ফলিক এসিড (Folic Acid):
ফলিক এসিড হলো এক ধরণের ভিটামিন বি (Vitamin B). এটি ভিটামিন বি৯ (Vitamin B9) এর অন্তর্ভুক্ত। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন রকমের জটিলতা, শিশু বিকলাঙ্গতার হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই এসিডের ব্যাপক ব্যবহার আছে। অনেক খাবারেই এটি পাওয়া যায়, আবার অনেক ক্ষেত্রে নানা রকমের খাবারে এই উপাদান আলাদা করে যুক্ত করা হয়। ফলিক এসিড ভিটামিন বি৯ এর আরও একটি ধরণ- ফলেটের (Folate) সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং দুইটির অভাবেই ফলেট ডেফিসিয়েন্সি (Folate Deficiency) হয়ে থাকে।
প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলার দৈনিক ফলিক এসিড গ্রহণের পরিমাণ ৪০০ মাইক্রোগ্রাম। একজন গর্ভবতী এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর প্রতিদিন প্রয়োজন ৬০০ ও ৫০০ মাইক্রোগ্রাম। যারা নিয়মিত এলকোহল গ্রহণ করে থাকেন তাদেরও দৈনিক ৬০০ মাইক্রোগ্রাম হারে এই ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত।
ফলিক এসিডের উৎস:
বিভিন্ন রকমের খাবারে প্রাকৃতিক-ভাবেই ফলিক এসিড আছে। যেমন:
- পালং শাক
- ব্রোকলি
- এসপারাগাস
- শিমের বিচি
- সূর্যমুখীর বিচি
- সামুদ্রিক মাছ
- কলিজা
- ঢেঁড়স ইত্যাদি
ফলিক এসিডের কাজ:
ফলেট এবং ফলিক এসিড শরীরে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। যেমন:
১। এরা আমাদের শরীরে ডিএনএ (DNA) ও আরএনএ (RNA) তৈরিতে সহায়তা করে।
২। ভ্রূণ, টিস্যু আর কোষের বিকাশে সাহায্য করে যা ভ্রূণ, শিশু ও কৈশোরে যখন শরীরের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি থাকে সেসময়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩। এটি ভিটামিন বি১২ এর সাথে মিলে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
৪। Iron যেন শরীরে ভালো মতো কাজ করতে পারে তার পরিবেশ তৈরিতে ফলিক এসিড গুরুত্বপূর্ণ
৫। এরা ভিটামিন বি৬ এবং বি১২ এর সাথে মিলে রক্তে এমাইনো এসিড হোমোসিস্টেইনের (Amino Acid Homocysteine) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৬। বার্ধক্যজনিত শ্রুতি-হ্রাসের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ফলিক এসিড কাজ করে।
৭। বেশ কিছু ধরণের ক্যান্সারে বাধা প্রদান করে, এর ভিতরে রয়েছে কোলোন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, সারভাইক্যাল ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, স্টোমাক ক্যান্সার।
এছাড়াও এই উপাদানের স্বল্পতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সাল থেকে আইনের আওতায় রুটি, আটা, বেকারি-জাত খাবার, পাস্তা ইত্যাদিতে এই এসিড আলাদা করে যুক্ত করা হচ্ছে।
যেসব কারণে ফলেট ঘাটতি হতে পারে:
১। অতিরিক্ত এলকোহল পান করলে শরীরে ফলেট শোষণ কমে যায়।
২। অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করলে শরীর অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এটি গ্রহণ করতে পারে না।
৩। গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড প্রয়োজন হয়। তাই অনেক ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪। হজম জনিত অসুখ কিংবা IBS (Involuntary Bowel syndrome) থাকলে এই পুষ্টি-উপাদানের অভাব দেখা যেতে পারে।
৫। জিনগত সমস্যার জন্য অনেকে জন্মগত ভাবেই ফলেট শোষণ করতে পারে না।
ফলেট ঘাটতি হলে যে ধরণের সমস্যা হতে পারে:
- সন্তান ধারণে জটিলতা
- বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হওয়া
- গর্ভপাত
- অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
- দুর্বলতা
- চেহারা ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া
- চুল পড়া
- মনোযোগের অভাব
- শ্বাসকষ্ট
- রক্ত স্বল্পতা
- জিঞ্জিভাইটিস ইত্যাদি
ফলেট টক্সিসিটিঃ
ফলেট টক্সিসিটি হলো সেই অবস্থা যখন আমাদের শরীরে ফলিক এসিড এবং ফলেটের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। ফলেট ডিফিসিয়েন্সির মতো ফলেট টক্সিসিটিও বিপদজনক। মাতারিক্ত পরিমাণে একটা লম্বা সময় যদি গ্রহণ করা হতে থাকে তাহলে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রে এটি অপরিবর্তনীয় ক্ষতি সাধন হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য সমস্যার ভিতরে রয়েছেঃ
- ডাইরিয়া
- বিভ্রম
- আচরণগত পরিবর্তন
- খিঁচুনি
- ত্বক সংবেদনশীল হয়ে উঠা, ইত্যাদি
দৈনিক ০.৮ থেকে ১ মিগ্রা এর বেশি ফলিক এসিড নিয়মিত গ্রহণ করলে ক্যান্সার, হার্ট এটাক ও খিঁচুনির ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু এন্টিবায়োটিক আছে যেগুলো এর সাথে বিক্রিয়া করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ফলিক এসিড গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে। সঠিক পরিমাণে গ্রহণ যেমন আমাদের শরীকে সুস্থতা এবং অনাকাঙ্কিত শারীরিক জটিলতা থেকে দূরে রাখছে, ঠিক একই সাথে অতিরিক্ত পরিমাণ আমাদের স্বাস্থ্যঝুকির দিকেও নিয়ে যেতে পারে।