Phytonutrient বা ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কি? বিভিন্ন ধরণের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এর উদাহরণ

ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট বা Phytonutrient কি? 

ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট শব্দটিকে আমরা দুইটি ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমত, ফাইটো যার অর্থ উদ্ভিদের সাথে সম্পর্কিত আর দ্বিতীয়ত, নিউট্রিয়েন্ট যার অর্থ পুষ্টি উপাদান। দুইটা শব্দ একত্র করলে যা হয় তা হলো উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপাদান বা উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান

তবে আমরা উদ্ভিদ থেকে যে ভিটামিন ও মিনারেলস পেয়ে থাকি তা এই ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এর অন্তর্গত না। এদের মূল কাজ হলো উদ্ভিদকে নানা রকমের জীবাণু, কীট পতঙ্গ থেকে রক্ষা করে, কিছু আবার উদ্ভিদকে অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। নানা রকমের কাজে নিয়োজিত এই সকল ক্যামিকেলের সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। 

ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এর উদাহরণ

এদেরকে কিছু কিছু ভাগে ভাগ করা হয়। কিছু প্রকরণ হলো: 

  • ফ্লেভানয়েড
  • ক্যারোটিনয়েড
  • রেসভারেট্রল
  • ফাইটোএস্ট্রোজেন
  • ইলেজিক এসিড ইত্যাদি

১। ক্যারোটিনয়েড

প্রায় ৬০০ প্রকারের ক্যারোটিনয়েড রয়েছে যা গাছে নানা রঙের ফুল ও ফল দিয়ে থাকে। তবে এদের কাজ রংয়েই সীমাবদ্ধ না। এরা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেলের প্রভাব থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। 

  • আলফা ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন, বিটা ক্রিপটোজেন্থিন সহ নানা রকমের ক্যারোটিনয়েডের নানা রকমের উপকারিতা রয়েছে। এরা ভিটামিন এ তৈরিতে সাহায্য করে। 
  • লাইকোপেন নামের ক্যারোটিনয়েড প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। 

আলফা ও বিটা ক্যারোটিনের উৎস হলো মিষ্টি কুমড়া, আর বিটা ক্রিপটোজেন্থিন এর রেড পেপার। লাইকোপেনের উৎস হলো টমেটো। 

২। ফ্লেভানয়েডঃ

নানা রকমের উদ্ভিজ্জ ক্যামিকেল এই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। নানা রকমের শাক সবজি, ফল মূল থেকে আমরা এদের পেয়ে থাকি। 

  • ক্যাটেচিন পাওয়া যায় গ্রিন টি থেকে যা বেশ কয়েক রকমের ক্যান্সারকে প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • হ্যাসপারেডিন পাওয়া যায় নানা রকমের সাইট্রাস জাতীয় ফলে। এটি এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। 
  • নানা রকমের ফ্লেভানল পাওয়া যায় আপেল, পেয়াজ সহ নানা রকমের খাবারে। এগুলো এজমা, হার্টের অসুখ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। 

৩। রেসভারেট্রলঃ

আঙুরে প্রচুর পরিমাণে রেসভারেট্রল রয়েছ। এরা এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি। গবেষণায় এটিও সাব্যস্ত যে এই উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং প্রাণীদের আয়ু বৃদ্ধি করে। তবে মানুষের উপরে এ নিয়ে গবেষণা এখনো বাকি আছে। 

৪। ইলেজিক এসিড:

নানা রকমের বেরি ও বেরি জাতীয় ফলে ইলেজিক এসিড রয়েছে। এটি বেশ কয়েক ভাবে আমাদের শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

  • ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। 
  • লিভারকে সাহায্য করে ক্যান্সার কোষকে রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণে ধ্বংস করতে। 

এর উৎস হলো নানা রকমের বেরি যেমন: স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, বেদানা ইত্যাদি

৫। ফাইটোএস্ট্রোজেনঃ

এদের রাসায়নিক কাঠামোর জন্য এরা এস্ট্রোজেন এর মতো কাজ করে থাকে। হাড়ের ক্ষয় রোধে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার দমনে কাজ করে। নানা রকমের বীজ যেমন তিল ফাইটোএস্ট্রোজেনের উৎস। 

ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুকিঃ 

আমরা প্রয়োজনে নানা রকমের ফুড সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকি। কিন্তু ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এর ক্ষেত্রে তা আলাদা করে না নেওয়াটাই ভালো। সবচেয়ে উত্তম হলো এই উপাদানগুলো খাবারের সাথেই গ্রহণ করা। কারণ অনেকের ক্ষেত্রেই সাপ্লিমেন্ট এর মাধ্যমে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণের ফলশ্রুতিতে নানা রকমের এলার্জিক রিয়েকশন দিতে দেখা যায়। 

পরিশেষে, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এমন কোনো উপাদান না যা ছাড়া আমরা বাচতে পারবো না। কিন্তু খাবারের সাথে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট আমাদের ক্যান্সার, হৃদরোগ সহ নানা রকমের অসুখ থেকে বাচতে সাহায্য করে। তাই, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবার থাকা বঞ্চনীয়।