মিনারেল বা Mineral কি?  মিনারেলস এর কাজ এবং উৎস

মিনারেল কি? 

মিনারেল বা Mineral হলো খাদ্যের সেই মৌলিক উপাদান যা আমাদের খাবারে উপস্থিত থাকে এবং নানা রকম শরীরবৃত্তীয় কাজে আমাদেরকে সাহায্য করে। অনেক সময় ভিটামিন ও mineral শব্দ দুইটি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এরা আসলে এক না। 

Mineral হলো প্রধানত অজৈব উপাদান। আমাদের শরীর নানা রকম কাজে নানা রকমের মিনারেলস ব্যবহার করে থাকে। এই উপাদান সমূহ আমাদের সার্বিক পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়।

আমাদের শরীরে নানা অনুপাতে এই সকল উপাদানগুলো প্রয়োজন হয়। এই সকল উপাদানের অভাবে আমাদের শরীরে নানা রকম অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়। আমরা এই সকল উপাদান পেতে পারি mineral এ পরিপূর্ণ খাবার থেকে। 

খাদ্যে মিনারেলস এর প্রকারভেদ

আমাদের শরীরে নানা রকমের উপাদান আলাদা আলাদা পরিমাণে প্রয়োজন হয়। কিছু কিছু উপাদান খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয় আবার কিছু কিছু উপাদান প্রয়োজন হয় অনেক পরিমাণে।

তাই আমাদের এই অত্যাবশ্যকীয়  Mineral গুলোকে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ভাগ করা হয় প্রধানত দুই ভাগে: 

  1. ম্যাক্রোমিনারেলস
  2. মাইক্রোমিনারেলস

১. ম্যাক্রোমিনারেলস

এই উপাদান সমূহ আমাদের শরীরে অনেক বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এইজন্য এদেরকে আমাদের শরীরের মুখ্য উপাদান কিংবা Major Elementsও বলে। এই সকল উপাদানের মাঝে রয়েছে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও সালফার আমাদের শরীর এই সকল উপাদান তৈরি করতে পারে না। তাই নানা রকমের খাদ্য থেকেই এর ঘাটতি মেটাতে হয়। 

এই সকল উপাদানের ঘাটতি আমাদের স্বাস্থ্যকে তীব্র ঝুঁকির দিকে নিয়ে যায়। যেমনঃ ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের গঠনের সাথে সম্পর্কিত। তাই এই উপাদানের অভাবে হাড়ের গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। 

আবার আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড রোগ হতে পারে। 

২. মাইক্রোমিনারেলস বা ট্রেস মিনারেলস

এই ধরণের উপাদান আমাদের শরীরে সারা জীবনেই খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এজন্য এদেরকে গৌণ উপাদান কিংবা ট্রেস মিনারেলসও বলা হয়। এই সকল উপাদানের মাঝে রয়েছে আয়রন, কপার, আয়োডিন, নিকেল, জিংক, মলিবডেনাম, সেলেনিয়াম, ফ্লোরাইড, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ। 

এই সকল উপাদান অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণ করা হলে Mineral Toxicity দেখা দিতে পারে। যারা একটানা নানা রকমের ডায়েটেরি সাপ্লিমেন্টস সেবন করে যাচ্ছেন তাদের মাঝে সেলেনিয়াম টক্সিসিটির মাত্রা অনেক। 

এই সকল উপাদানের অভাবে আমাদের শরীরে নানা রকম অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়। একে Mineral Deficiency বলে। 

মিনারেলস এর কাজ

প্রতিটা মিনারেলই আমাদের শরীরে আলাদা আলাদা নানা রকমের কাজে নিয়োজিত। নিচে আলাদা আলাদা  Minerals এর কাজ উল্লেখ করা হলো: 

ক্যালসিয়াম:

  • রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
  • পেশীর সংকোচন ও স্নায়ুর সঞ্চালনে সাহায্য করে।
  • হাড়ের গঠন ও একে শক্তিশালী করতে প্রয়ো।

ক্লোরাইড:

  • রক্তের ঘনত্ব, রক্ত চাপ ও শরীরের অন্যান্য তরল উপাদানের pH লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। 

কপার:

  • লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে
  • স্নায়ুর স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে

আয়োডিন:

  • থাইরোয়েড গ্লান্ডকে স্বাভাবিক রাখে।
  • মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সাহায্য করে।
  • কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

 ম্যাগনেসিয়াম:

  • শক্ত হাড় গঠনে সাহায্য করে।
  • শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
  • পেশী ও স্নায়ুর সঠিক ও স্বাভাবিক সঞ্চালনে সাহায্য করে।

