ডোপামিন বা Dopamine কি? ডোপামিন এর কাজ এবং ভারসাম্য রক্ষার উপায়

ডোপামিন মানবদেহের এমন একটি উপাদান যা একই সাথে নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন হিসেবে কাজ করে। এই হরমোন এর ক্রিয়া মানুষের আনন্দের অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত। যখন আমাদের কোনো কিছু ভালো লাগে তখন মস্তিষ্ক ডোপামিন ক্ষরণ করে যা আনন্দের অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে ঐ কাজটি আমরা পুনরায় করার আগ্রহ বোধ করি।

ডোপামিন বা Dopamine কি?

ডোপামিন বা Dopamine হলো মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে উৎপন্ন এমন এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার বা রাসায়নিক বার্তাবাহক যা অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার এর মতো স্নায়ু কোষের মধ্যকার যোগাযোগ রক্ষা করে এবং নার্ভ এর মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে তথ্য আদান প্রদানের কাজ করে থাকে। 

এটি এমন এক ধরণের নিউরোট্রান্সমিটার যা বিভিন্ন আনন্দ অনুভূতির সময় মস্তিষ্ক থেকে ক্ষরিত হয় এবং আনন্দের মাত্রাকে বাড়িয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যেন আমরা পুণরায় কাজটি করার আগ্রহ বোধ করি। 

ডোপামিন এর অপর নাম "Feel Good Chemical". কারণ এর প্রভাবে আমাদের আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়। এটি আমাদের মনে যে উদ্দীপনা তৈরি করে তাকে Reward Motivation Effect বলে।

উৎপত্তিস্থল

ডোপামিন মস্তিষ্কের substantia nigra, ventral tegmental area, এবং  hypothalamus অংশে উৎপন্ন হয়ে থাকে।

মস্তিষ্কের কেন্দ্রে দুটি ধাপে এই নিউরোহরমোন উৎপন্ন হয়। প্রথমত, অ্যামিনো অ্যাসিড টাইরোসিন এল-ডোপা নামে অন্য একটি  অ্যামিনো অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। এরপর এল-ডোপা আরেকটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে এনজাইম এটিকে ডোপামিনে পরিণত করে।

ডোপামিনের কাজ (Functions of Dopamine)

ডোপামিন আমাদের শরীরে স্নায়বিক এবং শারীরবৃত্তীয় নানা রকম কাজের সাথে জড়িত থাকে। এর ভিতরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিচে আলোচনা করা হলো:

১. উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি:

Dopamine মানবদেহে উৎসাহ তৈরি করে। এটি আমাদের মস্তিষ্কের “Reward System" এর একটি। যখন আমরা কোনো একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হই যা আমাদের ভালো লাগার অনুভূতি প্রদান করে কিংবা যা আমাদের জন্য একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হয় তখন মস্তিষ্কে এই হরমোন তৈরি হয়। যার ফলে আমরা ঐ কাজটি করার উৎসাহ বোধ করি।

২. চলাফেরা, নড়াচড়া:

এই নিউরোট্রান্সমিটার আমাদের শরীরের চলাফেরা নড়াচড়াতে সাহায্য করে। যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে Dopamine তৈরি হয় না, তাদের চলাফেরায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে অনেকে পার্কেনসন ডিজিসের মতো অসুখেও আক্রান্ত হতে পারে।

৩. মেজাজ মর্জি নিয়ন্ত্রণে:

এই হরমোন আমাদের মনকে সতেজ রাখে, শরীরকে চাঙ্গা রাখে। এর ফলে আমরা কাজের আগ্রহ বোধ করি, আমাদের কর্মউদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও নিম্নোক্ত শরীরের অনেক ফাংশনের সাথে এই নিউরোহরমোন জড়িত। যেমনঃ 

  • রক্ত প্রবাহ
  • হজম প্রক্রিয়া 
  • নির্বাহী কার্যক্রম
  • হার্ট এবং কিডনি ফাংশন
  • মনোযোগ এবং ফোকাস
  • মুড এবং আবেগ
  • ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ
  • অগ্ন্যাশয় ফাংশন
  • ঘুম
  • স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া

তবে মনে রাখতে হবে যে এই হরমোন একাই কাজ করছে না। এটি অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সেরোটোনিন ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের সাথে কাজ করে।

ডোপামিনের খারাপ প্রভাব

Dopamine হরমোনের অনেক ভালো দিক রয়েছে সত্য, কিন্তু এটি একই সাথে আমাদের জন্য খারাপ প্রভাবও বয়ে আনতে পারে। এই হরমোন ভালো ও খারাপের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না। তাই ভালো কিংবা খারাপ কাজের মাঝে এটি কোনো তফাত দেখে না। এমনও হতে পারে নেতিবাচক কোনো একটি কাজের প্রতি এটি আমাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেমন নানা রকমের নেশা ও প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতি আসক্তির পেছনেও ডোপামিনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে।

একই সাথে এটির পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আমাদের দৃষ্টিভ্রম ও মতিভ্রমও হতে পারে। এটির ভারসাম্যহীনতা অসংলগ্ন আচরণ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি ইত্যাদি সমস্যারও জন্ম দিতে পারে।

ডোপামিনের ভারসাম্য রক্ষায় যা খাওয়া উচিত

Dopamine যেহেতু একটি হরমোন সেহেতু এর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এর কম পরিমাণে উৎপাদন যেমন আমাদের জন্য খারাপ একই সাথে এর অতিরিক্ত পরিমাণও ভালো না। নিচে এমন কিছু খাবারের কথা বলা হলো যা এই হরমোনের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে:

১. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
Dopamine মূলত এক ধরনের প্রোটিন। এই কারণে প্রোটিন জাতীয় খাবার এই হরমোন উৎপন্ন করতে সাহায্য করতে পারে। যেমন: মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি।

২. ফল ও শাক সবজি:
ফল ও শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনমিনারেলস রয়েছে। এগুলো Dopamine তৈরিতে সাহায্য করে। যেমন: কলা, আনারস, সাইট্রাস জাতীয় ফল, সবুজ শাক, ব্রকলি ইত্যাদি।

৩. ডার্ক চকলেট:
ডার্ক চকলেট এই নিউরোট্রান্সমিটার এর মাত্রাকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

৪. প্রো-বায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার:
যে-সকল খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভালো ব্যাকটেরিয়া রয়েছে সেই সকল খাবার আমাদের শরীরে এর মাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে। যেমন: দই, ইয়োগার্ট ইত্যাদি। 

আমরা অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের শরীরের Dopamine এর মাত্রাকে কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু এটি করা উচিত না। কোনো একটি জিনিস থেকে দূরে থাকতে চাইলে এই হরমোনের মাত্রা কমানো নয় বরং মনের দিক থেকে দৃঢ় থাকার প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।