High Intensity Interval Training বা HIIT কি? HIIT এর উপকারিতা, নিয়ম এবং সতর্কতা

High Intensity Interval Training বা HIIT কি? 

 High Intensity Interval Training এই শব্দগুচ্ছকে যদি আমরা ভাগ করি তবে আমরা পাই, High Intensity এবং Interval.

তার মানে HIIT হলো এমন একটি শারীরিক অনুশীলনের পদ্ধতি যেখানে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর বিরতি নিয়ে নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য খুবই কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করা হয় । একে হাই ইনটেনসিটি কার্ডিও বলা হয়।

সাধারণত HIIT এর জন্য ১০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ করে রাখতে হয়। এটি খুব কম সময়ের জন্য মনে হলেও সাধারণ শারীরিক পরিশ্রম অপেক্ষা এটি অনেক সময় খুব ভালো ফলাফল তৈরি করতে পারে। 

কি ধরণের শারীরিক পরিশ্রম করা প্রয়োজন তা মানুষ ভেদে আলাদা হলেও মুল নীতি এখানে একই রকম। HIIT এর কিছু উদাহরণ হতে পারে দৌড়, সাইকেল চালানো, দড়ি লাফ এবং অন্যান্য Bodyweight Exercise.

একজন একটি ধাপ বার বার করার মাধ্যমে এই ট্রেনিং চালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু একজন কি পরিমাণ পরিশ্রম করবে এবং কি পরিমাণ ক্যালোরি হারাবে তা আসলে নির্ভর করে একেক জনের শরীরের বৈশিষ্ট্যের উপরে।

HIIT এক্সারসাইজ করার নিয়ম

এই ব্যায়ামের নাম High Intensity Interval Training হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ একবার কঠোর পরিশ্রম করার পর আমাদের বেশ অনেকটা সময় বিশ্রাম নিতে হবে এবং এর পরে আবার আগের কাজটাই চালিয়ে যেতে হবে। যেমন ধরি, সাইক্লিং মেশিনের মাধ্যমেই আমরা High Intensity Interval Training করবো। সেক্ষেত্রে আমরা ৩০সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট খুব দ্রুততার সাথে কঠোরভাবে সর্বোচ্চ রেসিস্টেন্স দিয়ে সাইক্লিং চালিয়ে গেলাম। যা আমাদের একটি “রাউন্ড” হিসেবে বিবেচিত হবে। এর পরে কয়েক মিনিট আমরা ধীরে সাধারণভাবে সাইক্লিং করবো, এটি হলো আমাদের ইন্টারভাল বা বিরতি। এই বিরতির পর আবার সর্বোচ্চ রেসিস্টেন্স দিয়ে সাইক্লিং চালিয়ে যাবো। এভাবে নিয়মিত বিরতি দিয়ে দিয়ে কয়েক রাউন্ড চালিয়ে যেতে হবে। 

উপরে যে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে এটিই যে করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। তবে এটি একটা উপায় মাত্র। আমাদের সুবিধা মতো পছন্দসই ব্যায়াম বেছে নিতে পারি, এক রাউন্ড কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা ঠিক করতে পারি, কত সময় বিশ্রাম নিবো কিংবা কত সময় ধরে চালিয়ে যাবো এটাও আমাদের নিজেদের উপরেই নির্ভর করে। দৌড়ানো, সিট আপ, সাতার ইত্যাদি যেকোনো উপায়েই এটি করা যায়।

HIIT ব্যায়াম এর উপকারিতাঃ 

হিট এক্সারসাইজ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ব্যায়াম। এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত অনুশীলন পদ্ধতি। নিচে এর উপকারিতা দেওয়া হলো:

১. দ্রুত ক্যালোরি খরচে:
HIIT খুব দ্রুত ক্যালোরি খরচ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অন্যান্য ধরণের ব্যায়ামের তুলনায় High Intensity Interval Training ২৫%-৩০% বেশি ক্যালোরি খরচ করে। 

২. মেটাবলিক রেট বৃদ্ধিতে:
গবেষণায় দেখা যায়, High Intensity Interval Training এর পরবর্তীতে টানা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত আমাদের শরীরের মেটাবলিক রেট বেশি থাকে। এই কারণে ব্যায়াম শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্তও শরীরের ক্যালোরি খরচের প্রবণতা চলতে থাকে। 

 ৩. চর্বি ঝরাতে:
High Intensity Interval Training আমাদের দেহে জমে থাকা চর্বি পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এতে ওজন কমতে সহায়তা হয়। 

৪. পেশী তৈরি:
এই ট্রেইনিং এর সময় আমাদের শরীরের পেশী সমূহ খুব সচল হয়ে উঠে এবং এরা উদ্বেলিত হয়। যার ফলে পেশীর গঠন সুন্দর, সবল হয়। 

 ৫. অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়:
আমাদের শরীরের পেশী অক্সিজেন গ্রহণ করে সজীব থাকে। কঠোর পরিশ্রম অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ২০ মিনিটের জন্য সপ্তাহে চারদিন করে পাঁচ সপ্তাহের জন্য যদি এই ট্রেইনিং চালিয়ে যাওয়া হয় তবে আমাদের শরীরের অক্সিজেন  গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যায় ৯% পর্যন্ত।

৬. হার্ট রেট ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে:
HIIT আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। একই সাথে এর ফলে হার্টের ব্যায়াম হয়। এর ফলে  সাহায্য করে হার্ট রেট ঠিক থাকে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। রক্তের সুগার লেভেল কমায়।

৭. ফুসফুসের সুস্থতায়:
হাই ইনটেনসিটি কার্ডিও এর কারণে আমাদের ফুসফুসের ব্যায়াম হয়। ফলে আমাদের ফুসফুস আরো সচল হয়ে উঠে।  

HIIT নিয়ে সতর্কতা: 

একটা ব্যাপার আমাদের অনেকের মাঝেই দেখা যায়, সেটা HIIT হোক অথবা অন্যান্য ব্যায়াম, আমরা সাধারণত ওয়ার্ম আপ করতে চাই না। Warm up খুবই দরকারি। এই ওয়ার্ম আপ হতে পারে একদমই সাধারণ ব্যায়াম, হতে পারে স্ট্রেচিং। কিন্তু এই ব্যাপারটা খুব প্রয়োজন কারণ সরাসরি ব্যায়াম করতে গেলে আমাদের পেশীতে টান লাগতে পারে, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে।হাই ইনটেনসিটি কার্ডিও তে এই ঝুঁকি আরো বেশি। তাই আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেই ব্যায়াম শুরু করতে হবে। 

High Intensity Interval Training একটি বিজ্ঞানসম্মত ব্যায়ামের প্রক্রিয়া। এটি আমাদের শরীরকে সুস্থতা প্রদানে সহায়ক হতে পারে। তবে আমরা যে প্রক্রিয়াই অনুসরণ করে থাকি না কেনো আমাদের উচিৎ নিয়মিত কায়িক শ্রম করে যাওয়া। এতে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে, সুস্থ শরীরে রোগ বাসা বাধতে পারে না। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই ব্যায়াম একটি ভালো উপায় হতে পারে।