আয়রন:

  • সারাদেহে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে।
  • শক্তি উৎপাদন ও সঞ্চয়ে ভূমিকা রয়েছে।

ম্যাঙ্গানিজ: 

  • পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • নার্ভ ইমপালসকে পরিবহনে সাহায্য করে।

সোডিয়াম:

  • কোষের অসমোটিক ব্যালেন্স রক্ষা করতে সাহায্য করে। 
  • রক্তের ঘনত্ব ধরে রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

সালফার:

  • প্রোটিন সিনথেসিস এ সাহায্য করে।
  • কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ফসফরাস:

  • শরীরকে শক্তি সঞ্চয় ও তা ব্যবহারে সাহায্য করে। 
  • ক্যালসিয়ামের সাথে হাড় গঠনে সাহায্য করে।

পটাশিয়াম: 

  • পেশীর সংকোচনে সাহায্য করে ও নার্ভ ইমপালস পরিবহনে সহায়তা করে।
  • শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সাহায্য করে। 

সেলেনিয়াম:

  • রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় এর অবদান রয়েছে।
  • এন্টি অক্সিডেন্ট ডিফেন্স সিস্টেম পরিচালনায় সহায়তা করে। 

মলিবডেনাম: 

  • কিছু অতি প্রয়োজনীয় এনজাইমকে সচল করতে।
  • জেনেটিক মেটারিয়াল রিপেয়ার করে। 

জিংক: 

  • ক্ষত পূরণে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • শক্ত হাড়্ গঠণে সাহায্য করে।
  • কোষের বিভাজনে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। 

নিকেল: 

  • খাবারের পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
  • লোহিত রক্ত কণিকার কাজে সহায়তা করে। 

মিনারেলস এর উৎস

ক্যালসিয়াম: কাঠবাদাম, গাজর, দুধ, ব্রকলি, পেঁপে, রসুন

ক্লোরাইড: লবণ, দুধ, কলিজা, বাদাম, সয়াসস

কপার: চিংড়ি, বাদাম, ইস্ট

আয়োডিন: সামুদ্রিক খাদ্য, আয়োডিনযুক্ত লবণ 

ম্যাগনেসিয়াম: মধু, কাঠবাদাম, সামুদ্রিক মাছ, আনারস, নানা পদের শাক

আয়রন: কলা, মিষ্টি আলু, ডিম, মাংস, নানা পদের শাক

ম্যাঙ্গানিজ: সিরিয়াল, হোল গ্রেইন, বাদাম, তেল, নানা রকমের শাক

সোডিয়াম: লবণ, পনির, দুধ, সয়াসস

সালফার: পনির, দুধ, বাদাম, শালগম, পেঁয়াজ, মাছ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, ব্রকলি

ফসফরাস: মাশরুম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, মাছ, শিম, গাজর। 

পটাশিয়াম: পালং শাক, আপে, কমলা, কলা, টমেটো, লেবু, আনারস, মাশরুম, ডুমুর ইত্যাদি 

মলিবডেনাম: বাদাম, শাক-সবজি, সিরিয়াল

সেলেনিয়াম: সামুদ্রিক খাবার, কলিজা 

জিংক: গরুর মাংস, চিনা বাদাম, কাঠ বাদাম, মুরগীর মাংস, ডাল 

নিকেল: কোকো, সয়াবিন, কাঠবাদাম, চিনা বাদাম 

মিনারেল টক্সিসিটি

অনেক সময় দেখা যায়, আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে কোনও একটি উপাদান গ্রহণ করে ফেলি। এই অতিরিক্ত গ্রহণ, কম পরিমাণ গ্রহণ অপেক্ষা কোনও অংশে কম ক্ষতিকর না। এই পরিস্থিতিকে মিনারেল টক্সিসিটি বলে। যেমনঃ ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সোডিয়ামের পরিমাণের উপরে নির্ভর করে রক্তচাপের মাত্রা কিংবা অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ ডায়রিয়া, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা জন্ম দিতে পারে। 

পরিশেষে, সুষম খাবার আমাদেরকে এই সকল উপাদানের ঘাটতি থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তবে কোনো সমস্যা মনে হলে অবশ্যই আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকারের সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত না আর মন চাইলেই প্রেসক্রিপশনের চাইতে অধিক মেয়াদে এই সকল সাপ্লিমেট সেবন করাও উচিত না। কারণ আমাদের খাবার থেকেই আমরা এই উপাদানসমূহকে প্রয়োজনীয় মাত্রায় পেতে পারি।