সেরোটোনিন বা Serotonin কি? সেরোটোনিনের কাজ এবং বৃদ্ধির খাবার

সেরোটোনিন হলো এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্র তৈরি করে। এটি মানবদেহের “Feel Good Chemical” গুলোর একটি। এটি শরীরে নানা রকমের কাজ করে থাকে। যার মধ্যে স্মৃতি ধরে রাখা, মন ভালো রাখা এবং রুচি ঠিক রাখা অন্যতম। 

সেরোটোনিন বা Serotonin কি? 

সেরোটোনিন বা  Serotonin হলো একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা রাসায়নিক বার্তা সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করে এবং স্নায়ু কোষগুলোর মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করে। এটি একই সাথে 5-hydroxytryptamine (5-HT) নামেও পরিচিত।

এটি মানবদেহে হরমোনের মতো কাজ করে বলে অনেকে এটিকে একটি হরমোন হিসেবে গণ্য করে থাকেন। কিন্তু গাঠনিক দিক থেকে এটি হরমোন নয়।

এই  নিউরোট্রান্সমিটারটি স্নায়ুতন্ত্র, অন্ত্র এবং রক্তের প্লাটিলেটেও উপস্থিত থাকে এবং বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন ঘুম, মুড এবং অন্ত্রের কার্যক্রমে সহায়তা করে। 

উৎপত্তিস্থল এবং নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে যেভাবে কাজ করে: 

Serotonin আমাদের মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System, CNS) থেকে কিছু পরিমাণে তৈরি হলেও এর প্রায় ৯০ শতাংশ পরিমাণই পাওয়া যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে। উৎপত্তিস্থল অনুসারে এই রাসায়নিক পদার্থটির কাজের পরিধি অনেক ব্যাপক এবং স্থানভেদে অনেক আলাদা। 

যখন Neuron সেরোটোনিন ক্ষরণ করে, তখন এটি সামান্য পথ অতিক্রম করে পরবর্তী আরেকটি স্নায়ুর সংযোগস্থলে (Synapse) যুক্ত হয়। এই সময় এটি পূর্ববর্তী স্নায়ু থেকে প্রাপ্ত তথ্য পরবর্তী নিউরনকে দিয়ে দেয়। এভাবে সেরোটোনিন নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। 

সেরোটোনিনের কাজ 

সেরোটোনিন আমাদের দেহে নানা রকমের কাজ করে থাকে। নিচে এমন কিছু কাজ দেওয়া হলো: 

  1. মানসিক প্রশান্তি প্রদানে: সেরোটোনিন আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত করে, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কা কমায়। আনন্দের অনুভূতি তৈরিতে সাহায্য করে। 
  2. পরিপাক ক্রিয়ায়: ক্ষুদ্রান্ত্রে এই নিউরোট্রান্সমিটার খাবার হজম করতে ও রুচি ধরে রাখতে সাহায্য করে। 
  3. ঘুম আনায়নে: মেলাটোনিনের সহায়তাকারী হিসেবে এটি ঘুম-জাগরণের চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  4. অন্যান্য: এছাড়াও এর অন্যান্য কাজের মাঝে রয়েছে রক্ত জমাট বাধতে ও ক্ষয় পূরণে সাহায্য করা, হাড়ের ক্ষয়রোধ করা। 

স্বল্পতাজনিত সমস্যা: 

সেরোটোনিন এর পরিমাণ আমাদের শরীরে কমে গেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। এর ভিতরে রয়েছে: 

  • হতাশা
  • দুশ্চিন্তা
  • অনিদ্রা
  • হজমে সমস্যা
  • IBS - irritable bowel syndrome

সেরোটোনিনের পরিমাণ ঠিক রাখার খাবার: 

ডায়েট প্ল্যান শরীরের সেরোটোনিন এর পরিমাণকে ঠিক রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসকল খাবারে ট্রিপটোফেন (tryptophan) নামের এমাইনো অ্যাসিড রয়েছে সেই সকল খাবার সেরোটোনিন এর পরিমাণ ঠিক রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ট্রিপটোফেন সেরোটোনিন তৈরির জন্য অপরিহার্য।

নিচে ট্রিপটোফেন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো: 

  • টার্কির মাংস 
  • সামুদ্রিক মাছ 
  • ডিম
  • পালং শাক
  • বীজ ও বাদাম জাতীয় খাদ্য - কাজু বাদাম, সুর্যমুখীর বীজ
  • দুধ জাতীয় খাবার - মাখন, পনির, দুধ
  • ডার্ক চকলেট 

সেরোটোনিন ও লাইফ স্টাইল: 

আমাদের শরীরের অন্যান্য অনেক রাসায়নিক পদার্থের মতোই সেরোটোনিন এর ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের জীবন-যাপন প্রণালীর কিছু পরিবর্তন দরকার। প্রতিদিনের জীবনে কিছু কাজ আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে। নিচে এমন কিছু কাজ দেওয়া হলো: 

  1. শরীরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো লাগানো যেন  আমাদের সারকেডিয়ান রিদম (circadian rhythm ঠিক থাকে। 
  2. পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম ও শরীর চর্চা করা। পরিশ্রম সেরোটোনিন তৈরি করতে কোষকে উদ্দীপিত করে। 
  3. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো এবং বিশ্রাম নেওয়া।
  4. স্ট্রেস কমানোর জন্য প্রয়োজনে মেডিটেশন, ইয়োগা, এরোবিকস ইত্যাদির সহায়তা নেওয়া। 
  5. অ্যালকোহল না পান করা। ক্যাফেইন গ্রহণ যতটা সম্ভব কমিয়ে দেওয়া। 

প্রশ্নোত্তর: 

প্রশ্ন: শরীরে সেরোটোনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কি?

উত্তর: রক্তে সেরোটিনের মাত্রা মাপা সম্ভব কিন্তু মস্তিষ্কে কি পরিমাণে অবস্থান করছে তা মাপা সম্ভব না। রক্তে স্বাভাবিক মাত্রা ১০১ থেকে ২৮৩ ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার। 

প্রশ্ন: Feel Good Hormones কি কি? 

উত্তর: মুলত চারটি- Dopamin, Endonephrins (এড্রেনালিন), Oxytocin, Seratonin (হরমোন না)। 

প্রশ্ন: Seratonin Syndrome কি? 

উত্তর: এটি একটি মারাত্মক শারীরিক সমস্যা যা জীবনঘাতিও হতে পারে। Seratonin Syndrome প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না হলে কিডনি ফেইলিওর, খিঁচুনি, শ্বাস কষ্ট এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।