এন্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant)  কি?  এর উপকারিতা, কাজ এবং উৎস

এন্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant)  কি? 

এন্টিঅক্সিডেন্ট হলো আমাদের শরীরের সেই উপাদান যা ফ্রি রেডিক্যাল থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। ফ্রি রেডিক্যালের পরিমাণ বেড়ে গেলে আমাদের শরীরে নানা রকমের সমস্যা হতে পারে। Antioxidant এই সকল ফ্রি রেডিক্যালের পরিমাণ যেন বেড়ে না যায় সেদিকে নজর রাখে।

নানা রকম খাবারে এই উপাদান পাওয়া যায়। যেমন উদ্ভিজ্জ নানা রকমের খাবার, ভিটামিন-ই এবং সি ইত্যাদি এন্টিঅক্সিডেন্ট এর বড় উৎস। আমাদের শরীরের সাথে সাথে নানা শরীরবৃত্তীয় কাজের পাশাপাশি এই উপাদান খাবারের স্থায়িত্বও বাড়ায়।

এন্টিঅক্সিডেন্ট এর উপকারিতা ও কাজ

এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের কত উপকার করে তা গুনে শেষ করা যাবে না। ফ্রি রেডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করেই এটি আমাদের অনেক অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে দূরে রাখছে। এছাড়াও এর আরো অনেক গুণাবলি রয়েছে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:

১. ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণে:

Antioxidant আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে দূরে রাখে। ফ্রি রেডিক্যালের প্রভাবে আমাদের শরীরে যে সমস্যা দেখা দেয় তাকে বলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। অক্সিডেটিক স্ট্রেস নানাভাবে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। এই সকল সমস্যার মাঝে রয়েছে:

  1. ডায়াবেটিস।
  2. রক্তের শিরা উপশিরা শক্ত হয়ে যাওয়া।
  3. ইনফ্লামেশন সৃষ্টি।
  4. হাইপারটেনশন।
  5. হৃদরোগ।
  6. পারকিনসন’স ডিজিস।
  7. এলজাইমার’স ডিজিস।
  8. ক্যান্সার।
  9. চেহারায় বয়সের ছাপ সংক্রান্ত নানা সমস্যা।
  10. চুল পেকে যাওয়া ইত্যাদি।

২. খাবারের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে:

এন্টিঅক্সিডেন্ট জারন বিক্রিয়াতে বাধা দেয়। এর ফলে খাবারের অর্ধায়ু বৃদ্ধি পায়। খাবারের স্থায়িত্ব বাড়ে। 

৩. শরীরের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গের সুরক্ষায়:

Antioxidant আমাদের শরীরের নানা রকমের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে সুস্থ রাখে। যেমনঃ কিডনি, লিভার, চোখ, দাঁত। 

৪. ঘুম আনতে:

এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের মস্তিস্ককে শীতল করে। অবসাদ দূর করে। ঘুমকে গভীর করে।

প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট

এমন হাজারো উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে কাজ করে থাকে কিন্তু আমরা জানিও না এরা আসলে antioxidant. আমাদের কিছু খুবই পরিচিত এন্টিঅক্সিডেন্ট হলো: 

  1. ভিটামিন-এ
  2. ভিটামিন-ই
  3. ভিটামিন-সি 
  4. বিটা- ক্যারোটিন
  5. ম্যাঙ্গানিজ
  6. সেলেনিয়াম 
  7. এন্থোসোয়াসিন
  8. আইসফ্লাভনস
  9. লিউটেন
  10. রেসভেরাট্রল ইত্যাদি

এন্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎস

Antioxidant পাওয়া যায় এমন খাবারের সংখ্যা নেহাত কম না। যে সকল খাবারে এই উপাদান অনেক পরিমাণে রয়েছে তাদের আলাদা করে সুপার ফুড বলে। কিছু খাবারের নাম নিচে দেওয়া হলো: 

  • মসলা (লাল পেঁয়াজ ও কালো কাঁচা মরিচ)
  • বেদানা
  • সজনে ডাটা
  • ডিম
  • দুধ
  • কলিজা
  • বাদাম
  • সবুজ শাক-সবজি
  • নানা রকমের ফল ইত্যাদি 
  • সিম ও সিমের বীজ
  • বরবটি,
  • মিষ্টি আলু
  • দেশি ফল (কালোজাম, করমচা, জামরুল, কলা, কুল বরই, লটকন ও ডালিম)
  • বিদেশি ফল (ব্লাকবেরি, স্ট্রবেরি, কালো আঙুর, চেরি, পিচ)

Antioxidant এর উপরে রান্নার প্রভাব 

প্রকারভেদ অনুসারে রান্না Antioxidant এর উপরে ভালো কিংবা মন্দ প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: লাইকোপেন নামের উপাদান টমেটোর গাঢ় লাল বর্ণ দিয়ে থাকে রান্নার পরে এই উপাদান আরো ভালো করে শরীরে শোষিত হয়। 

অন্যদিকে ঝিঙ্গা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজিতে যে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তা অনেকাংশেই কমে যায় রান্নার পর। 

Antioxidant বিষয়ক কিছু পরামর্শ

  1. প্রতিবার আহারের সময় কিছু না কিছু ফল কিংবা সবজি খাওয়া। 
  2. সম্ভব হলে গ্রিন টি পান করা। গ্রিন টি প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট এর বিশাল উৎস। 
  3. বর্ণিল খাবারের দিকে ঝুঁকতে হবে। যে খাবারের প্লেট যতটা রঙ্গিন সে খাবারের প্লেট তত বেশি এন্টি-অক্সিডেন্টপুর্ণ। 
  4. নানা রকম মশলা যেমন- আদা, হলুদ, জিরা, ধনিয়া, দারুচিনি ইত্যাদি আমাদের খাবারকে স্বাদে এবং antioxidant দুই ক্ষেত্রেই প্রাচুর্যতা দিবে। 
  5. কোনও প্রকারের অতিরিক্ত চিনি বা লবণ ছাড়া হালকা নাস্তা হিসেবে নানা রকমের বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া।  

পরিশেষে, ফ্রি রেডিক্যাল নানা রকমের শারীরিক সমস্যা যেমন: হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্বল্পদৃষ্টির সাথে সম্পর্কযুক্ত। প্রাত্যহিক খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি খুবই দরকার। তবে অকারণে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে এর অভাব দূর করার চেষ্টা হিতে বিপরীত হতে পারে। একারণে সবার আগে প্রয়োজন নিউট্রিশন এক্সপার্ট অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।