পটাশিয়াম বা Potassium কি? পটাশিয়ামের প্রয়োজনীয়তা, উৎস, অভাব ও আধিক্যজনিত রোগ

পটাশিয়াম কি:

পটাশিয়াম বা Potassium একটি মৌলিক পদার্থ। সেই সাথে এটি একটি অতীব প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বা মিনারেল। এটি সাধারণত আমাদের রক্ত সংবহন সচল রাখতে এবং পেশীর সংকোচন প্রসারণে সহায়তা করে।

আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই সেগুলোর অনেক খাবারের মাঝেই Potassium আছে। আবার নিউট্রিশন সাপ্লিমেন্টেও এটি উপাদান হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের শরীরের ৯৮% পটাশিয়াম থাকে কোষের মাঝে, যার ভিতরে ৮০% থাকে মাংসপেশিতে এবং ২০% হাড়ের মাঝে। পটাশিয়ামের রাসায়নিক সংকেত হলো (K), কিন্তু এটি Vitamin-K এর সাথে কোনোভাবেই সম্পর্কিত না। 

প্রতিদিন কতটুকু পটাশিয়াম খাদ্যে থাকা উচিত:

প্রতিদিন আমাদের খাদ্যে ১৬০০ থেকে ২৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকা প্রয়োজন। তবে এই পরিমাণ নিয়ে মতভেদ আছে। এই পরিমাণ আমাদের প্রাত্যহিক খাবার থেকেই যোগান দেওয়া সম্ভব। তবে অনেকে প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টও নিয়ে থাকে। 

পটাশিয়ামের প্রয়োজনীয়তা: 

ইলেক্ট্রলাইটঃ

ইলেক্ট্রোলাইট হলো সেই সকল উপাদান যার মাঝে পজিটিভ বা নেগেটিভ চার্জ থাকে। এই চার্জ নানা রকমের কোষের কাজ শুরু করতে কিংবা বন্ধ করতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম আমাদের শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে থাকে। 

অসমোরেগুলেশন (osmoregulation):

আমাদের শরীরের মোট পানির ৪০% রয়েছে কোষের ভিতরে। অসমোসিস বা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের কোষ বাইরের সাথে পানি আদান প্রদান করে। নানা রকমের পুষ্টি সংবহনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অতিরিক্ত পানি বেড়িয়ে গেলে কোষ শুকিয়ে যেতে পারে, আবার বেশি প্রবেশ করলে কোষ ফেটেও যেতে পারে। পটাশিয়াম আমাদের কোষের ভিতরের অসমোরেগুলেশনে সাহায্য করে। 

নার্ভ সিগন্যাল সরবরাহ:

আমাদের শরীরের টিকে থাকার জন্য মস্তিষ্ক আর শরীরের সমন্বয় অত্যাবশ্যকীয় আর এটি হয়ে থাকে নার্ভ সিগন্যালের মাধ্যমে। একধরনের সিগন্যাল হলো নার্ভ ইমপালস (nerve impulse) । পটাসিয়ামের লেভেল কমে গেলে নার্ভ ইমপালস তৈরি হতে বাধা পায়। 

পেশী আর হার্ট সচল রাখতে:

আমরা পেশী সংকোচন কিংবা প্রসারণের মাধ্যমে নানা রকমের কাজ করে থাকি। পটাশিয়াম এই কাজে আমাদের সাহায্য করে থাকে। একই সাথে হার্ট এর সংকোচন প্রসারণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। 

এছাড়াও এই পুষ্টিপাদান আরও নানা রকমের কাজ করে থাকে। যেমন: 

  • উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। 
  • স্ট্রোকের আশংকা কমায়।
  • অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। 
  • কিডনির পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। 
  • শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে দেয় না । 

পটাশিয়ামের উৎস:

দৈনন্দিন জীবনের আমরা যেসব খাবার খেয়ে থাকি তার মাঝে এমন কিছু খাবার আছে যার মাঝে এই পুষ্টিপাদানটি অধিক হারে আছে। 

  • কলা
  • পালং শাক 
  • মিষ্টি আলু
  • এভোকাডো
  • আলু
  • মটরশুঁটি 
  • ব্রকলি
  • দুধ
  • গাজর
  • দই ইত্যাদি

পটাশিয়ামের অভাবজনিত রোগ: 

নানা কারণে শরীরে পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে যার মাঝে রয়েছে ডায়রিয়া, অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া, বমি, অতিরিক্ত ঘাম  ইত্যাদি। কারণ যাই হোক এর পরিমাণ কমে গেলে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রক্তে এই উপাদান কমে গেলে একে হাইপোক্যালেমিয়া (Hypokalemia) বলে। 

  1. কোষ্ঠকাঠিন্য 
  2. দুর্বলতা
  3. পেশীতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম জোর পাওয়া। 
  4. মাত্রাতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া
  5. Glucose intolerance  
  6. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  7. অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন 

পটাশিয়ামের আধিক্যজনিত রোগ: 

শরীরে এই উপাদান কমে গেলে যেমন ক্ষতি, বেড়ে গেলে ঠিক একইভাবে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। রক্তে এই উপাদান বেড়ে গেলে একে হাইপারক্যালেমিয়া (Hyperkalemia) বলে।

  1. ডায়রিয়া
  2. বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া
  3. পেট ব্যথা এবং অস্বস্তি
  4. প্রচণ্ড দুর্বল লাগা
  5. পা ভার ভার হয়ে যাওয়া
  6. বিভ্রান্তি
  7. ব্যাখ্যাতীত দুশ্চিন্তা  

একই সাথে যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তাদের কিডনি ঠিক মতো একে ফিল্টার করতে পারে না। তাই সাপ্লিমেন্ট কিংবা খাদ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। 

পরিশেষে, পটাশিয়াম এমন একটি মিনারেলস যা আমদের শরীরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে থাকে। এটি এমন একটি উপাদান যা ছাড়া আমাদের শরীরবৃত্তীয় কাজ একটা দিন চালানোও অসম্ভব। আবার অতিরিক্ত পরিমাণ সৃষ্টি করতে পারে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা। তাই, খাবার গ্রহণের সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন এই পুষ্টিপাদানের ভারসাম্য বজায় থাকে।