চকলেট পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ছোট কিংবা বড় সবার কাছেই চকলেট বার একটি উপাদেয় খাবার। বিভিন্ন রকমের চকলেটের মাঝে ডার্ক চকলেট স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও অনন্য। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমূহের মাঝে খুব কম উপাদানই রয়েছে যা ডার্ক চকলেটে পাওয়া যায় না। এই কারণে একে সুপার ফুড বলেও অবিহিত করা হয়।
ডার্ক চকলেটের পুষ্টিতথ্য:
ডার্ক চকলেট বিভিন্ন রকমের পুষ্টিগুণে অনন্য। নিচে প্রদানকৃত তালিকার দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাবো এই খাবারটি প্রায় সকল ধরনের খাদ্য উপাদানের একটি বড় উৎস। বিশেষ করে মিনারেল ও ভিটামিনের ক্ষেত্রে আমাদের দৈনিক চাহিদার একটি বড় অংশ ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেট এর মাধ্যমেই পূরণ হয়ে যায়।
একই সাথে এতে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট নেই বললেই চলে। একই সাথে এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে যা আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য উপকারী। শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালোরির জোগান দিতে Dark Chocolate সাহায্য করতে পারে এবং এতে উপস্থিত ক্যাফেইনও আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সুবিধা প্রদান করে।
ডার্ক চকলেটে প্রাপ্ত পুষ্টির পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে ) | ||
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | |
শক্তি | ২,৫০০ কিলো জুল | |
কার্বোহাইড্রেট | ৪৫.৯ গ্রাম | |
চিনি | ২৪ গ্রাম | |
ডায়েটারি ফাইবার | ১০.৯ গ্রাম | |
চর্বি | ৪২.৬ গ্রাম | |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ২৪.৫ গ্রাম | |
ট্রান্স ফ্যাট | ০.০৩ গ্রাম | |
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১২.৮ গ্রাম | |
পলিউনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১.২৬ গ্রাম | |
প্রোটিন | ৭.৭৯ গ্রাম | |
ভিটামিন | পরিমাণ (দৈনিক চাহিদার শতকরা পরিমাণ) | |
ভিটামিন এ (৩৯ আইইউ) | ||
থাইমিন (বি1) | ০.০৩৪ মিলিগ্রাম (৩%) | |
রাইবোফ্লাভিন (বি২) | ০.০৭৮ মিলিগ্রাম (৭%) | |
নিয়াসিন (বি৩) | ১.০৫ মিলিগ্রাম (৭%) | |
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ০.৪১৮ মিলিগ্রাম (৮%) | |
ভিটামিন বি৬ | ০.০৩৮ মিলিগ্রাম (৩%) | |
ভিটামিন বি১২ | ০.২৮ মাইক্রোগ্রাম (১২%) | |
ভিটামিন ই | ০.৫৯ মিলিগ্রাম (৪%) | |
ভিটামিন কে | ৭.৩ মাইক্রোগ্রাম (৭%) | |
মিনারেল | পরিমাণ (দৈনিক চাহিদার শতকরা পরিমাণ) | |
ক্যালসিয়াম | ৭৩ মিলিগ্রাম (৭%) | |
কপার | ১.৭৭ মিলিগ্রাম (৮৯%) | |
আয়রন | ১১.৯ মিলিগ্রাম (৯২%) | |
ম্যাগনেসিয়াম | ২২৮ মিলিগ্রাম (৬৪%) | |
ম্যাঙ্গানিজ | ১.৯৫ মিলিগ্রাম (৯৩%) | |
ফসফরাস | ৩০৮ মিলিগ্রাম (৪৪%) | |
পটাশিয়াম | ৭১৫ মিলিগ্রাম (১৫%) | |
সেলেনিয়াম | ৬.৮ মাইক্রোগ্রাম (১০%) | |
সোডিয়াম | ২০ মিলিগ্রাম (১%) | |
জিংক | ৩.৩১ মিলিগ্রাম (৩৫%) | |
অন্যান্য উপাদান | পরিমান | |
পানি | ১.৩৭ গ্রাম | |
ক্যাফেইন | ৮০ মিলিগ্রাম | |
কোলেস্টেরল | ৩ মিলিগ্রাম | |
থায়োব্রোমিন | ৮০২ মিলিগ্রাম |
ডার্ক চকলেটের উপকারিতা (Benefits of Dark Chocolate)
ডার্ক চকলেটের উপকারিতা বলে শেষ করে যাবে না। পুষ্টিসমৃদ্ধ এই খাবারটি আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ করে থাকে। এই সকল উপাদানের মাঝে প্রতিটিই আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।
এই সকল কাজের মাঝে কিছু এমন কাজ রয়েছে যাদের শরীরবৃত্তীয় গুরুত্ব অনেক। এমনই কিছু উপকারিতা নিচে উপস্থাপিত হলো:
১. কার্ডিও-ভাস্কুলার ডিজিজ ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে:
ডার্ক চকলেটে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেমের সুষ্ঠু পরিচালনায় সাহায্য করতে পারে। ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড রয়েছে। একই সাথে এতে যথেষ্ট পরিমাণে থায়োব্রোমিনও পাওয়া যায়।
গবেষণায় থেকে এই ব্যাপারটি প্রামাণিত যে, এই দুইটি উপাদান বিভিন্ন রক্তনালী প্রসারনে সাহায্য করে। যার ফলশ্রুতিতে-
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
- শিরা কিংবা ধমনীতে চর্বি জমার সম্ভাবনা কমে আসে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
একই সাথে Dark Chocolate দ্রুত ক্ষতিকারক কোলেস্টেরোল এর পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসে, এবং শরীরে স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের সরবরাহ নিশ্চিত করে।
২. কোষের মৃত্যুহার কমাতে ও ত্বকের সুস্থতায়:
