ট্রান্স ফ্যাট বা Trans Fat কি? ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার এবং এটির ক্ষতিকারক দিক

আমরা প্রতিদিন যে সকল খাবার গ্রহণ করে থাকি তার ভিতরে স্নেহ জাতীয় খাবার অন্যতম। কিন্তু এই ধরণের খাবারের মাঝে এমন এক ধরণের খাবার রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ট্রান্স ফ্যাট হলো সেই ধরণের খাবার।

ট্রান্স ফ্যাট বা Trans Fat কি?

আমরা যখন ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার নিয়ে কথা বলি তখন স্বাভাবিকভাবেই একটি নাম আমাদের সামনে চলে আসে, তা হলো Trans Fat। ট্রান্স ফ্যাট নাম থেকে বুঝা যাচ্ছে এটি হলো ট্রান্সফর্মড ফ্যাট বা পরিবর্তিত চর্বি। নানা রকমের শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাবারকে যখন কৃত্রিম উপায়ে চর্বি জাতীয় পদার্থে পরিবর্তিত করা হয় তখন ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। 

এই ব্যাপারটি অনস্বীকার্য যে এই ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য অবর্ণনীয় ক্ষতি নিয়ে আসে। সেজন্য নানা রকমের সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ও সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্ঠায় প্রাত্যহিক জীবনে Trans Fat গ্রহণের পরিমাণ অনেক কমে আসলেও আমাদের সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।

ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার এবং খাবার

সাধারণত দুইটি আলাদা উৎস থেকে এই Trans Fat আমরা পেয়ে থাকি।

১. প্রাকৃতিকভাবে ডেইরি প্রডাক্ট ও মাংস থেকে

২. কৃত্রিম উপায়ে ফ্যাক্টরি থেকে। 

প্রাকৃতিক উপায়ে রুমিনেন্ট জাতীয় পশু যেমন, গরু, ছাগল ইত্যাদির দুধে এবং মাংসে ট্রান্স ফ্যাট থাকে। তবে সাধারণ উপায়ে রান্না করে গ্রহণ করলে এগুলো এতটা ক্ষতিকর নয়।

কৃত্রিম উপায়ে তৈরিকৃত Trans Fat নিয়ে আমাদের খুবই সতর্ক থাকা উচিৎ। যেমন: হাইড্রোজিনেটেড ভেজিটেবল ওয়েল। এর মাঝে রয়েছে ট্রান্সফর্মড পাম ওয়েল, ডালডা ইত্যাদি। এগুলোর ক্ষেত্রে ভেজিটেবল ওয়েলের রাসায়নিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়, এতে করে রুম টেম্পারেচারেও (২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এগুলো তরল অবস্থায় থাকে না।

তাছাড়া নানা রকমের প্রসেসড খাবারে Trans Fat থাকে। আমরা যে ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকি তাতেও প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট থেকে। আমাদের দেশে অনেকে প্রাণীজ চর্বি নানা রকমের রান্নার কাছে ব্যবহার করে থাকে এটিও ট্রান্স ফ্যাটের একটি উৎস। 

ট্রান্স ফ্যাট এর ক্ষতিকর দিক

ট্রান্স ফ্যাটের ক্ষতির তালিকা বিশাল। এটি নিয়ে প্রয়োজন বিস্তর আলোচনা। নিচে এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো:

হার্টের ক্ষতি:

সাধারণ ফ্যাটের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা LDL ও HDL দুই রকমের কোলেস্টেরলই বৃদ্ধি করে থাকে। কিন্তু Trans Fat বৃদ্ধি করে শুধু LDL এর পরিমাণ। একই সাথে এই ধরণের ফ্যাট লিপোপ্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। LDL ও লিপোপ্রোটিন আমাদের হার্টের জন্য ক্ষতিকর। 

 ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি ও ডায়াবেটিস:

ডায়াবেটিস আর Trans Fat এর মাঝে সম্পর্ক আছে। এটা জানা যায় কিন্তু কি কারণে এটির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে তা জানা যায় না । প্রায়, ৮০০০০ নারী অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে করা একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে Trans Fat গ্রহণকারীরা ডায়াবেটিস এর ঝুঁকিতে আছেন অন্যান্যদের থেকে ৪০% বেশি। অতিরিক্ত Trans Fat ইনসুলিন ও গ্লুকোজ এর কাজে বাধা প্রদান করে। 

ইনফ্লেমেশন:

ইনফ্লেমেশন আমাদের শরীরে নানা রকমের ক্রনিক ডিজিসের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে মোটা ও স্থুলদেহের অধিকারীদের অতিরিক্ত ইনফ্লেমেশন সমস্যার জন্য Trans Fat দায়ী। 

রক্তনালিকার ক্ষতি:

ট্রান্স ফ্যাট রক্তনালিকার ভিতরের ঝিল্লির ক্ষতি করে থাকে। ৪ সপ্তাহ ধরে চলা একটি গবেষণায় যেখানে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের জায়গায় ট্রান্স ফ্যাটকে প্রতিস্থাপন করা হয় সেখানে দেখা যায় ২১% পর্যন্ত HDL কমে যায় এবং আর্টারির পরিধি কমে আসে প্রায় ২৯% পর্যন্ত। 

ক্যান্সারের ঝুঁকি:

নার্সেস হেলথ স্টাডির গবেষণা মতে, মেনোপজের আগে অতিরিক্ত Trans Fat গ্রহণ মেনোপজের পরে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

ট্রান্স ফ্যাট থেকে দূরে থাকার উপায়

এই ফ্যাট থেকে দূরে থাকাটা একটু কঠিন। সাধারণত খাবারের গায়ে উপাদানের নির্দেশিকা দেওয়া থাকে, এই নির্দেশিকা দেখে এমন খাবার বেছে নেওয়া প্রয়োজন যাতে হাইড্রোজিনেটেড উপাদান নেই। 

অনেক সময় নির্দেশিকা দেখেও সমস্যা থেকে যায়। নানা রকমের ভেজিটেবল অয়েলও প্রসেসিং এর সময় Trans Fat তৈরি করে যা নির্দেশিকায় দেওয়া থাকে না। 

  • প্রসেসড খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অত্যাদিক তাপমাত্রায় তেল জাতীয় এবং প্রাণীজ চর্বি জাতীয় খাবার রান্না করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • ভাজাপোড়া খাবার যেমন ফ্রাইড চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • প্যাকেটজাত খাবারের উপরের উপাদানের নির্দেশিকা দেখে খাবার কিনতে হবে। 

Trans Fat আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কৃত্রিম ট্রান্স ফ্যাট হার্টের সমস্যা, স্থূলতা, ডায়াবেটিস সহ নানা রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত। তাই আমাদের এদের সম্পর্কের সতর্ক থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর স্নেহ জাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।