উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ কি?  রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখার উপায়

রক্তচাপ বা ব্লাডপ্রেসার কি? 

যে পরিমাণ বল বা শক্তি প্রয়োগের ফলে হৃদপিণ্ড থেকে আমাদের সারাদেহে রক্ত সরবরাহ হয়ে থাকে তাকে রক্তচাপ বলে।

ব্লাড প্রেসারের বা রক্তচাপের দুইটি পর্যায় আছে। 

  1. সিস্টোলিক প্রেসার: যখন আমাদের হার্ট বা হৃদপিণ্ড রক্ত বের করে দেয়।
  2. ডায়াস্টোলিক প্রেসার: যখন এক একটা হৃদ স্পন্দনের সময় আমাদের হৃদপিণ্ড বিশ্রাম গ্রহণ করে।

কারো ব্লাড প্রেসার ১২০/৮০ অর্থ হলো তার সিস্টোলিক প্রেসার ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৮০। 

আদর্শ রক্তচাপের মাত্রা: 

কোনও একটি মানুষের স্বাভাবিক Blood Pressure কত হবে তা আসলে মানুষ থেকে মানুষে পার্থক্য হতে পারে। তাই আমরা একটা পরিসীমা নির্ধারণ করি যেন এই মাত্রার ভিতরে থাকলে বলা যায় একটা মানুষের Blood Pressure স্বাভাবিক আছে নাকি নেই। 

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক ডায়াস্টোলিক প্রেসার ধরা হয় ৭০ থেকে ৯০ পর্যন্ত আর সিস্টোলিক ধরা হয় ১১০ থেকে ১৩০ পর্যন্ত। এর অর্থ কারো যদি ডায়াস্টোলিক ৯০ বা এর বেশি হয় কিংবা সিস্টোলিক ১৩০ এর বেশি হয় তবে তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। 

একই রকম ভাবে, কারো যদি ডায়াস্টোলিক ৭০ বা এর কম হয় কিংবা সিস্টোলিক ১১০ বা এর কম হয় তবে তার নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে। 

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কি? 

স্বাভাবিক মাত্রা থেকে কারো শরীরে যদি Blood Pressure এর মাত্রা বেড়ে যায় তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বলে।

রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, হৃদরোগ, অতিরিক্ত শর্করাচর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহন ইত্যাদি কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। একে হাইপার টেনশনও বলা হয়। 

নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার কি? 

স্বাভাবিক মাত্রা থেকে কারো শরীরে যদি Blood Pressure কমে যায় তবে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার বলে।

নিয়মিত আহার না করা, পানিশুন্যতা, হার্টের সমস্যা, অনেক ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াসহ নানা কারণে নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। একে হাইপোটেনশনও বলা হয়। 

ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখার উপায়:

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে হলে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়ম মেনে না চললে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হবে। নিচে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি দেওয়া হলো: 

১. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: 
অতিরিক্ত ওজন অনেকক্ষেত্রেই Blood Pressure বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে তার জন্য একজনের অবশ্যই তার শরীরের অবস্থা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের মাত্রা জেনে নিতে হবে। 

২. শারীরিক পরিশ্রম করা:
শারীরিক পরিশ্রম আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরিকে কমিয়ে দেয় আবার আমাদের হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও ব্যায়াম ও কায়িক শ্রমের বিকল্প নেই। 

৩. ভালো খাবার গ্রহণ:
যেসব খাবার আমাদের হৃদপিণ্ডের জন্য মঙ্গলকর সেই সকল খাবার আমাদের নিয়মিত খেতে হবে। এতে আমাদের শরীর উচ্চ ও নিম্ন দুই ধরণের সমস্যা থেকেই দূরে থাকবে। 

৪. লবণের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া:
খাবার লবণের সোডিয়াম আমাদের Blood Pressure এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে লবণের ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায়। তাই আমাদের উচিৎ অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা। অনেকে মনে করেন, রান্না করা লবণে ক্ষতির পরিমাণ কম। ব্যাপারটা তেমন না, লবণের মাত্রা বেশি মানেই তা ক্ষতিকর। 

৫. ধূমপান ও এলকোহল পরিহার:
হৃদরোগ থেকে বাচতে ধূমপান ও এলকোহল পরিহার করতে হবে। ধূমপান হার্টের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং এলকোহল Blood Pressure বাড়িয়ে দেয়। 

৬. পরিমিত ঘুম: ঘুমানোর মাধ্যমে আমর আমাদের স্নায়ুকে শীতল রাখতে পারি। এতে আমাদের পেশীগুলোও বিশ্রাম পায়। রক্তনালীর প্রসারণ ঘটে। ফলে Blood Pressure নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

৭. দুশ্চিন্তা কমানো: দুশ্চিন্তা আমাদের হৃদপীন্ডের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। তাই স্ট্রেস এবং দুশ্চিন্তা কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

উচ্চ রক্তচাপে যেসব খাদ্য খাওয়া উচিৎ এবং যা খাওয়া উচিৎ না: 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের উপরে নিয়ন্ত্রণ খুবই প্রয়োজন। এমন অনেক খাবার রয়েছে যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নিচে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলো:

  1. DASH ডায়েট: এর পূর্ণরূপ হলো Dietary Approaches to Stop Hypertension. এই ডায়েটে মূলত নানা রকমের হোল গ্রেইন, ফল ও শাক সবজির উপরে জোড় দেওয়া হয়।
  2. চর্বি জাতীয় খাদ্য যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
  3. আলগা লবণ পরিহার করতে হবে।
  4. শাক-সবজি, মাছ এবং মুরগীর মাংস হতে পারে পুষ্টির বড় উৎস।
  5. প্রসেসড খাবার (যেমন: নুডলস, পাস্তা, সসেজ), ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
  6. ফার্মেন্টেটেড খাবার একটি ভালো পুষ্টির উৎস হতে পারে।
  7. টক জাতীয় খাদ্য - যেমন: তেঁতুল, কাচা আম।

নিম্ন রক্তচাপ প্রতিরোধে যা খাওয়া উচিৎঃ

রক্তচাপ কমাতে যেমন খাবারের ব্যাপারে সতর্ক হতে হয় তেমনি ভাবে রক্তচাপ কোনো কারনে কমে গেলে তা বাড়াতেও নানা রকমের খাবার ভূমিকা রাখতে পারে। নিচে কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো:

  • ওরাল স্যালাইন
  • খাসির পায়া
  • দুধ, ডিম
  • কলিজা
  • বাদাম জাতীয় খাবার। 

ব্লাড প্রেসার নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর: 

১। উচ্চ রক্তচাপে কি টক খাওয়া উচিৎ?

উঃ টক জাতীয় খাদ্য Blood Pressure কমাতে সাহায্য করে। তবে অনেকেই Blood Pressure বেড়ে গেলে টানা টক ফল বিশেষ করে তেঁতুল খেয়েই চলে। হঠাৎ করে প্রেসার কমিয়ে আনার চেষ্টা হিতে বিপরীত হতে পারে। ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে লেবু, কমলা, মাল্টা, তেঁতুল ইত্যাদি ফল খেয়ে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক করা যেতে পারে। 

২। নিম্ন রক্তচাপে কি স্যালাইন সেবন উত্তম?

উঃ পানি শুণ্যতাজনিত নিম্ন Blood Pressure এ স্যালাইন সেবন করা যেতে পারে। তবে স্যালাইনের প্যাকেটে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করতে হবে। কম সময়ে বার বার স্যালাইন গ্রহণ মিনারেল টক্সিসিটি, উচ্চ রক্তচাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডিম, দুধ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।