ইনসুলিন বা Insulin কি? ইনসুলিনের কাজ, ভূমিকা এবং এটি সম্পর্কিত সমস্যা

Insulin একটি হরমোন যা শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। এটি শরীরে শক্তির উৎস হিসেবে গ্লুকোজকে ব্যবহার করতে সাহায্য করে এবং এই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে আমাদের শরীরে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন প্রকারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে এই হরমোনের কোনো বিকল্প নেই।

ইনসুলিন বা Insulin কি?  

ইনসুলিন বা Insulin হলো প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় দ্বারা নিঃসৃত এমন এক ধরণের হরমোন যা শরীরের কোষ দ্বারা গ্লুকোজের ব্যবহারের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজ এর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। এক কথায় ইনসুলিন গ্লুকোজকে শরীরের শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে। 

গঠনগত দিক থেকে Insulin একটি পেপটাইড হরমোন যা দুটি পলিপেপটাইড চেইন, A এবং B দ্বারা গঠিত এবং Disulfide Bond (ডাইসালফাইড বন্ড) দ্বারা সংযুক্ত।

প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের বিটা (β) কোষে Insulin তৈরি হয়। এই প্যানক্রিয়াস অঙ্গটি মানুষের পাকস্থলীর পিছনের দিকে অবস্থিত। বিটা কোষগুলি অগ্ন্যাশয়ের Islets of Langerhans এ পাওয়া যায়।

ইনসুলিন কিভাবে কাজ করে

সাধারণত খাবার পর যখন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হতে থাকে। এই ইনসুলিন শরীরের কোষগুলোকে গ্লুকোজ শোষণ করে নেওয়ার জন্য সিগন্যাল দিতে থাকে যাতে গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। 

রক্তপ্রবাহে যখন এই গ্লুকোজ এর পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে যায়, তখন insulin অতিরিক্ত গ্লুকোজকে লিভারে সঞ্চয় করতে শরীরকে নির্দেশ দিয়ে থাকে।

আর যদি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায় তখন ইনসুলিন নিঃসরণও বন্ধ হয়ে যায়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে লিভারও তখন গ্লুকোজ নিঃসরণ করে থাকে।

ইনসুলিন এর ভূমিকা

Insulin আমাদের শরীরে নানা রকমের কাজ করে থাকলেও এর প্রধান তিনটি কাজ বা ভূমিকা  নিচে দেওয়া হলো: 

  1. এই হরমোনের প্রাথমিক কাজ হল শরীরে গ্লুকোজের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করা। এর ফলে গ্লুকোজের মেটাবলিজম ত্বরাণ্বিত হয়। 
  2. এটি শরীরের কোষ দ্বারা গ্লুকোজ গ্রহণের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। একটি নির্দিষ্ট কোষের Insulin গ্রহণের পরিমাণ নির্ভর করে কোষটির Insulin Sensitivity এর উপরে।
  3. কোষের Insulin লিভার এবং পেশীগুলিতে গ্লাইকোজেন হিসাবে গ্লুকোজের সঞ্চয়ে  সাহায্য করে।

অতিরিক্ত ইনসুলিনের সম্পর্কিত সমস্যা

রক্তে এই হরমোনের অতিরিক্ত মাত্রা শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি করে থাকে। নানা রকমের সমস্যার ভিতরে রয়েছে: 

হাইপোগ্লাইসেমিয়া: 

Insulin এর অতিরিক্ত উৎপাদন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ করে কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দিতে পারে। 

ওজন বৃদ্ধি: 

এই হরমোনের অতিরিক্ত মাত্রা গ্লুকোজকে চর্বিতে রূপান্তর করে চর্বির সঞ্চয় বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

ইনসুলিন রেসিসটেন্স: 

এই হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন Insulin Resistance এর দিকে পরিচালিত করতে পারে, যার ফলে প্রেডিয়াবেটিস এবং পরবর্তীতে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইনসুলিনের এর মাত্রা কমের ফলে সমস্যা

ইনসুলিনের নিঃসরণ কম হলে রক্তে এর ভারসাম্য বজায় থাকে না। ফলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়।  এর ভিতরে তিনটি বড় সমস্যা উল্লেখ করা হলো: 

হাইপারগ্লাইসেমিয়া: 

এই হরমোনের কম উৎপাদন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হয়।

টাইপ 1 ডায়াবেটিস: 

Insulin এর কম উৎপাদন টাইপ 1 ডায়াবেটিসের একটি প্রাথমিক কারণ। 

Diabetic Ketoacidosis: 

এই হরমোনের কম উৎপাদনও Diabetic Ketoacidosis (ডায়াবেটিক কেটোঅ্যাসিডোসিস) এর দিকে পরিচালিত করতে পারে, এটি ডায়াবেটিসের একটি গুরুতর জটিলতা। 

Insulin সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর:  

প্রশ্নঃ ইনসুলিন কি মুখে খাওয়া যায়?

উত্তর: না, Insulin মৌখিকভাবে নেওয়া যায় না কারণ এটি এক ধরণের প্রোটিন যা পাকস্থলীর এনজাইম দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়।

প্রশ্ন: Insulin কি শুধুমাত্র ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়?

উত্তর: এই হরমোন প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়, এটি অন্যান্য রোগ যেমন  Cystic Fibrosis (সিস্টিক ফাইব্রোসিস) এর  চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলো কী কী?

উত্তর: হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে কাঁপুনি, ঘাম, বিভ্রান্তি, বিরক্তি, মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

প্রশ্ন:  হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলো কী কী? 

উত্তর: হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির রোগ, সেপসিস, এনসেফালাইটিস, মস্তিষ্কের টিউমার মেনিনজাইটিস, খিচুনি ইত্যাদি। 

প্রশ্ন: ইনসুলিনের কীভাবে পরিমাপ করা হয়? 

উত্তর: আমাদের শরীরে সাধারনত ব্লাড সুগার পরিমাপ করে এই হরমোনের মাত্রা ধারনা করা হয়।