গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা Glycemic Index কি?
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা Glycemic Index হলো এমন একটি তালিকা যা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার কত দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়াচ্ছে আর কি পরিমাণে বাড়াচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে ঐ খাবার গুলোর মধ্যে ক্রম বা Ranking তৈরি করে।
আরও একটি বিষয় এই ক্রম তৈরি করার সময় নজরে রাখা হয়, তা হলো সুগার লেভেল বাড়ার পেছনে খাবারটি নিজে নিজেই কতটা ভূমিকা রাখছে। অর্থাৎ অন্য খাবারের সাহায্য ছাড়া ব্লাড সুগার কত বাড়িয়ে তোলে।
জিআই নাম্বার কি?
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর ক্রম করার জন্য প্রতিটা খাবারকে একটি নাম্বার দেওয়া হয়। একে বলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নাম্বার বা GI Number. এই GI Number এর উপরে ভিত্তি করে তিনটা আলাদা ভাগে খাবারকে ভাগ করা হয়:
- লো জিআই নাম্বার (Low GI Number) - ৫৫ থেকে কম
- মিডিয়াম জিআই নাম্বার (Medium GI Number) - ৫৬ থেকে ৬৯
- হাই জিআই নাম্বার (High GI Number) - ৭০ থেকে ১০০
High GI Number সমৃদ্ধ খাবার রক্তে দ্রুত স্যুগার এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এটি আমাদেরকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর দিকে ধাবিত করে, হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়।
কিছু খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তালিকা
একেক খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নাম্বার একেক রকম। এই নাম্বারের উপরে ভিত্তি করে আমরা নানা রকম অসুখ বিসুখে কি ধরণের খাবার গ্রহণ করবো তা ঠিক করতে পারি। নিচে কিছু খাবারের Glycemic Index দেওয়া হলো। তবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণার পরিস্থিতিভেদে এই নাম্বার কম বেশি হতে পারে।
খাবারের নাম | জিআই নাম্বার |
আপেল | ৩৬ |
স্ট্রবেরি | ৪১ |
খেজুর | ৪১ |
আনারস | ৫৯ |
তরমুজ | ৭১ |
গাজর (সিদ্ধ) | ৩৯ |
আলু (সিদ্ধ) | ৭৮ |
মিষ্টি কুমড়া (সিদ্ধ) | ৭৪ |
সয়াবিন | ১৬ |
মটরশুঁটি | ২৮ |
সয়া মিল্ক | ৩৪ |
দুধ | ৩৯ |
মধু | ৬১ |
চিনি | ৬৫ |
মিল্ক চকলেট | ৪২ |
ডার্ক চকলেট | ২৩ |
আটার রুটি | ৬২ |
সাদা চালের ভাত | ৭৩ |
বাদামি চালের ভাত | ৬৮ |
কাচা কলা | ৭০ |
পাকা কলা | ৫২ |
Low GI মানেই ভালো, আর High GI মানেই খারাপ?
না, ব্যাপারটা আসলে এমন না। কোন খাবার ভালো কিংবা খারাপ তা বের করার জন্য গ্লাইসেমিক ইনডেক্স করা হয় নি। যেমনঃ মিষ্টি কুমড়া এর GI Number চকলেট থেকে বেশি। কিন্তু মিষ্টি কুমড়া একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে। অপরদিকে চকলেটে এই ধরণের পুষ্টিগুণ খুব কম। এমন আরো একটি উদাহরণ দেওয়া যায়, লো জিআই নাম্বার রয়েছে যেমন আরেকটি উপাদান হলো ক্যাফেইন। যা অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
আবার একটি খাবার রান্নার সময় কি কি মশলা এর সাথে যোগ করা হচ্ছে কিংবা এটি কি উপায়ে রান্না হচ্ছে এর উপরেও খাদ্যমান নির্ভর করে। আমরা Glycemic Index মেনে চলবো যেন সব রকমের খাবারের মাঝে সমন্বয় নিয়ে আসতে পারি এবং শারীরিক সমস্যার সময় খাবার বেছে চলতে পারি। অনেক সময় কি দিয়ে একটি খাবার প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে এর উপরে নির্ভর করে খাবারটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নাম্বার কম-বেশি হতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে Low GI খাবার
যেসব খাবারে GI Number কম সেসব খাবারে শর্করা কম থাকে, এবং এগুলো রক্তে সুগার লেভেল কম রাখে। এসব খাবার একটা লম্বা সময় পেট ভরা রাখার অনুভূতি দিতে পারে। যে কারণে খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। ফলে এই ধরণের খাবার ওজন কমানোর জন্য উপকারী হতে পারে।
সুস্থতা বজায় রাখার জন্য আমাদের উচিত Glucose জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। তাই এই ধরণের খাবার গ্রহণের সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন মাত্রা বেশি না হয়ে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় একদমই শর্করা না খাওয়ার কারণে রক্তে স্যুগার লেভেল মাত্রাতিরিক্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় কোন খাবার দ্রুত রক্তে স্যুগারের পরিমাণ বাড়াতে পারবে তা জানার জন্য জিআই নাম্বার দেখে খাবার নির্বাচন করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে Glycemic Index এর গুরুত্ব
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়াবেটিস এর জন্য উপকারী। সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অন্যতম একটি সমস্যা। হাই জিআই নাম্বার সমৃদ্ধ খাবার রক্তে সুগার লেভেলকে বাড়িয়ে দেয়। তাই যেসব খাবারে জি আই নাম্বার বেশি থাকে সে খাবারগুলো এড়িয়ে চলে ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তের সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আমাদের ডায়েট প্ল্যান, সুস্থ থাকা ইত্যাদির জন্য খুবই উপকারী একটি তালিকা। সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ ডায়েট প্ল্যান বানানোর ক্ষেত্রে এটি অনেকগুলো নিয়ামকের মধ্যে একটি হতে পারে। তবে শুধুমাত্র GI Number এর উপরে নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়ত ভালো সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। সেজন্য আমাদের উচিত খাবার এবং পুষ্টির নানা রকমের নিয়ামকগুলো জানা। সুষম খাবার সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা নিয়ে আসা আর আমাদের শরীরের চাহিদা অনুসারে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।