টেস্টোস্টেরন:
টেস্টোস্টেরন এক ধরণের স্টেরয়েড হরমোন যা মানুষ সহ প্রায় সকল স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ এবং পাখিদের মাঝে দেখা যায়। এটি পুরুষদের প্রধান প্রজনন হরমোন এবং এটি ছেলেদের সেকেন্ডারি সেক্সচুয়াল ক্যারেক্টারিস্টিকের জন্য দায়ী।
সেকেন্ডারি সেক্সচুয়াল ক্যারেক্টারিস্টিক হলো সেই সকল বৈশিষ্ট্য যা কোনও এক প্রজাতির পুরুষকে সেই প্রজাতির নারীদের থেকে আলাদা করে। তাই বলে এটি যে শুধু পুরুষদেরই থাকে তা কিন্তু না, নারীদের মাঝেও এই হরমোন দেখা যায় এবং এর গুরুত্বও অনেক।
টেস্টোস্টেরনের গুরুত্ব:
যেহেতু এটি পুরুষের প্রধান সেক্স বা প্রজনন হরমোন তাই স্বাভাবিকভাবে প্রজনন প্রক্রিয়ায় এর গুরুত্ব অনেক।
- এটি বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের টেস্টিস এবং জননাঙ্গের সুষম বিকাশে সহায়তা করে।
- একই সাথে এটি পুরুষলভ কণ্ঠস্বর তৈরিতে পুরুষদের স্বরযন্ত্রকে পরিবর্তিত করে।
- গোঁফ, দাড়ি এবং বগল ও শ্রোণিদেশে চুল গজানোতেও এই হরমোনের ভূমিকা আছে।
- হাড়ের গঠনে সহায়তা করে এবং তাকে মজবুত করে।
- সঙ্গম করার ইচ্ছা তৈরি করতে এই হরমোনের প্রত্যক্ষ অবদান আছে।
- এর আরও একটি অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো শুক্রাণু তৈরি।
- পেশির গঠনে সাহায্য করে।
একই সাথে এই হরমোন নারীদের জন্য একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। তবে ছেলেদের মতো যেহেতু মেয়েদের টেস্টিস নেই, তাই এক্ষেত্রে এই হরমোন তৈরি হয় ওভারি এবং এড্রেনাল গ্রন্থিতে।
- মেয়েদের পেশি ও হাড়ের গঠনে টেস্টোস্টেরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
- ওভারি বা ডিম্বাশয়ের গঠনে সাহায্য করে।
- সাধারণ যৌন উদ্দীপনাতেও এর ভূমিকা আছে বলে ধারনা করা হয়। তবে এই ব্যাপারে এখনো অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
এছাড়াও প্রাণীদেহে অণুচক্রিকার কাজে সাহায্য করতে এর অবদান রয়েছে।
টেস্টোস্টেরন লেভেল ঠিক রাখার উপায়:
১. পরিমিত ব্যায়াম:
প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ে ব্যায়াম কিংবা কায়িক শ্রম হরমোনের লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে স্থূলতা সমস্যায় ভোগা মানুষদের এই হরমোনের পরিমাণ কম থাকে।
২. সুষম আহার:
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, খাবারের উপরে অনেক ক্ষেত্রেই হরমোনের পরিমাণের সাম্যটা নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনও এর ব্যতিক্রম না। সুষম খাবার তাই অত্যাবশ্যকীয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে কিছু খাবার এই হরমোনের পরিমাণকে কমিয়ে দিতে পারে। এর ভিতরে রয়েছে সয়াসস, এলকোহল, পুদিনা পাতা, ভেজিটেবল অয়েল, প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার ইত্যাদি।
৩. ভিটামিন - ডি:
এই হরমোনের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
৪. কর্টিসোল
যার অপর নাম হচ্ছে স্ট্রেস হরমোন। Cortisol হরমোন টেস্টোস্টেরনের উপরে বিপরীত প্রতিক্রিয়া ফেলে। অর্থাৎ এর পরিমাণ বেড়ে গেলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে। ইয়োগা, ব্যায়াম, মেডিটেশন, ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক, বাগান করা ইত্যাদি স্ট্রেস কমানোতে সাহায্য করতে পারে।
৫. কিছু কিছু ভেষজ উদ্ভিদ আছে যা এই হরমোনের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এটি বৃদ্ধি এবং হ্রাস দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
৬. নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন:
নিয়মিত ঘুম, পরিমিত আহার, ব্যায়াম ইত্যাদির সমন্বয় একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে। একই সাথে ধূমপান না করা, এলকোহল গ্রহণ না করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি এই ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
Testosterone বেড়ে গেলে কি হতে পারে:
অনেকের এমন ধারণা থাকতে পারে টেস্টোস্টেরন লেভেল বেশি হওয়াটাই হয়ত ভালো। কিন্তু এই হরমোনের আধিক্য দেখা দিলে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও, এই হরমোনের বৃদ্ধির ফলাফল হতে পারে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যেতে পারে, টেস্টিস রুগ্ন ও ছোট হয়ে যেতে পারে।
- হৃদরোগ: হৃদপিণ্ডের মাংসপেশির ক্ষয় হতে পারে, সেই সাথে বেড়ে যেতে পারে হার্ট এটাকের শঙ্কা।
- প্রোস্টেট এর আকৃতি বৃদ্ধি পেতে পারে যার ফলে ব্যথা হতে পারে, মূত্রত্যাগে সমস্যা হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, অনিন্দ্রা, মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- সহজেই মেজাজ এর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, চিন্তাশক্তি হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরনের ফলে মহিলাদের ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরির আশংকা রয়েছে। এছাড়া চেহারায় অবাঞ্ছিত গোঁফ, দাড়ির জন্যও এটি দায়ী।
Testosterone কমে গেলে কি হতে পারে:
উপরের আলোচনা থেকে এমন মনে হতে পারে যে এই হরমোনের পরিমাণ কম হলে হয়ত ভালো। কিন্তু বাস্তবিক ব্যাপারটা এমন নয়। কিছু সমস্যা নিচে দেওয়া হলোঃ
- দৈহিক চাহিদা কমে যায় যা অনেক সময় শারীরিক অক্ষমতায় রূপ নিতে পারে। সেই সাথে টেস্টিস আকার ছোট হয়ে যাওয়া, শুক্রাণুর হার কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
- হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া
- অবসাদ
- চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি
উপরের আলোচনা থেকে এই ব্যাপারটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, শরীর সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই টেস্টোস্টেরনের পরিমাণের নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার। এই ক্ষেত্রে ছেলে কিংবা মেয়ে সবারই একটু নজর রাখতে হবে কারণ হরমোনের পরিমাণ ঠিক না রেখে সুস্থ জীবনের প্রত্যাশা করা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না।