সবার জন্য না, আবার প্রচলিত প্ল্যানগুলো মানতে হবে এমনও না। চাইলে নিজের মতো করে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়।

ভুল খাবার নির্বাচন অনেক সময় যে কোনো ডায়েট প্ল্যানকেই অকার্যকর করে দিতে পারে, তাই খাবার নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। ওজন কমানো, সুসস্থ্য থাকা, শরীরকে পেশীবহুল করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে। আমাদের পন্থা আলাদা হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য হবে এক ও অভিন্ন আর তা হলো শরীরকে সুস্থ্য রাখা।