ফুড সাপ্লিমেন্ট বা ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট কি?
ভালো থাকার একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ভালো এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় নিয়মমাফিক খাবার গ্রহণের পরেও আমাদের অনেক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়ে যায়। এটি পরবর্তীতে আমাদের নিয়ে যায় নানা প্রকারের শারীরিক সমস্যার দিকে। এই সময়ে আমরা বাহ্যিকভাবে কিছু উপাদান নিয়ে থাকি যা খাবারের পাশাপাশি গ্রহণ করা হয়। এগুলোই হলো ফুড সাপ্লিমেন্ট বা ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট।
ভিটামিন আর মিনারেলস হলো এমন কিছু উপাদান যার কাজ গণনা করে শেষ করা যাবে না। হাড়ের গঠন থেকে শুরু করে শিশু বিকলাঙ্গতা রোধ- কোনও কিছুতেই এদের গুরুত্ব বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এরাই আমাদের সুস্থ থাকার পর্দার পেছনের কারিগর। কিন্তু আমাদের শরীরে অবস্থা এবং খাদ্যের ধরণে পরিবর্তনের কারণে দেখা যাচ্ছে অনেক পুষ্টি উপাদানই আমাদের কাছ থেকে অধরা থেকে যাচ্ছে যার ফলে ঘাটতি থেকে যায়। এই ঘাটতি মেটাতে food supplement এর বিকল্প নেই।
আমরা বাচ্চাদেরকে সিভিট নামের যে ভিটামিন সি ট্যাবলেট দেই অথবা ত্বকের যত্নে Vitamin E ক্যাপস্যুল কিংবা পানিশুণ্যতাতে যে ওরাল স্যালাইন পান করি তার সবই সাপ্লিমেন্ট এর উদাহরণ।
ফুড সাপ্লিমেন্টের উপকারিতা
অনেক সময় এমন অনেক ফুড সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় যা মিশ্রণ হিসেবে, আবার কিছু রয়েছে যা এককভাবে কমার্শিয়ালি পাওয়া যায়। কোনও একটি নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে একক ফুড সাপ্লিমেন্টগুলো আমরা ব্যবহার করে থাকি। যেমন: আয়রনের ঘাটতির জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্ট ব্যাবহার করা হয়।
আবার দেখা যায়, অনেক সময় নানা রকমের পুষ্টি উপাদানের মিশ্রণ সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যেমন: আর্থ্রাইটিস এর চিকিৎসায় ক্যালসিয়াম ও Vitamin D একসাথে দেওয়া হয়।মাল্টি ভিটামিন ,ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ওরস্যালাইন, ইলেক্ট্রেলাইটিক ড্রিংক্স ইত্যাদিতে একাধিক ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে। এতে করে আমরা এক সাথে অনেকগুলো উপাদান পেয়ে যেতে পারি।
এমন অনেক সাপ্লিমেন্ট আছে যা ভেষজ, সরাসরি প্রাকৃতিক ভাবে সংগ্রহ করা হয় আবার কিছু কিছু সাপ্লিমেন্ট এমনও আছে যা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়। স্পিরুলিনা সাপ্লিমেন্ট, ক্লোরেলা সাপ্লিমেন্ট, মোরিঙ্গা পাউডার ইত্যাদি সাপ্লিমেন্টও ইদানীং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
Food Supplement অপকারিতা:
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। ফুড সাপ্লিমেন্টও এর ব্যতিক্রম নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে পুষ্টি উপাদানের আধিক্য দেখা দেয়। এতে শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বেড়ে যায়, ভিটামিন ই বেড়ে গেলে রক্ত পাতলা হয়ে যায়, অনেক মিনারেল যেমন সেলেনিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে টক্সিসিটি তৈরি হতে পারে।
কখন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন?
- যাদের অপুষ্টি রয়েছে তাদের অভাবজনিত সাপ্লিমেন্ট নেওয়া প্রয়োজন
- গর্ভবতী নারীর ফলিক এসিড প্রয়োজন
- যে মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তার ফলিক এসিড ও ভিটামিন ডি প্রয়োজন পড়তে পারে।
- ভিগান লাইফ স্টাইল যারা মেনে চলছেন তাদের ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি১২ এর অভাব তৈরি হতে পারে
- শিশুদের নানা রকমের ভিটামিন যেমন এ,বি,সি ও নানা রকমের মিনারেলস যেমন: আয়রন এর অভাব দেখা দিতে পারে।
- বয়স্ক মানুষের বার্ধক্য জনিত ভিটামিন ও মিনারেলস এর অভাব থাকতে পারে।
- যারা টানা এন্টিবায়োটিক সেবন করছেন তাদের মাল্টি ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
ফুড সাপ্লিমেন্ট কেন প্রয়োজন?
১. ডিটক্সিফিকেশন:
আমরা প্রতিদিন নানা রকম টক্সিনের সংস্পর্শে আসছি। কৃত্রিম সার থেকে শুরু করে কীটনাশক কিংবা GMO শস্য প্রতিটা ক্ষেত্রেই নানা রকমের টক্সিন আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। এসব টক্সিন ডিটক্সিফিকেশনের জন্য ডিটক্স সাপ্লিমেন্ট এর চাহিদা বাড়ছে।
২. জাঙ্ক ফুড গ্রহন:
খাবারের নামই যেখানে জাঙ্ক ফুড সেখানে এই সকল খাবারের পুষ্টিমান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। দিন যত বাড়ছে ততই আমাদের এই সব খাবার গ্রহণের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সকল খাবার আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে দূরে রাখে। এ সকল কারণে ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টের চাহিদাও বাড়ছে।
৩. GMO এর ব্যবহার:
জেনেটিক্যালি মোডিফাইড ক্রপ বা GMO এর ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। অধিক উৎপাদনের আশায় এই সকল শস্যের ব্যবহার বাড়লেও এতে পুষ্টিমান সাধারণভাবে ফলানো শস্যের মত না। তাই ভিটামিন ও মিনারেলস এর স্বল্পতা বেড়েই চলেছে।
৪. বয়স বৃদ্ধির কারণে:
ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পিছনে অন্যতম কারণ হলো বয়স। বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের অনেক উপাদান শোষণের ক্ষমতা কমতে থাকে। সেজন্য আলাদা করে এই সকল উপাদান সেবন করতে হয়।
৫. অধিক পরিশ্রম করলে:
যারা কঠোর পরিশ্রম করেন তাদের প্রচুর পরিমাণে শক্তি খরচ হয়। এজন্য তাদের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সেসময় ফুড সাপ্লিমেন্ট এই ঘাটতি রোধের একটি মাধ্যম হতে পারে।
পরিশেষে, ফুড সাপ্লিমেন্ট আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হতে পারে যদি আমরা কোনো কিছুর অভাবে ভুগতে থাকি, তবে ডাক্তার কিংবা নিউট্রিশনিস্ট এর পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ও মিনারেলস এর ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত না। তবে গ্রিন পাউডার সাপ্লিমেন্ট, ফার্মান্টেটেড সাপ্লিমেন্ট, প্রোবায়োটিক, ডিটক্স ইত্যাদি মাত্রা অনুযায়ী গ্রহণ করা যেতে পারে।
কিন্তু যদি আমরা সুস্থ থাকি, সচল থাকি তবে আমাদের উচিৎ খাবার থেকেই আমাদের পুষ্টি উপাদানসমূহ গ্রহণ করা।