ফ্রি রেডিক্যাল বা Free Radical কি?
ফ্রি রেডিক্যাল হলো অক্সিজেনের সেই সব বিশেষ যৌগিক অনু যাতে একটি বিজোড় ইলেক্ট্রন রয়েছে। এই বিজোড় ইলেক্ট্রন আমাদের শরীরের নানা কোষ, নানা পুষ্টি উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে নানা শারীরিক সমস্যা এর জন্ম দেয়। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া, নার্ভ ও হার্টের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা Oxidative Stress কি?
আমাদের শরীরে এমন আরেকটি উপাদান আছে যা ফ্রি রেডিক্যালের বিপরীত। একে বলে এন্টি অক্সিডেন্ট। এরা ফ্রি রেডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এই দুই উপাদানের মাঝে অসমতাকে বলা হয় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
ফ্রি রেডিক্যাল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের সম্পর্ক
অক্সিডেশন শরীরে হবেই। এটি আমাদের শরীরকে ঠিক মতো পরিচালনা করার জন্যই দরকার। কিন্তু এর একটি ভারসাম্য প্রয়োজন। যখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয় তখনই এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে রূপ নেয় এবং আমাদের দেহে নানাবিধ সমস্যার জন্ম দেয়।
- ডায়াবেটিস।
- রক্তের শিরা উপশিরা শক্ত হয়ে যাওয়া।
- ইনফ্লামেশন সৃষ্টি।
- হাইপারটেনশন।
- হৃদরোগ।
- পারকিনসন’স ডিজিস।
- এলজাইমার’স ডিজিস।
- ক্যান্সার।
- চেহারায় বয়সের ছাপ সংক্রান্ত নানা সমস্যা।
- চুল পেকে যাওয়া ইত্যাদি
ফ্রি রেডিক্যাল বেড়ে যাওয়ার কারণঃ
এমন কিছু নিয়ামক রয়েছে যাদের প্রভাবে আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের আধিক্য দেখা দিয়ে তা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে রূপ নিতে পারে। এর কিছু কারন নিচে দেওয়া হলো।
- রেডিয়েশন
- কীটনাশক ও রাসায়নিক সার
- ধূমপান
- এলকোহল
- তেলে ভাজা খাবার
- স্থূলতা
- সুষম খাবারের অভাব
- কিছু ঔষধ সেবনে
- নানা প্রকারের দূষণের কারনে ইত্যাদি
ফ্রি রেডিক্যাল ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের প্রতিরোধঃ
কথায় বলে প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম। তাই একটা সমস্যা হয়ে যাওয়ার আগে যদি আমরা তাকে দূরে রাখতে পারি তবেই তা আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থে মঙ্গলজনক। বেশ কিছু এমন অভ্যাস রয়েছে যা আমাদের জন্য কোনো মঙ্গলই আনতে পারে, এসব থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। নিচে উপায় সমূহ দেওয়া হলোঃ
- সুষম খাবার খাওয়া।
- এমন খাবার গ্রহণ যাতে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে।
- ধূমপান না করা।
- এলকোহল গ্রহণ না করা।
- অর্গানিক খাবারের দিকে মনযোগ দেওয়া।
- ব্যায়াম করা।
- যতটা সম্ভব দূষণ ও রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।
আরোও পড়ুনঃ এন্টি-অক্সিডেন্ট
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি রেডিক্যাল কমানোর খাবার
সুষম খাবার আমাদের শরীরের নানা রকম উপাদানের চাহিদা ও ভারসাম্য রক্ষা করে। এই কারনে এই ধরণের সমন্বয়কে আমরা সুষম বলে থাকি। নিচে এমন কিছু খাবারের নাম দেওয়া হলো যেগুলো আমাদের শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যাল কমাতে সাহায্য করে।
- নানা রকমের বেরি ও সাইট্রাস জাতীয় খাদ্য
- গাঢ় সবুজ শাক
- ব্রকলি
- গাজর
- টমেটো
- জলপাই
- ভিটামিন ই এবং সি
- মাছ
- গ্রীন টি
- রসুন
- দারুচিনি ইত্যাদি
উপরের আলোচনা থেকে আমরা যা বুঝতে পারলাম, যদিও ফ্রি রেডিক্যাল ও এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের স্বাভাবিক উপাদান তবুও এদের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস যা আমাদের টিস্যুর ক্ষতি করে এবং কোনো ব্যবস্থা ছাড়া ফেলে রাখলে আরো বড় সমস্যার দিকেও নিয়ে যায়।
যদিও আমরা কোনোভাবেই ফ্রি রেডিক্যালের প্রভাবে আসা থেকে দূরে থাকতে পারবো না তবুও সুষম আহার, ব্যায়াম ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন আমাদেরকে এর প্রভাব কমিয়ে রাখতে এবং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করবে।