মেডিটেরিয়ান ডায়েট কি?
ভূমধ্যসাগরীয় কিংবা Mediterranean এলাকার মানুষরা বেশ প্রাচীনকাল থেকে বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। সে এলাকার পরিবেশের সাথে সাথে আরো একটি ব্যাপার এখানে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। তা হলো এই এলাকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস।
১৯৫০ সালের পর পরই এই খাদ্যাভ্যাস কিংবা ডায়েট প্ল্যান নিয়ে নানা গবেষণা শুরু হয়। এবং দেখা যায় হৃদরোগ, ফ্যাটি লিভার ও কিডনির সমস্যা সহ নানা অসুখের বিপরীতে এই ডায়েট প্ল্যান ভালো কাজ করে। তখন থেকেই ডায়েট প্ল্যানসমূহের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে এটি অন্যতম হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।
এই ডায়েট প্ল্যানের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি লম্বা সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া যায়, এর অনেক বিকল্প আছে সেজন্য ভেজিটেরিয়ান, ভিগান, নন-ভেজিটেরিয়ান, ধনী, গরিব নির্বিশেষে এটি অনুসরণ করতে পারে।
মেডিটেরিয়ান ডায়েটের উপকারিতা:
নানা রকম গবেষণায় এটি সাব্যস্ত যে এই Mediterranean Diet ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ইত্যাদি প্রতিহত করে এবং মস্তিষ্ক ও হার্টের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখে
মেডিটেরিয়ান ডায়েট মেনে চলার সবচেয়ে বড় কারণ হলো হার্টকে সুস্থ রাখা। গবেষণায় এটি দেখা যায়, রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হার্টের ব্লকের ঝুঁকি কমাতে এই ডায়েট ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। লো ফ্যাট ডায়েট এর সাথে সম্মিলিত একটি গবেষণায় দেখা যায় Mediterranean Diet হৃদপিণ্ডের সমস্যা সমাধানে অনেক অনেক বেশি কার্যকর। একই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
রক্তে স্যুগার লেভেল কমিয়ে রাখে
Mediterranean ডায়েটে শর্করা এর সাথে সাথে নানা রকমের প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া হয় যার ভিতরে প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে। এসব খাবার পেটকে পূর্ণ রাখে এবং অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ কমিয়ে দেয়।
শরীরকে চাঙ্গা রাখে
এই ডায়েটে প্রচুর শাক-সবজি রয়েছে। এসবে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেলস, এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট। আমরা জানি এন্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যাল সম্পর্কিত নানা জটিলতা দূর করে আর শরীরকে চাঙ্গা রাখে।
মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতে
এই ডায়েট সেবনে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ হয়। যা মস্তিষ্কের কাজে সাহায্য করে।
হরমোনাল ব্যালেন্স তৈরিতে
মেডিটেরিয়ান ডায়েট অতিরিক্ত কর্টিসল কমিয়ে দেয়। এতে করে শরীরের স্ট্রেস কমে যায়। কর্টিসল লেভেলে বেড়ে গেলে নানা রকমের সমস্যা হয় , এর একটি হলো টেস্টস্টেরনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
মেডিটেরিয়ান ডায়েট যেভাবে মানতে হবে:
মেডিটেরিয়ান ডায়েট মেনে চলার কিছু নিয়ম আছে। নিচে তা দেওয়া হলো:
যা খাওয়া যাবে: শাক, সবজি, শিম জাতীয় খাদ্য, নানা রকমের বাদাম, ফল, আলু, হোল গ্রেইন, মশলা, মাছ, অলিভ ওয়েল, লাল চাল-আটা
যা মাঝে মাঝে খাওয়া যাবে: মুরগী, ডিম, দই, পনির
যা একদম কম খেতে হবে: লাল মাংস, মিষ্টি পানীয়, অতিরিক্ত চিনি
যা খাওয়া উচিত না: প্রক্রিয়াজাত মাংস, এলকোহল, মাখন, ঘি, সাদা চাল, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল।
মেডিটেরিয়ান ডায়েটের ক্ষতিকর দিকঃ
Mediterranean ডায়েটের কিছু খারাপ দিক আছে। যদিও অন্যান্য ডায়েট প্ল্যানের সাথে তুলনা করলে তা অনেক কম।
- এই ডায়েটে দুধ জাতীয় খাবারের উপরে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতির সম্ভাবনা থাকে।
- এই খাদ্যাভ্যাস কিছুটা শিথিল বিধায় অনেকে অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকতে পারে। যেমনঃ কার্বোহাইড্রেট ও তেল জাতীয় খাবার খাওয়ার অনুমতি থাকায় অনেকে ভাজা পোড়া খাবারের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।
- এই পদ্ধতিতে প্রয়োজন মাফিক খাবার খাওয়ার কথা বলা হয়। এই ব্যাপারটিকেও অনেকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহনের বাহানা হিসেবে নিতে পারে।
তবে আমরা চাইলেই একটি ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করে ভালো ফল পেতে পারি, আবার চাইলে তা থেকে বঞ্চিত হতেও পারি। এটি নির্ভর করবে আমাদের খাবার নির্বাচনের উপরে। যেমনঃ বলা হলো দই খাওয়া যাবে, আর আমরা অতিরিক্ত চিনি দেওয়া দই খাওয়া শুরু করলাম। দেখা গেলো দই বা ইয়োগার্ট খাওয়া আসল সুবিধা থেকেই আমরা দূরে সরে আসলাম।
আবার ধরলাম পনির খাওয়ার অনুমতি আছে বিধায় আমরা সারাদিন বসে বসে পিজ্জাই খেলাম তাহলে আমাদের জন্য কোনো উপকার অপেক্ষা করবে না । আমাদের অবশ্যই খাবার সনাক্ত করণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শর্করা জাতীয় খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটি বড় সাহায্য হতে পারে।
মেডিটেরিয়ান ডায়েট নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় এই ডায়েট কি মেনে চলা যাবে?
উঃ মেডিটেরিয়ান ডায়েট সবচেয়ে ফ্লেক্সিবল ও সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ডায়েট প্ল্যানগুলোর একটি। গর্ভাবস্থায় প্রয়োজন অনুযায়ী এই প্ল্যান পরিবর্তন সম্ভব। তাই এটি মেনে চলা যাবে।
প্রশ্নঃ মেডিটেরিয়ান ডায়েটে কি ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ মাপা হয়?
উঃ যেহেতু, এই ডায়েটের মূল লক্ষ্য শর্করা, আমিষ, স্নেহ জাতীয় খাদ্য ও ডায়েটারি ফাইবারের সমন্বয় সেহেতু এটি পুর্নাঙ্গভাবে মেনে চললে এমনিতেই অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা হয় না। এজন্য ক্যালোরি গ্রহণের কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণের উল্লেখ এই ডায়েট প্ল্যানে নেই।
সবশেষে এটি বলা যায়, Mediterranean ডায়েট বাস্তব সম্মত একটি ডায়েট প্ল্যান। এজন্যই অনেকগুলো হেলথ অর্গানাইজেশন থেকে একে “Healthiest Diet Plan” এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।