ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি (Insulin Sensitivity) কি? ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ানোর উপায়

ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বা Insulin Sensitivity কি? 

ইনসুলিন আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় একটি হরমোন। এটি আমাদের শরীরে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি (Insulin Sensitivity) আমাদের শারীরিক সেই অবস্থাকে বুঝায় যেসময় আমাদের শরীরের কোষগুলো ইনসুলিন দ্বারা বেশি প্রভাবিত হতে পারে।

উচ্চহারে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি থাকার মানে হলো আমাদের শরীর গ্লুকোজকে অনেক ভালো মতো ব্যবহার করতে পারছে, এর পরিমাণ যত বেশি হবে, গ্লুকোজ ঠিক মতো ব্যবহারের পরিমাণও তত বেশি হবে। যার ফলে কমে আসবে রক্তে স্যুগার এর পরিমাণ। তবে Insulin Sensitivity মানুষ থেকে মানুষে আলাদা এবং যার কারণে এর পরিমাণ ও প্রভাব ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। 

Insulin Sensitivity Vs Insulin Resistance

ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি হলো কোষের ইনসুলিন গ্রহণের ক্ষমতা। 

ইনসুলিন রেসিসটেন্স হলো কোষের ইনসুলিন গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। 

এই কারণে সেন্সিটিভিটি বাড়লে রেসিসটেন্স কমে আসে আর রেসিসটেন্স বেড়ে আসলে, কমে যায় সেন্সিটিভিটি অর্থাৎ এদের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক।

ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ানোর উপায়

ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বৃদ্ধি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ এতে আমাদের শরীরে গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ ঠিক মতো হয়, যার কারণে ব্লাড স্যুগার কমে আসে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, হার্ট এর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এই কারণে আমাদের সদা সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন সেন্সিটিভিটি বাড়ানোর জন্য। নিচে সেন্সিটিভিটি বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ 

শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়ানো: 

শারীরিক পরিশ্রম আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বিকে ভেঙ্গে ফেলে। এই সময়ে শরীরে প্রচুর শক্তির চাহিদা তৈরি হয় যে কারণে গ্লুকোজের ব্যবহার বেড়ে যায়, একে জমিয়ে রাখার প্রবণতা কমে আসে। এর ফলশ্রুতিতে কোষ সমূহ আরও বেশি ইনসুলিন গ্রহণ করতে চেষ্টা করে, যার ফলে Insulin Sensitivityও বেড়ে যায়। 

কায়িক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে ব্যায়াম আরও একটি ভালো উপায় হতে পারে। তবে কিছু ধরণের ব্যায়াম তুলনামূলকভাবে বেশি কার্যকর। আবার একটি মানুষের শারীরিক অবস্থার উপরেও একজন কি ধরনের শারীরিক শ্রম দিতে পারবেন তা নির্ভর করে। এই ক্ষেত্রে আমরা তিনটা ভাগে এই সকল মানুষদের ভাগ করতে পারি। 

  • যারা শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন: ৩০ মিনিট করে পরিশ্রম করতে হবে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ বারের জন্য। এই ক্ষেত্রে কঠোর এরোবিক এক্সারসাইজ (একে আমরা অনেকে কার্ডিও নামের চিনি) যেমন: দৌড়ানো, সাতার, লাফানো, সাইক্লিং ইত্যাদি কমপক্ষে তিনদিন করতে হবে, আর স্ট্রেংথ ও ওয়েট এক্সারসাইজ সপ্তাহে ২ দিন রাখা উচিৎ। HIIT একটি ভালো উপায় হতে পারে।
  •  যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস আছে: ৩০ মিনিট করে পরিশ্রম করতে হবে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ বারের জন্য। এই গ্রুপের অন্তর্ভুক্তদের মাঝারি মানের এরোবিক এক্সারসাইজ যেমন: বাগান করা, হাটা, নাচ ইত্যাদি সপ্তাহে ৩ দিন করার পাশাপাশি হাই রেসিসটেন্স ট্রেনিং (HIRT) সপ্তাহে ২ দিন করে যাওয়া উচিৎ। 
  • যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস আছে এবং শারীরিকভাবে সীমাবদ্ধ: যারা খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন না তাদের যতটা পারা যায় শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। স্বল্প মাত্রার এরোবিক ট্রেনিং যেমন হাটা, হালকা স্ট্রেচিং, হাতের ব্যায়াম এর সাথে সাথে খুবই সাধারণ পেশীর ব্যায়াম করতে হবে। 

প্রয়োজন মাফিক ঘুমানো: 

ঘুম আমাদের শরীরকে সতেজ করে। যদিও অতিরিক্ত ঘুম শরীরের জন্য হানিকারক কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণে না ঘুমানো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরুপ। ঘুমালে আমাদের কোষগুলো পুনর্জীবন লাভ করে এবং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বেড়ে যায়। 

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:

যদিও কথায় বলে খাওয়ার জন্যই জীবন তবুও এই কথাটি পরিবর্তনের দাবি রাখে। পুষ্টিকর খাবার মানেই হলো জীবন। অতিরিক্ত তেল চর্বি, কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে যার ফলে আমাদের শরীরে নানা রোগ বাসা বাধে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তার ভিতরে একটি। এই কারণে কমকার্বোহাইড্রেট ওচর্বিযুক্ত খাবারের দিকে নজর দিতে হবে, প্রচুর ফল ও শাকসবজি খেতে হবে,ডায়েটারি ফাইবারের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এতে আমাদের Insulin Sensitivity বাড়বে। 

ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট:

ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা- ৩ ইত্যাদি আমাদের শরীরের ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়াতে পারে। তাই এদের ঘাটতি দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। 

ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে যেসকল খাবার

  1. ফল ও শাক-সবজি: ফল ও শাক-সবজিতে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা Insulin Sensitivity  বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন - আপেল, পেয়ারা, আনারস, পালং শাক, ফুলকপি, বাধাকপি, শিম ইত্যাদি।
  2. সামুদ্রিক ও তেলযুক্ত মাছ: Omega-3 আমাদের শরীরের জন্য ভালো এবং ইনসুলিন গ্রহণের ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। যেমন - পাঙ্গাস মাছ, রিটা মাছ, ভেটকি মাছ ইত্যাদি।
  3. হোল গ্রেইনশস্য- পুর্ণ দানার গম, বার্লি ইত্যাদি 
  4. ফার্মেন্টেটেড খাবার - কিফার, টক দই ইত্যাদি

পরিশেষে, ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি কম থাকলে আমাদের শরীরে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বাসা বাধতে পারে যা আমাদের শরীরকে নানা রকমের ঝুঁকির দিকে নিয়ে যায় এবং জীবনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করে তোলে এবং এই নিয়ন্ত্রিত জীবনের চালিকাশক্তি আমাদের ইচ্ছাভুক্তও হয় না। তাই এমন পরিস্থিতি যেন না আসে সেজন্য আমাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ানোর জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। এতে করে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে, ডায়াবেটিস সহ নানা রোগের আশংকা কমে আসবে।