ডার্ক চকলেট ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক এবং ভিটামিন A, B1, C, D এবং E এর মতো পুষ্টি এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর। এই সকল উপাদানের প্রতিটিই ত্বকের সুরক্ষাতে কাজ করে থাকে। এন্টি অক্সিডেন্টসমুহ ত্বককে UV রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। একই সাথে দাগ এবং লালভাব প্রশমিত করে, কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
আবার, ফ্রি রেডিক্যাল কোষের বিভিন্ন রকমের ক্ষতি সাধন করে। এন্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যালের সাথে যুক্ত হয়ে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে। এক সাথে বিভিন্ন রকমের প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন যেন হতে না পারে সেজন্য এন্টি-ইনফ্লামেটরি রূপে কাজ করে।
৩. মানসিক প্রশান্তি প্রদানে:
Dark Chocolate একটি উপাদেয় খাবার এই কারণে আমাদের মানসিক তৃপ্তি আসাটাই স্বাভাবিক কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। এই খাবারটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা সক্রিয়ভাবে মানসিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে। এই উপাদানসমূহের মাঝে রয়েছে:
- ফ্লেভনয়েড - এই উপাদান মানসিক চাপ কমিয়ে আনে।
- থায়োব্লোমিন - এনার্জি প্রদান করে।
- N-acylethanolamines - এটি একটি ফ্যাটি এসিড যা মানুষের মনে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে।
- Phenylethylamine - ডোপামিনের ক্ষরণ নিশ্চিত করে।
- ক্যাফেইন - অবসাদ কমায়
এই সকল উপাদানের মিলিত কাজের ফলে মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত হয়, চাপ কমে আসে এবং আনন্দানুভূতি তৈরি হয়।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
ডার্ক চকলেটে পলিফেনল রয়েছে যা এর এন্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। এন্টি অক্সিডেন্ট ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এ বাঁধা প্রদান করে। এর ফলে ব্লাড সুগার কমে আসে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. ওজন কমাতে:
পরিমিত পরিমাণে Dark Chocolate খাওয়া, ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সাহায্য করতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা মেটাবলিজমে সাহায্য করে এবং দ্রুত ক্যালোরি বার্ণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, খাবারের ২০ মিনিট আগে খাওয়া হলে ডার্ক চকলেট ক্ষুধাও কমায়।
মজার বিষয় হলো, ডার্ক চকলেটে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্টসমূহ ব্যথা উপশম করে। যার ফলে ওয়ার্ক আউট সংক্রান্ত ব্যথা দমনে এর ভূমিকা রয়েছে। এজন্য ওজন কমানোর লক্ষ্যে ঘাম ঝরানো মানুষগুলোর জন্য এটি বাড়তি অনুপ্রেরণা প্রদান করতে পারে।
এতে উপস্থিত ফাইবার পাকস্থলীতে অনেক সময় পর্যন্ত উপস্থিত থাকে, যা পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করে, অতিরিক্ত খাওয়ার পরিমাণ কমায়। যার ফলে ওজন কমে।
৬. অন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিতকরণে:
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ফাইবার অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। উপকারী গাট ফ্লোরা এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। ক্ষুদ্রান্ত্র ও মলদারের ক্যান্সারে প্রতিরোধ করে। একই সাথে সুস্থ হজম প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণে ফাইবার উপকারী ভূমিকা পালন করে।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে:
Dark Chocolate এর এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ফ্লেভনয়েড ইত্যাদি ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সারের মাঝে রয়েছে-
- কোলো-রেক্টাল ক্যান্সার
- স্তন্য ক্যান্সার
- প্রোস্টেট ক্যান্সার
- ফুসফুসের ক্যান্সার
- অগ্নাসয়ের ক্যান্সার
- ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার
- যকৃতের ক্যান্সার
- পাকস্থলীর ক্যান্সার
- ইউটেরাইন ক্যান্সার
- ইসোফেগাল ক্যান্সার
ডার্ক চকলেটের স্বাস্থ্যঝুঁকি:
অতিরিক্ত Dark Chocolate গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। ক্যাফেইন স্লিপ সাইকেলকে সরাসরি প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট গ্রহণ নিদ্রাহীনতা, অরুচি, হজমে গন্ডগোলসহ বিভিন্ন রকমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
একই সাথে ডার্ক চকলেট বিভিন্ন মিনারেলে পরিপূর্ণ এবং এদের পরিমাণও অনেক। যেমন: ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেটে যে পরিমাণে কপার রয়েছে তা দৈনিক চাহিদার ১৯৬%, এবং প্রাপ্ত ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ দৈনিক চাহিদার ৮৫%। এর থেকে বুঝা যাচ্ছে, অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট গ্রহণ Menaral Accumulation এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।