গ্রোথ হরমোন বা Growth Hormone কি?
গ্রোথ হরমোন বা Growth Hormone আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও উচ্চতার জন্য দায়ী। আমাদের হাড়ের গঠন, পেশীর বিকাশে এর অবদান রয়েছে। আমাদের দেহে বয়ঃসন্ধিকালে এই হরমোন তৈরির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর পরিমাণ কমতে থাকে। বার্ধক্যকালে এর নিঃসরণ অনেকটাই কমে আসে।
গ্রোথ হরমোনের অপর নাম সোমাটোট্রোপিন হরমোন।
আমাদের পিটুইটারি গ্লান্ড এর এন্টেরিওর লোব থেকে এই হরমোন নিঃসরিত হয়। যে কোষগুলো এই কাজ করে থাকে তাদের সোমাটোট্রোপ বলা হয়। এরা সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন ১ থেকে ২ মিলিগ্রাম হরমোন ক্ষরণ করতে থাকে। তবে এই ক্ষরণের প্রক্রিয়া এক টানা হয় এমন না। বেশ কিছুটা সময় পর পর এই কোষগুলো বেশ কিছুটা হরমোন তৈরি করে আবার এর পরে কিছুটা সময় বন্ধ থাকে।
গ্রোথ হরমোন যেভাবে কাজ করে
Growth Hormone আমাদের শরীরের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন। বাড়ন্ত বয়সে এই হরমোন এর ক্রিয়ার ফলে আমাদের শরীরের হাড় ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রাপ্তবয়স্ক সময়ের আকার ও আকৃতির দিকে বেড়ে ওঠা ও পরিবর্তিত হওয়া শুরু করে। গ্রোথ হরমোনের প্রভাবে আমাদের লিভার ইনসুলিন লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর নিঃসরণ করে। যা IGF-1 (Insulin like Growth Factor -1) নামেও পরিচিত। এটি এবং এর মতো আরও কিছু উপাদান রয়েছে যা হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধির উপায়
আমাদের অনেকেই বৃদ্ধিজনিত নানা রকমের সমস্যাতে ভুগি। সেক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে আমরা কীভাবে এই হরমোন বাড়াতে পারি। নিচে কিছু উপায় দেওয়া হলো:
১. স্বাস্থ্যকর খাবার:
যেসব খাবারে মেলাটোনিন বেশি সেই সকল খাবার Growth Hormone এর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমন: ডিম, মাছ, সরিষা, বাদাম, টমেটো, আঙুর ইত্যাদি।
২. চিনি কমিয়ে দেওয়া:
চিনির পরিমাণ কমিয়ে দিলে ইনসুলিন তৈরিতে একটা ভারসাম্য আসে। যা এই হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।
৩. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং:
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং Growth Hormone বাড়াতে ভালো কাজে লাগতে পারে।
৪. নিয়মিত ঘুম:
সুন্দর নিয়ম মাফিক ঘুম আমাদের শরীরকে সতেজ করে। ফলে গ্রোথ হরমোনের পরিমাণও বাড়ায়।
গ্রোথ হরমোনের অভাবে যা হতে পারে:
যেহেতু এই হরমোন আমাদের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত সেহেতু এর অভাবে নানা রকমের সমস্যা দেখা যায়। যেমনঃ
- হাড়ের ক্ষয়িষ্ণুতা বেড়ে যায়।
- দুর্বলতা।
- পেশীর পুরুত্ব কমে যাওয়া।
- হতাশা।
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
- কোমরের কাছে চর্বি জমা।
এই হরমোন চিকিৎসার সুফল
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাচ্চাদের বৃদ্ধি ভালো না হলে চিকিৎসকগণ Growth Hormone প্রেসক্রাইব করে থাকেন। এ থেকে কিছু সুফল পাওয়া সম্ভব।
- হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়
- পেশী পুরু হয়
- এনার্জি বৃদ্ধি পায়
- কায়িক পরিশ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- চর্বির পরিমাণ কমে যায়
- হার্টের সমস্যার ঝুঁকি কমায়
কৃত্রিম গ্রোথ হরমোনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া:
অনেক ক্ষেত্রেই বাহ্যিকভাবে গ্রহণ করা এই Hormone শরীরের জন্য ক্ষতিকর সাব্যস্ত হতে পারে। আমাদের শরীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিপদ্গ্রস্থ হয়ে পড়তে পারে। এমন কিছু সমস্যার মাঝে রয়েছেঃ
- হাতে পায়ে পানি চলে আসা।
- জয়েন্ট এবং পেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।
- কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম - হাতের আঙ্গুল নাড়াতে সমস্যা হয়, ব্যথা অনুভূত হয়।
- রক্তে স্যুগার লেভেল বেড়ে যায়।
- কোলেস্টেরোলের পরিমাণ বেড়ে যায়।
- স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
- ডায়াবেটিস।
- শরীরে ক্যান্সার বা টিউমার থাকলে তাদের আকৃতিও বেড়ে যায়।
কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন কি বেআঈনী?
কালোবাজারে কৃত্রিম গ্রোথ হরমোনের বিশাল ব্যবসা রয়েছে। এথলেট ও বডিবিল্ডারদের মাঝে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। অনেকের ক্ষেত্রে এটি সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মাধ্যম কিংবা অনেকের ক্ষেত্রে এটি দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময়। সে যাই হোক না কেনো এই সকল বেশির ভাগ কৃত্রিম Growth Hormone-ই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এদের থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু অনুমোদিত হরমোন রয়েছে তবে তা গ্রহণ ও মাত্রা নির্ধারণের জন্য আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ। অন্যথায় আমাদের এমন সমস্যা হয়ে যেতে পারে যা হয়ত আগের অবস্থায় ফেরত আনার অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে।
বার্ধক্য ও শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়া প্রায় প্রতিটা প্রানির জন্যই সত্য। তবে বার্ধক্য আসার আগে আমরা শরীরের প্রতি যত্নশীল হলে আমাদের সক্ষমতা হ্রাস অনেকাংশেই কমে যেতে পারে। তবে বাহ্যিকভাবে Growth Hormone এর সাহায্য নিতে হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। কারণ, কৃত্রিম গ্রোথ হরমোনের ঝুঁকিকে আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না।