প্রো-বায়োটিক এবং প্রি-বায়োটিক কি? প্রো-বায়োটিক বা ভালো ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা

প্রো-বায়োটিক বা ভালো ব্যাকটেরিয়া কি? 

প্রো-বায়োটিক বা Probiotics  তৈরি হয় ভালো ব্যাকটেরিয়া ও ঈস্ট এর সমন্বয়ে। এই মাইক্রো-অর্গানিজমসমূহ আমাদের দেহে প্রাকৃতিকভাবেই বাস করে। যখন কোনও ইনফেকশন হয় এবং আমাদের দেহে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে তখন এই সকল ভালো ব্যাকটেরিয়া এদের নির্মূল করতে সাহায্য করে থাকে। তবে প্রোবায়োটিক বলতে আমরা অনেকেই প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্টকে বুঝে থাকি, যা কিছুটা আলাদা। এটি নিয়েও নিচে আমরা আলোচনা করবো।

ব্যাকটেরিয়া শব্দটা আমরা যখন শুনি তখন আমাদের মাথায় আসে যে, বিষয়টি হয়ত খারাপ। কিন্তু দুই রকমের ব্যাকটেরিয়া আছে: উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। প্রো বায়োটিক হলো নানা রকমের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ঈস্ট এর একটি সমন্বয় যা আমাদের শরীরে নানা রকমের উপকার করে থাকে। 

আমাদের শরীরে Gut Flora আছে, যা আমাদের শরীরের হজম, ভিটামিন উৎপাদন, ব্যাকটেরিওসিন তৈরিসহ নানা রকমের উপকার করে থাকে। আবার এই সম্মিলিত অবস্থার মাঝে ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট ছাড়াও নানা রকমের ছত্রাক, প্রোটোজোয়া থাকতে পারে। এদেরকে একত্রে বলা হয় মাইক্রোবায়োম। 

প্রো-বায়োটিক বা ভালো ব্যাকটেরিয়ার প্রাপ্তিস্থান:

আমাদের শরীরের নিন্মোক্ত অংশগুলোতে এদের দেখা পাওয়া যায়: 

  • গাট
  • মুখ
  • যোনিপথ
  • মূত্রনালি
  • ত্বক
  • ফুসফুস ইত্যাদি 

প্রো-বায়োটিকের উপকারিতা:

প্রো-বায়োটিক আমাদের শরীরে নানা রকমের উপকার করে থাকে। এই সকল উপকার আমাদের শরীরের সুস্থতায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। নিচে কিছু উপকারিতা দেওয়া হলো:

১. ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার দমন: ভালো ব্যাকটেরিয়ার মূল কাজ হলো শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা। এরা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সাথে পুষ্টি নিয়ে পাল্লা দেয়। একই সাথে ব্যাক্টেরিওসিন নামের টক্সিন ক্ষরণ করে। যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকুল পরিবেশ তৈরি করে। 

২. ভিটামিন তৈরি: বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া নানা রকমের ভিটামিন তৈরি করে। যেমন: ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি। 

৩. পরিপাকে: ব্যাকটেরিয়া বৃহদান্ত্রে খাবার ভাঙ্গতে সাহায্য করে। শরীরের শেষ পর্যায়ের পুষ্টি শোষণ হয় বৃহদান্ত্রে। একই সাথে প্রো বায়োটিক ডায়েটারি ফাইবার ভাঙ্গতেও ভূমিকা রাখে। 

৪। রোগ দমনে প্রতিকারে: নানা রকমের অসুখ আছে যা ঠিক করতে ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা আছে। 

  • ডায়রিয়া
  • আমাশয়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • IBS এবং IBD 
  • মূত্রনালির ইনফেকশন
  • ল্যাকটোজ ইনটোলারেন্স 

যে খাবারে প্রোবায়োটিক আছে: 

এমন কিছু খাবার আছে যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভালো ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত। এই সকল খাবারের একটা বড় অংশ জুড়েই আছে ফার্মান্টেটেড খাবার। এছাড়া রয়েছে নানা রকমের প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্টও। প্রাকৃতিক ভাবে যেসব খাবারে প্রচুর ভালো ব্যাকটেরিয়া আছে: 

  • দই
  • টেম্ফ
  • কটেজ চিজ
  • কিমচি
  • মিসো
  • কম্বুচা ইত্যাদি 

প্রো-বায়োটিক সাপ্লিমেন্ট বলতে কি বুঝায়?  

প্রো-বায়োটিক সাপ্লিমেন্ট হলো সেই সব খাবার যার মাঝে প্রচুর পরিমাণে ভালো ব্যাকটেরিয়া সহ অন্যান্য ভালো অণুজীব রয়েছে। এই ধরণের সাপ্লিমেন্ট আমাদের হজমে সাহায্য করে, আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায় এবং আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রকে সুস্থ রাখে।

প্রি-বায়োটিক বা  Prebiotics কি?

প্রি-বায়োটিক হলো এমন খাবার যা আমাদের দেহের ভালো ব্যাকটেরিয়া যেমন Gut Flora এর জন্য ভালো। সাধারণত যে সব খাবারে প্রচুর ফাইবার রয়েছে সে সকল খাবারকে প্রি-বায়োটিক হিসেবে গণ্য করা হয়। নানা রকমের শাক সবজি, ফল এর অন্তর্ভুক্ত। 

প্রো-বায়োটিক এর অপকারিতা:

সব কিছুর ভালোর সাথে সাথে খারাপ দিকও আছে। যদিও প্রো-বায়োটিকের প্রায় সব ব্যাকটেরিয়াই ভালো। কিন্তু এদের মাঝে কিছু এমন ব্যাকটেরিয়াও দেখা যায় যারা সুযোগ সন্ধানী। অর্থাৎ এরা সাধারণত কোনো অসুখ তৈরি করে না কিন্তু শরীর যদি দুর্বল হয়ে যায় তাহলে এরা রোগ তৈরি করতে পারে।

একই সাথে খাবারের সাথে অতিরিক্ত প্রো-বায়োটিক গ্রহণ আমাদের শরীরের মাইক্রোফ্লোরা এর ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে যা আমাদেরকে নানা রকমের ইনফেকশনের দিকে ধাবিত করবে। 

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, প্রো বায়োটিক আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে অতিরিক্ত প্রো-বায়োটিক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে, কিন্ত প্রয়োজনীয় পরিমাণে অবশ্যই খাবারের সাথে খাওয়া উচিৎ। এই ভারসাম্যই আমাদের শারীরিক সুস্থতাকে নিশ্চিত করবে।