Gut Flora বা গাট ফ্লোরা কি?
গাট ফ্লোরা বা গাট মাইক্রোবায়োটা হলো মানুষের Gut বা GI Tract (Gastrointestinal Tract) এ যে মাইক্রোঅর্গানিজমদের পাওয়া যায়। এই সকল মাইক্রোঅর্গানিজমদের মাঝে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ফাঞ্জাই, আর্কিয়া ও ভাইরাস। আমাদের শরীরে যে ৪০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া রয়েছে তার সিংহভাগই রয়েছে আমাদের GI Tract এ। সম্মিলিতভাবে এই Gut flora আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরা যেমন আমাদের শরীরের অসংখ্য উপকার করে থাকে, ঠিক একইভাবে এদের মাঝের কিছু প্রজাতি রোগ সৃষ্টিও করতে পারে।
আমাদের জন্মের এক বা দুই বছরের মাঝেই শরীরের গাট ফ্লোরা তৈরি হয়ে যায় এবং এই সংমিশ্রণ একজন অপেক্ষা অন্যজনের আলাদা হয়। আমাদের সাথে এই ফ্লোরার সম্পর্ক যে শুধুই উপকারী এমন না, এই সম্পর্ককে আমরা বলতে পারি মিউচুয়ালিজম অর্থাৎ আমাদের শরীর থেকে এরা কিছু সুবিধা ভোগ করে যেমনঃ আশ্রয় ও পুষ্টি, একই সাথে এরা আমাদের শরীরেরও প্রয়োজনীয় উপকার করে থাকে।
Gut Flora এর উপকারিতাঃ
- ভিটামিন সরবরাহঃ আমাদের শরীরে Vitamin K এর বিরাট সরবরাহকারী হলো এই গাট মাইক্রোবায়োটা। এছাড়াও এরা Vitamin B তৈরিতে সহায়তা করে থাকে।
- ফাইবার আত্মিকরণেঃ আমাদের শরীর সাধারণত ডায়েটারি ফাইবার হজম করতে পারে না। যা আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্র ও পাকস্থলী পরিষ্কার করে কিন্তু বৃহদান্ত্রে এর প্রয়োজনীয়তা তুলনামুলক কম কারন এর পরে এটি শরীর থেকে বেরিয়েই যাবে। কিছু Gut ব্যাকটারিয়া এই ফাইবারকে ফার্মেন্টেশন পদ্ধতিতে ছোট ছোট ফ্যাটি এসিডে পরিণত করে যা আমাদের শরীর শোষণ করে নিতে পারে।
- মেটাবলিজমেঃ কিছু কিছু ক্ষুদ্রান্ত্রের ব্যাকটেরিয়া Bile Acid, Sterol ও Xenobiotics এর মেটাবলিজমে সাহায্য করে।
- হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধেঃ Gut ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিওসিন ক্ষরণ করে যা বাইরে থেকে আসা অপকারি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। একই সাথে এরা পুষ্টির জন্য বাইরের ব্যাকটেরিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা করে থাকে। আগের থেকেই পুষ্টিতে সমৃদ্ধ গাট ব্যাকটেরিয়ার সাথে প্রতিযোগিতায় সাধারণত বাইরের ব্যাকটেরিয়া পেরে উঠে না।
- মস্তিস্কের সুস্থ্যতায়ঃ এরা নানা রকমের নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ করে। যা মস্তিস্ককে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করতে ও শরীরের সমন্বয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- দুধ হজমেঃ অনেক বাচ্চা দুধ হজম করতে পারে না, অনেক গাট ফ্লোরা বাচ্চাদের মায়ের দুধ হজমে সাহায্য করে থাকে।
গাট ফ্লোরার প্রভাবকঃ
বেশ কিছু বিষয় আছে যা গাট ফ্লোরা এর উপরে প্রভাব বিস্তার করে। তা ভালো মন্দ দুইটাই হতে পারে। যেমনঃ-
- বয়স
- ভৌগলিক অবস্থা
- পুষ্টি
- জাতি বা ইথনিসিটি
- আর্থসামাজিক অবস্থা
- এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার
- প্রেগনেন্সি
- প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক
- শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম
Gut Flora এর ক্ষতিকর দিকঃ
ভালো মাইক্রোঅর্গানিসমের সাথে সাথে এমন কিছু মাইক্রোঅর্গানিজম আছে যা নানা রকমের রোগ তৈরি করতে পারে। আমাদের এদের কিছু কিছু এমনও আছে যারা স্বাভাবিক সময়ে রোগ তৈরি করে না কিন্তু দুর্বল শরীরে রোগ তৈরি করে, এদের opportunistic pathogen বা সুযোগসন্ধানী জীবানু বলা হয়।
- Helicobacter নামের ব্যাকটেরিয়া পেপটিক আলসার তৈরির প্রধান কারনগুলোর একটি।
- কিছু মাইক্রোঅর্গানিসম সুযোগ পেলে পেটের সমস্যা তৈরি করে।
- অনেক সময় ডায়াবেটিক, অ্যাজমা, লিভারের রোগ তৈরিতেও এদের ভূমিকা রয়েছে।
গাট ফ্লোরা ভালো রাখার উপায়ঃ
- আলাদা আলাদা রকমের খাবার গ্রহণ আলাদা আলাদা রকমের গাট মাইক্রোঅর্গানিজমের কলোনি তৈরিতে সাহায্য করে। আর Diverse Gut Flora কে সুস্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ডায়েটারি ফাইবার সুস্থ্য গাট ফ্লোরা এর জন্য দরকারি। তাই শাক-সবজি জাতীয় খাবার গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
- ফার্মান্টেডেড খাবার যেমনঃ দই, টফু, কিমচি, কিফার, কম্বুচা ইত্যাদি।
- বাচ্চাদের কম করে হলেও ৬ মাস বুকের দুধ খাওয়ানো।
- পলিফেলনসমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ কাঠ বাদাম, গ্রিন টি ইত্যাদি জাতীয় খাবার গ্রহণ।
- প্রোবায়োটিক গাটফ্লোরার জন্য উপকারী।
- অপ্রয়োজনে এন্টিবায়টিক্স গ্রহণ না করা।
পরিশেষে বলা যায়, Gut ফ্লোরা আমাদের শরীরের পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে, পুষ্টি প্রদান করে একই সাথে নানা মেটাবলিক কাজ ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। উপকারি ও অপকারি মাইক্রোঅর্গানিসমের সমতা নষ্ট হলে আমাদের শরীরের সুস্থতাও নষ্ট হয়, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা শুরু হয়। তাই সুষম খাবার ও পরিমিত ব্যায়াম করে আমরা আমাদের GI Tract এর স্বাস্থ্যতা নিশ্চিত করতে পারি।