নিউট্রিশনাল ঈস্টের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ

নিউট্রিশনাল ঈস্ট বা Nutritional Yeast কি? 

নিউট্রিশনাল ঈস্টকে অনেক সময় নুচ (Nooch) বলে ডাকা হয়। এটি ঈস্টের এমন এক জাত যা আমরা বেকিং এবং ব্রুইং দুইক্ষেত্রেই ব্যবহার করে থাকি। যখন এটিকে Nutritional Yeast হিসেবে ব্যবহার করা হত তখন এটি বেকিং (Baking)  এবং ব্রুইং (Brewing) এর অনুপযোগী। কারণ এটি তখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এই ধরণের ঈস্ট আমরা সাধারণত ব্যবহার করে থাকি পুষ্টির উৎস হিসেবে। Saccharomyces cerevisiae নামের ঈস্ট থেকে এটি প্রস্তুত করা হয়।

প্রস্তুতকরণ:  

Saccharomyces cerevisiae নামের ঈস্ট কোষসমূহকে উচ্চ চিনি সমৃদ্ধ কোনো মাধ্যমে (যেমন: মোলালেস) কিছু দিনের জন্য বাড়তে ও জন্মাতে দেওয়া হয় । এরপরে একে তাপ প্রয়োগে নিষ্ক্রিয় করা হয়, মাধ্যম থেকে তোলা হয়, ধোয়া হয় এবং এরপরে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করা হয়। 

নিউট্রিশনাল ঈস্টের প্রকারভেদ: 

নিউট্রিশনাল ইস্ট মূলত দুই প্রকার। এরা হলো:

  1. আনফরটিফাইড: এই ক্ষেত্রে কোনো প্রকারের ভিটামিন বা মিনারেলস আলাদা করে যুক্ত করা হয় না। এর মাঝে ঠিক সেই পুষ্টি গুণাবলিই উপস্থিত থাকে যা এটি জন্মানোর সময় লাভ করেছিলো
  2. ফরটিফাইড: এই ক্ষেত্রে আলাদা রকমের ভিটামিন ও মিনারেলস যুক্ত করা হয়। প্যাকেটজাতকরণ করার সময় মোড়কে অতিরিক্তভাবে যুক্ত পুষ্টি উপাদানের তালিকা দেওয়া থাকে। 

ফরটিফাইড নিউট্রিশনাল ঈস্টের গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তা তুলনামূলক বেশি। এটি নানা রকম ভাবে পাওয়া যায়। যেমন: পাউডার, গ্রেনিউলস, ফ্লেকস ইত্যাদি। এটি এমন এক ধরনের খাবার যা মোটামুটি প্রায় সকল ডায়েট প্ল্যানের সাথেই যায়। এটিতে অতিরিক্ত সোডিয়াম নেই  এবং লো ক্যালোরি, লো কার্ব, Gluten free, ভেগানসহ নানা রকমের ডায়েট প্ল্যানের সাথেই এটি ভালো মতো যায়। 

নিউট্রিশনাল ঈস্টের পুষ্টিগুণ:

প্রতি ৫ গ্রাম পরিমাণ ফর্টিফাইড Nutritional Yeast এ রয়েছেঃ

  • ক্যালোরি ২০
  • আমিষ: ৩ গ্রাম
  • স্নেহ: ০ গ্রাম
  • শর্করা: ২ গ্রাম
  • চিনি: ০ গ্রাম 
  • ফাইবার: প্রাত্যহিক চাহিদার ৪%
  • ভিটামিন বি২: প্রাত্যহিক চাহিদার ২৪৬% 
  • ভিটামিন বি৩: প্রাত্যহিক চাহিদার ১০৯% 
  • ভিটামিন বি৬: প্রাত্যহিক চাহিদার ২০২% 
  • ভিটামিন বি৯: প্রাত্যহিক চাহিদার ৫৯% 
  • ভিটামিন বি১২: প্রাত্যহিক চাহিদার ৩১৩%
  • লোহা: প্রাত্যহিক চাহিদার ২%
  • পটাশিয়াম: প্রাত্যহিক চাহিদার ২% 

এছাড়াও এতে রয়েছে:

  • ৯টি অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড
  • ট্রেস মিনারেলস - জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং মলিবোডেনাম

তবে যেহেতু আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান এদের বাজারজাত করে থাকে সেহেতু এদের পুষ্টিগুণে পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। তাই মোড়কের উপরে পুষ্টি উপাদানের তালিকা দেখে নিতে হবে। 

নিউট্রিশনাল ঈস্টের উপকারিতা: 

যেহেতু এই খাবারটি খুবই পুষ্টিকর সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো:

  1. শক্তি ও কর্মক্ষমতা করে: বেশির ভাগ ফর্টিফাইড নিউট্রিশনাল ঈস্টে ভিটামিন বি১২ আছে। এটি আমাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করে। এর অভাবে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ভেজিটেরিয়ান বা ভেজানদের জন্য Nutritional Yeast খুবই দরকারি, কেননা ভিটামিন বি১২ মূলতঃ প্রাণীজ উৎস থেকেই আমরা পেয়ে থাকি। সেক্ষেত্রে ভিটামিন বি১২ এর বিকল্প উৎস হিসেবে Nutritional Yeast কাজ করতে পারে। 
  2. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে: Nutritional Yeast শরীরে ইনফ্লামেশনকে প্রতিরোধ করে, ডাইরিয়ার সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে। 
  3. ত্বক, নখ ও চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে: চুল পড়ে যাওয়া ও নখের ক্ষয় রোধে Nutritional Yeast সাহায্য করতে পারে। এছাড়া এটি ত্বককে সতেজ করে। ব্রণ, মেছতা থেকে ত্বককে দূরে রাখে। 
  4. Glucose সেনসিটিভিটি থেকে বাঁচিয়ে রাখে: Nutritional Yeast টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের Glucose Sensitivity রোধে সাহায্য করে। তবে এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। 
  5. গর্ভাবস্থায়: সুস্থ শিশু জন্মদানের জন্য ফলিক এসিড গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Nutritional Yeast ফলেটের বড় উৎস। 

স্বাস্থ্য ঝুঁকি: 

যদিও এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর কিন্তু সবাই হয়ত এটি গ্রহণ করতে পারবে না। যাদের ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিস (Inflammatory Bowel Diseases সংক্ষেপে IBD) আছে তাদের Nutritional Yeast গ্রহণ করা উচিৎ না।

অনেকের ঈস্ট সেনসিটিভিটি থাকতে পারে এবং এটি গ্রহণে এলার্জিক রিয়েকশন দিতে পারে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও গ্লুকোমা লক্ষণকে খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার নজির নিউট্রিশনাল ঈস্টের রয়েছে। 

পরিশেষে, Nutritional Yeast আমাদের শরীরের ঘাটতি মোকাবেলায় একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে। দিন দিন এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে এটি দিয়ে তৈরিকৃত খাদ্যের সংখ্যাও। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নতুন নতুন কোম্পানির Nutritional Yeast নিয়ে কাজের পরিধি। যখন ব্যবসা জড়িত হয়ে যায় তখন অনেক সময় পুষ্টির চিন্তা দূরে সরে যায়, তাই আমাদের গায়ের লেভেলে নির্দেশিকা ও পুষ্টি তালিকা দেখে যাচাই বাছাই করে খাদ্য হিসেবে করা উচিৎ।