রেডিও ওয়েভ বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কি? স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ এর উপর এর বিরূপ প্রভাব

রেডিও ওয়েভ বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কি?  

আমরা যখন রেডিয়েশন শব্দটা শুনি তখন আমাদের মাথায় এক্সরে, গামা রে, অতি বেগুনি রশ্মি ইত্যাদি ক্ষতিকর রেডিয়েশনের কথা মাথায় আসে যার ফলে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ সমূহ হয়ে থাকে। তবে নান রকমের রেডিয়েশন আছে। রেডিও ওয়েভ তার মাঝে একটি। এটি এক ধরণের দুর্বল কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তরঙ্গ।

আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার নানা ক্ষেত্রে আমরা এই ধরনের তরঙ্গ ব্যবহার করে থাকি। রেডিও ওয়েভের বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক আছে, যা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। কিন্তু তার আগে আমাদের এই ক্ষতির ধরণ সম্পর্কে বুঝতে হবে। 

রেডিয়েশনের প্রকারভেদ: 

সাধারণত দুই রকমের রেডিয়েশন রয়েছে: 

  1. আয়োনাইজিং 
  2. নন আয়োনাইজিং 

১. আয়োনাইজিং রেডিয়েশন

আয়োনাইজিং রেডিয়েশন হলো সেই সকল রেডিয়েশন যাদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি এবং এদের কোনও একটি অণু থেকে ইলেকট্রনকে স্থানচ্যুত করার ক্ষমতা রয়েছে। এই স্থানচ্যুতিই পরবর্তীতে যে সমস্যার জন্ম দেয় তা হলো মিউটেশন। যা থেকে টিউমার ও ক্যান্সার কোষ তৈরি হয়। যেমন: এক্সরে, গামা রে, অতি বেগুনি রশ্মি।

২. নন আয়োনাইজিং রেডিয়েশন

এই ধরণের রেডিয়েশনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশ কম। এদের ইলেকট্রনকে স্থানচ্যুত করার ক্ষমতা নেই। তাই এরা মিউটেশন ঘটায় না। যেমন: রেডিও ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, দৃশ্যমান আলো, অবলোহিত রশ্মি ইত্যাদি। আমাদের ইন্টারনেটের ওয়াইফাই সিগন্যালও এক ধরণের রেডিও ওয়েভ। 

রেডিও ওয়েভ এর ক্ষতিকারক দিকসমূহ

উপরের আলোচনা থেকে আমরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম যে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কোন ধরণের সমস্যা তৈরি করে না। এখন আসা যাক এটি কি ধরণের সমস্যা তৈরি করে এবং কি ধরণের সমস্যা তৈরি করে না। এটি কি ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে তার তালিকা তৈরি করা হলো :

  1. ঘুমের ব্যাঘাত, ইনসোমনিয়া
  2. মাথাব্যথা
  3. হতাশা ও অবসাদ 
  4. মনোযোগ কমিয়ে দেওয়া
  5. স্মৃতিশক্তিতে ব্যাঘাত
  6. বিরক্তি ভাব, মাথা ঝিম ঝিম করা
  7. দুশ্চিন্তা ও বিশ্রামহীনতা
  8. বমি বমি ভাব 
  9. দৃষ্টি ক্ষমতা হ্রাস করে
  10. প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়
  11. সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাতেও এটি বিরূপ প্রভাব ফেলে 

পরিবেশের উপর রেডিও ওয়েভের বিরূপ প্রভাব: 

আমাদের পরিবেশের উপরে রেডিও ওয়েভের বেশ কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিচে এর কিছু দেওয়া হলো:

  1. গ্লোবাল ওয়ার্মিং: আমাদের বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তরঙ্গ বাধা পেয়ে ফেরত আসে। যা পরোক্ষভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য দায়ী
  2. প্রাণিদের ক্ষতি: রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ছোট আকারের প্রাণিদের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিকর। এগুলো পাখিদের দিক নির্ণয়ের ক্ষমতাতে সমস্যা তৈরি করে। 

রেডিও ওয়েভ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার উপায় 

রেডিও ওয়েভ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আমরা কিছু কাজ করতে পারি। নিচে তা দেওয়া হলো:

১. নানা রকমের হোম এপ্লায়েন্সে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়। এই সকল এপ্লায়েন্স এর খুব কাছাকাছি থাকা উচিৎ না।
২. অনেকে বালিশের নিচে বা পাশে মোবাইল নিয়ে ঘুমায় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো দূরে রাখা উচিৎ।।
৩. কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে দুরুত্ব বাড়ার সাথে সাথে এর প্রভাবও কমে আসে। সম্ভব হলে দুই একদিন নানা রকমের যন্ত্র থেকে দূরে থাকে।
৪. বাসা বাড়িতে রেডিও কিংবা মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে না দেওয়া।

সব শেষে আমরা উপরের আলোচনা থেকে এই ব্যাপারগুলো বুঝতে পারি, রেডিও ওয়েভ এবং নানা রকমের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট নানা রকমের উৎস থেকে নিঃসৃত হয়। যেখান থেকেই হোক না কেনো অতিরিক্ত পরিমাণে রেডিও ওয়েভ এক্সপোজার কখনোই আমাদের জন্য কোনো উপকার বয়ে আনতে পারে না। তাই আমাদের উচিৎ এই ব্যাপারগুলোতে সতর্ক হওয়া।