নাইট্রিক অক্সাইড কি? মানবদেহের জন্য এর কাজ এবং উৎস

নাইট্রিক অক্সাইড বা Nitric Oxide (NO)

শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদানের মাঝে অন্যতম একটি উপাদান হলো নাইট্রিক অক্সাইড। আমাদের শরীর স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই এটি তৈরি করে থাকে আর আমাদের শরীরের নানা রকম কাজের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

মানবদেহে নাইট্রিক অক্সাইড এর কাজ

মানবদেহে নাইট্রিক এসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা রকমের শরীরবৃত্তীয় কাজে এর অবদান রয়েছে। নিচে এই নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. রক্ত সংবহনে সাহায্য করে:

আমাদের শরীরের পরিবহন তন্ত্র নানা রকমের শিরা, উপশিরা এবং ধমনী দিয়ে গঠিত। এই সরু নালিকাসমুহের মাঝ দিয়ে রক্ত সংবহন হয়ে থাকে আর এর মাধ্যমেই পুষ্টিপাদান ছড়িয়ে পড়ে সারাদেহে। নাইট্রিক অক্সাইড ভেসোডাইলেশনে সাহায্য করে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে এই রক্ত বাহিকাগুলোর ব্যাসার্ধ বেড়ে যায় এবং রক্ত-সংবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। 

২. রোগ- প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি:

ভেসোডাইলেশন রোগ- প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি করে। শ্বেত রক্তকণিকা স্বল্প সময়ের মাঝে গন্তব্যে পৌছাতে পারে। 

৩. সক্ষমতা বৃদ্ধি: 

এটি শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করে থাকে। শরীরে ক্লান্তি আসতে বাধা দেয়। 

৪. রক্তপড়া বন্ধ করে:

নাইট্রিক এসিড হোমিওস্টেসিস বা রক্ত পড়া বন্ধে সাহায্য করে। 

এছাড়াও, এর আরো কিছু অবদান রয়েছে। যেমনঃ 

  • ওজন কমাতে
  • যাদের সিস্টিক ফাইব্রোসিস আছে তাদের ফুসফুসের অবস্থা ভালো করতে 
  • উচ্চতা ভীতি কমাতে
  • সাধারণ সর্দি-জ্বর কমাতে
  • স্মৃতিভ্রমের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কমাতে
  • ডায়াবেটিক ফুট আলসার কমাতে

নাইট্রিক অক্সাইডের উৎস 

বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি ও ফলমূলে এই উপাদান বিদ্যমান:

  1. তরমুজ
  2. পালং শাক
  3. ব্রকলি
  4. সাইট্রাস জাতীয় ফল যেমন: কমলা, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি 
  5. বেদানা
  6. নানা রকমের বীজ এবং বাদাম। 

নাইট্রিক অক্সাইডের অভাবজনিত সমস্যা

আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত নাইট্রিক এসিডের সরবরাহ না থাকলে আমাদের শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ভিতরে রয়েছে:

  • হৃদরোগ: এই এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন না হলে আমাদের শরীরের রক্তবাহিকা সমূহ সরু হয়ে যাওয়া শুরু করে। যার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 
  • ইরেকটাইল ডিসফাংশন
  • ডায়াবেটিস
  • অবসাদ

শরীরে এটির পরিমাণ ঠিক রাখার উপায়

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে নাইট্রিক অক্সাইড এর পরিমাণ ঠিক রাখার উপায় জানতে হবে। নিচে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো: 

  1. এমন খাবার খাওয়া যাতে প্রাকৃতিক ভাবেই প্রচুর নাইট্রেট রয়েছে। নাইট্রেট আমাদের শরীরে Nitric Oxide-এ পরিণত হয়। 
  2. এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এন্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যাল এর সাথে বিক্রিয়া করে এদের নিষ্ক্রিয় করে দেয় আর ফ্রি রেডিক্যাল নাইট্রিক অক্সাইডের অর্ধায়ু কমিয়ে ফেলে সময়ের পূর্বেই খরচ করে ফেলে। 
  3. কিছু কিছু সাপ্লিমেন্ট এর উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। 

Nitric Oxide-এর আধিক্যজনিত সমস্যা

নাইট্রিক এসিডের বেড়ে গেলেও আমাদের শরীরে নানা রকমের সমস্যা হতে পারে। নিম্নে কিছু সমস্যার কথা দেওয়া হলো:

  1. মাইগ্রেনে ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  2. মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করতে পারে যা ধীরে ধীরে পারকিনসন’স ডিজিস, এলজাইমার’স ডিজিস, হান্টিংটং ডিজিস ইত্যাদিতে রূপ নিতে পারে। 
  3. ঝাপসা দৃষ্টি।
  4. মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রিক অক্সাইড মিথেমোগ্লোবিনেমিয়া নামের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি হিমোগ্লোবিন এর কাজে বাধা দেয় ফলে রক্ত চলাচল, অক্সিজেন পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। 
  5. মেটাবোলিক ডিসঅর্ডার তৈরি করতে পারে। 
  6. বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ডায়রিয়া।
  7. ইলেক্ট্রোলাইট ইম্বেলেন্স।

কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর: 

প্রশ্ন: নাইট্রিক অক্সাইড  কি মস্তিষ্ক বিকৃতি করতে পারে? 

উত্তর: প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিছু ভালো না। এই এসিড এর ব্যতিক্রম না। অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হলে এটি মস্তিষ্ক বিকৃতি করতে পারে। 

প্রশ্ন: Nitric Oxide কি ডাইইউরেটিক?

উত্তর: হ্যাঁ। এটি ডাইইউরেটিক। এটি মূত্র ত্যাগের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় । 

নাইট্রিক অক্সাইডের ব্যালেন্স আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটির উপরে আমাদের হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্কের সুস্থতা নির্ভর করে। ভালো ডায়েট প্ল্যান আমাদের শরীরে এই পুষ্টিঅনুর পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে।