- Fatty Liver কি?
- কিভাবে হয় ফ্যাটি লিভার?
- Fatty Liver এর প্রকারভেদ
- কাদের Fatty Liver হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
- ফ্যাটি লিভার এর লক্ষণ
- কীভাবে নির্ণয় করা যায়?
- প্রতিরোধ বা কমানোর উপায়
Fatty Liver কি?
Fatty Liver শব্দগুলো শুনে আমাদের যেমনটা মনে হচ্ছে আদতে ব্যাপারটাও তেমনই। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অসতর্কতার কারনে আমাদের লিভারে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট জমে যাওয়াই হলো Fatty Liver।
যকৃত বা লিভার আমাদের শরীরের রাসায়নিক পদার্থের গুদামঘর। আমাদের নানা মেটাবোলিক এক্টিভিটির জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক, হরমোন সরবরাহ করে এই লিভার। লিভারে যখন চর্বি জমতে থাকে তখন লিভারের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এই ক্ষেত্রে লিভারের মোট ভরের ৫%-১০% যখন চর্বিতে পুর্ণ হয়ে যায়।
কিভাবে হয় ফ্যাটি লিভার?
অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় Fatty Liver খুব একটা সমস্যা তৈরি করে না কিন্তু যাদের একবার সমস্যা শুরু হয় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণিঘাতি পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হয়।
এই ক্ষেত্রে প্রথমে লিভার ফুঁলে যায় এবং এতে ইনফেকশন তৈরি হয়। এরপরে ক্ষত জায়গায় স্কার টিস্যু তৈরি হয়। একে বলে ফাইব্রোসিস ( Fibrosis)। যখন এই স্কার টিস্যু অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন এটি সাধারণ টিস্যুকে প্রতিস্থাপন করা শুরু করে। এই ধাপকে বলে লিভার সিরোসিস (Cirrhosis of Liver). এই সময়ে লিভারের সাধারণ টিস্যু কমে গিয়ে এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। এমনকি এক সময় কাজ একবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একে বলে লিভার ফেইলিউর। লিভার সিরোসিস লিভার ক্যান্সারেও রুপ নিতে পারে।
Fatty Liver এর প্রকারভেদ
দুই রকমের Fatty Liver ডিসিস দেখা যায়ঃ
- এলকোহল ইনিডিউসড ( Alcohol Induced)
- নন- এলকোহলিক (non-alcoholic)
প্রথম প্রকরণে অতিরিক্ত এলকোহল গ্রহণ লিভার সেল ডেথ এবং ফ্যাট জমা হওয়ার জন্য দায়ী। লিভার ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারন এই এলকোহল ইনডিউসড Fatty Liver।
দ্বিতীয় কারনটির একশতভাগ নিশ্চিত কারন নেই। তবে ধারণা করা হয় অস্বাস্থ্যকর অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, ওবিসিটি যাদের আছে তাদের ভিতরে এই দ্বিতীয় কারনে Fatty Liver ডিসিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
কাদের Fatty Liver হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
- যারা এশিয়ান বা হিস্পানিক হেরিটেজের অধিকারী
- যারা অতিরিক্ত এলকোহল গ্রহণ করে
- যারা কায়িক শ্রম করে না
- অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে
- শরীরে যাদের অতিরিক্ত চর্বি জমে গিয়েছে
- মহিলাদের ভিতরে যাদের মাসিক বন্ধ (মেনোপজ) হয়ে গিয়েছে
- যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ডিসিস, ডায়বেটিস রয়েছে।
ফ্যাটি লিভার এর লক্ষণ
নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- এবডোমিনাল পেইন। পেটের উপরিভাগ ভরা ভরা মনে হওয়া
- রুচি কমে যাওয়া
- বমি বমি ভাব
- ওজন হ্রাস
- ঘন ঘন জন্ডিস
- প্রচন্ড অবসাদ এবং শারিরীক সক্ষমতা কমে যাওয়া
কীভাবে নির্ণয় করা যায়?
ডাক্তার শুরুতে হয়ত একজনের Fatty Liver আছে তা অনুমান করতে পারবেন রক্তে নানা রকমের লিভারের এনজাইম ও হরমোনের অসামাঞ্জস্যতা থেকে। একই সাথে লিভার সেল ডেথের (Cell death) পরিমান তুলনামুলক বেশি হয় যা রক্ত পরীক্ষায় বুঝা যায়। এরপরে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করানো হতে পারে
- আল্ট্রা-সনোগ্রাম
- লিভার বায়োপসি - এটি নির্ধারণ করে লিভার ডেমেজ কতটা পরিমান হয়েছে
- ফাইব্রোস্ক্যান- এটি বায়োপসির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত স্কার টিস্যুর পরিমান বুঝতে এটি ব্যবহার করা যায়।
কীভাবে এর প্রতিকার করা যায়?
১. যারা এলকোহল গ্রহণ করে, তাদের তা বন্ধ করতে হবে।
২. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ ও ভিটামিন নিতে হবে
৩. ওজন কমাতে হবে
৪. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
আরো পড়ুন : Immune System (ইমিউন সিস্টেম)
এটি প্রতিরোধ বা কমানোর উপায়
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। আমাদের সর্বাবস্থায় এই ব্যাপারে নজর দিতে হবে যেন আমরা Fatty Liver ডিসিসে আক্রান্তই না হয়। এই জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
১. এলকোহল, চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও টেস্টিং সল্ট যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
২. কায়িম শ্রম করতে হবে।
৩. যারা বসে কাজ করি, তাদের ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় বের করতে হবে
লিভারকে বলা হয় মিরাকেল অর্গান। এটি নিজেকে নিজে সুস্থ করতে পারে৷ আমরা যদি নিজেরা নিয়ম মেনে চলি আর সুস্থ জীবন-যাপন করি তাহলে লিভার নিজেই নিজেকে ধীরে ধীরে সুস্থ্য করে তুলবে। আর লিভার সুস্থ তো আমাদের শরীরের মেটাবলিজমও সুস্থ। আর মেটাবলিজম সুস্থ অর্থ আমাদের শরীরও সুস্থ। কথায় বলে, সুস্থ শরীর, সুন্দর মন।