মেটাবলিজম (metabolism) বা বিপাকীয় ক্রিয়া কি? মেটাবলিজম রেটকে ঠিক রাখার উপায়

মেটাবলিজম (metabolism) বা বিপাকীয় ক্রিয়া কি?

মেটাবলিজম শব্দটির সাথে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত। এটি আমাদের শরীরের ভিতরের এক ধরণের রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন রকমের খাদ্য উপাদান ভেঙ্গে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। এই প্রক্রিয়ায় ক্যালোরি এবং অক্সিজেনের সমন্বয়ে শক্তি উৎপন্ন এবং সরবরাহ হয় যা আমাদের শরীরের চালিকাশক্তি। 

মেটাবলিজম আসলে যা করে: 

মেটাবলিজম একটি চলমান প্রক্রিয়া যা কখনই বন্ধ হয় না। এমনকি আমরা যখন বিশ্রাম নেই কিংবা ঘুমাই তখনো এটি চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত আমাদেরকে বিভিন্ন কাজে শক্তি সরবরাহ করে চলেছে। যেমন:

  1. শ্বসনকার্য 
  2. রক্ত সংবহন 
  3. খাদ্য পরিপাক
  4. কোষের বৃদ্ধি এবং ক্ষয়পুরণ
  5. হরমোনের নিয়ন্ত্রণ
  6. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ইত্যাদি

মেটাবলিজমকে যেই ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে:

  • শরীরের পেশীর পরিমাণ: চর্বির তুলনায় পেশীকে সুন্দর রাখতে বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়।
  • বয়স:  বয়সের সাথে সাথে মেটাবোলিক রেট কমে যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে ২০ বছর বয়সের কাছাকাছি সময়ে মেটাবোলিক রেটের একটা বড় পরিবর্তন আসে কিন্তু ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যকার মেটাবোলিক রেটের পরিবর্তন বয়স বৃদ্ধির তুলনায় জীবন যাপনের মানের উপরেই বেশি নির্ভরশীল। 
  • লিঙ্গ: পুরুষদের শরীরে তুলনামূলক বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন, কারণ তাদের পেশীর পরিমাণ বেশি, অস্থি আকারে বড় এবং জমে থাকা চর্বির পরিমাণ কম। 
  • জিনগত নিয়ন্ত্রক:  বংশগত কারণে মানুষের শারীরিক আকৃতিতে পার্থক্য আসে, যে কারণে মেটাবোলিক রেটেও পার্থক্য তৈরি হয়।
  • শারীরিক পরিশ্রম: যে কোন রকমের শারীরিক পরিশ্রমে ক্যালোরি খরচ হয় ফলশ্রুতিতে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়।
  • খাদ্য: খাবারের উপরে বিপাকীয় ক্রিয়া নির্ভর করে। খাবারের ধরণ এবং সময় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্দিষ্ট কিছু খাবার এই ক্রিয়ার হার বাড়িয়ে তোলে এটি সম্পূর্ণ রূপে ঠিক না। কারণ, চা, কফি, কিছু মসলার বিপাকীয় ক্রিয়া সাময়িকভাবে বাড়ানোর ক্ষমতা থাকলেও এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। 

মেটাবলিজম রেটকে ঠিক রাখার উপায়: 

  1. খাবার খেতে হবে সময় মতো। আমাদের শরীর আমাদের অভ্যাসের সাথে মিল রেখে পরিচালিত হয়। তাই এর শরীরবৃত্তীয় সব কাজ আমাদের অভ্যাসের উপর৷ নিয়মিত সময় করে খাবার খাওয়া, কোনও বেলার খাবার বাদ না দেওয়া একটি স্বাস্থ্যকর মেটাবোলিক রেট ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  2. খাবার হতে হবে সুষম।  সুষম খাবারে প্রয়োজন মতো শর্করা, প্রোটিন, স্নেহ জাতীয় খাদ্যের পাশাপাশি ভিটামিন-মিনারেলস এবং ফাইবার থাকে। যা বিপাকীয় ক্রিয়াকে ঠিক রাখে
  3. শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এতে আমাদের শরীর ক্যালোরি খরচ করবে। চর্বি ভেঙ্গে শক্তিতে পরিণত হবে।
  4. অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। 
  5. কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলে গেস্ট্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া। 

ফাস্ট-মেটাবলিজম ও স্লো-মেটাবলিজম নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা: 

আমরা অনেক সময়ই ধরে নেই ফাস্ট মেটাবলিজম ভালো, আর স্লো মেটাবলিজম মানেই খারাপ। কিন্তু এর পুরোটাই নির্ভর করে একজনের শারীরিক অবস্থার উপরে। এমনও হতে পারে একজন উচ্চ-বিপাকীয় ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ বিশ্রামের সময় বেশি ক্যালোরি খরচ করছে। আবার কম ক্ষমতাসম্পন্ন একজনের হয়ত দেখা যাচ্ছে সাধারণ অবস্থাতেই তার কম ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। তাই অনেক সময়ই দেখা যায় স্থুলদেহে ফাস্ট মেটাবলিজম প্রয়োজন পড়ে কারণ তাদের খাদ্যগ্রহণের প্রবণতা বেশি এবং তাদের শরীরেও বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন রয়েছে।

তাই এটা মনে করার কোনও কারণ নেই বেশি মেটাবলিজম সহ মানুষটা চিকন হবে। তবে এমন মানুষ অবশ্যই দেখা যায়, যারা তাদের অধিক মেটাবলিজম ের জন্য নিয়মিত ভারি খাবার গ্রহণের পরেও মোটা হয়ে যায় নি।  আবার অনেক সময় আরও একটি ব্যাপার দেখা যায়, ডায়েটিং অনেক সময়ই মেটাবোলিক রেটকে কমিয়ে দেয়। কারণ, দেখা যায় ডায়েটিং এর সময় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কম থাকে। সে সময় অনেক ক্ষেত্রেই মেটাবোলিক একটিভিটি কমে আসে।  

পরিশেষে এটি বলা যায়, মেটাবলিজম না থাকলে আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি থেকে বঞ্চিত হতো। কিন্তু একটি নিয়ন্ত্রিত মেটাবলিজম ের জন্য প্রয়োজন নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করা, ব্যায়াম করা এবং পরিমিত বিশ্রাম নেওয়া। এই বিষয়গুলো ঠিক থাকলেই আমাদের শরীরের বিপাক ঠিক থাকবে আর আমরা সুস্থ থাকতে পারবো।