Collagen (কোলাজেন)

Collagen কি?

আমাদের শরীরে নানারকম Connective tissue (কানেকটিভ টিস্যু) বা যৌগিক কলা আছে। এইসব টিস্যুর প্রোটিনের এক্সট্রা সেসুলার মেট্রিক্সের মূল গঠন উপাদান হলো কোলাজেন।

এটি এই সকল যৌগিক কলার মুল উপাদান হওয়ার কারনে আমাদের শরীরে পাওয়া প্রোটিনগুলোর মাঝে সবচেয়ে সুলভ। বলা যায় আমাদের শরীরের protein count প্রায় ২৫%-৩৫% পুরোটাই হলো collagen। এই সকল যৌগিক কলার মাঝে রয়েছে অস্থি, তরুনাস্থি, টেন্ডন, লিগামেন্ট এবং ত্বক। এছাড়াও রক্তনালির প্রাচীর, চোখের কর্ণিয়া, ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীর, মেরুদন্ডের মধ্যবর্তী ডিস্ক, দাঁতের গঠন উপাদান ডেন্টিনেও এটি পাওয়া যায়। পেশীর এন্ডোমাইসিয়াম তৈরির প্রধান উপাদান হলো কোলাজেন। শরীরের পেশীর ২% এবং ঐচ্ছিক পেশীর প্রায় ৬%ই হলো এই ফাইবার। আর collagen উৎপাদনের মুল কারখানা হলো ফাইব্রোব্লাস্ট নামের কোষ।

Collagen শব্দটি মুলত গ্রীকColla শব্দের অর্থ আঠা৷ এবং Gen অর্থ উৎপাদনকারি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ কোলাজেনকে চিনতো এবং এটি ছিলো আঠা তৈরির মূল কাচামাল। 

এর গঠন

বিভিন্ন এমাইনো এসিড একটার সাথে অন্যটা পরপর বসে লম্বা এমাইনো এসিড চেইন তৈরি করে৷ এই সব এমাইনো এসিডের প্রতিটাকে এক একটা এমাইনো এসিড রেসিডিউ বলা হয়। আর এই লম্বা চেইনকে ফাইব্রিল বলে। এমন তিনটা ফাইব্রিল একসাথে প্যাচিয়ে ট্রিপল হ্যালিক্স বা ত্রিসুত্রক তৈরি করে। এই ট্রিপল হ্যালিক্স কাঠামোর পুরোটাই হলো collagen.  

এই টিস্যু নানা রকম হতে পারে এর মিনারালাইজেশনের উপরে ভিত্তি করে। যেমনঃ অস্থিতে পাওয়া প্রকরণ গঠণের দিক থেকে শক্ত এবং দৃঢ়, টেন্ডনের কোলাজেন স্থিতিস্থাপক অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুযায়ী ইলাস্টিসিটি প্রদর্শন করে আবার তরুনাস্থির প্রকরণ অস্থি আর টেন্ডনের কোলাজেনের মাঝামাঝি অবস্থায় থাকে। 

কোলাজেনের মূল গঠন উপাদান প্রোলিন এবং গ্লাইসিন। সাধারণত প্রায় প্রতি তিন এমাইনো এসিড রেসিডিউতে একটি করে গ্লাইসিন থাকে। আর প্রোলিনের পরিমান মোট এমাইনো এসিড সংখ্যার প্রায় ১৭%৷ 

Collagen এর কাজ

  1.  টিস্যুর ক্ষয় রোধ করে। 
  2. কোষকে সজিব রাখে এবং বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। 
  3. এক কোষের সাথে অন্য কোষের যোগাযোগ রক্ষা করে
  4. অনেক সময় রোগ প্রতিরোধেও সাড়া দেয়।

Collagen এর ব্যবহার

Collagen পরীক্ষাগারে নানা রকম পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়৷ এর ভিতরে আছে যেমনঃ

  1.  সেল কালচারে
  2.  বাহ্যিক পরিবেশে কোষের অবস্থা এবং সেল ইন্টারেকশন পর্যবেক্ষণ করতে
  3.  বায়োইংক হিসেবে বায়োফেব্রিকেশনথ্রিডি বায়োপ্রিন্টিং এ। এটি প্লাস্টিক সার্জারিতে ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত হয়
  4.  ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে এটি জিলাটিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যা নানা রকম মুখরোচক খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। 
  5.  নানা রকমের স্কিন সাপ্লিমেন্ট যেমন: anti aging cream, 
  6.  এটি খাবার হিসেবে বিশেষত মাছ ও মুরগীর চামড়ার সাথে আমরা খেয়ে থাকি এবং ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। 

এটির ঘাটতিজনিত অসুস্থতা

১২ ধরণের কোলাজেনের উপরে পরীক্ষা করে প্রায় হাজার খানেক প্রকারের মিউটেশনের সন্ধ্যান পাওয়া যায় যা নানা অসুখ তৈরি করতে পারে৷ অল্প কথায় এ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • Osteogenesis Imperfecta (অস্টিওজেনেসিস ইম্পার্ফেক্টা):  টাইপ-১ কোলাজেনের মিউটেশনের কারনে এই রোগ হতে পারে। এই রোগ হলে শিশু জন্মের সময় খুবই দুর্বল অস্থি নিয়ে জন্ম নেয় এবং তাদের যৌগিক কলার গঠনও স্বাভাবিক হয় না। অনেকক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতি।
  • Chondrodisplasius (কন্ড্রোডিসপ্লাসিয়াস)- টাইপ-২ কোলাজেনের মিউটেশনে সৃষ্ট কঙ্গালের গঠনজনিত রোগ। 
  • কোলাজেনের অভাবে আমাদের ত্বকে সমস্যা দেখে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে চেহারায় বয়সের ছাপ আসেন। Wrinkle, ত্বকে পানিশুন্যতা, জয়েন্টে ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। 

Collagen এর ঘাটতির কারণ

  1. বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর পরিমান কমতে থাকে।
  2. ধূমপান।
  3. অতিরিক্ত পানি খাওয়া- পানি ত্বক ভালো রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমানে পানি খেলে ত্বকের বয়স বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং কোলাজেনও কমতে থাকে।
  4. অতিরিক্ত সুর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা। 

Collagen এর উৎস

  1. প্রাণির হাড়, ত্বক - যেমনঃ মুরগী, মাছের চামড়া, হাড় ও কাটা।
  2. সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণি যেমনঃ জেলি ফিস
  3. আমিষ সমৃদ্ধ খাবার- যেমনঃ চিকেন স্যুপ

তবে এই প্রোটিন তৈরির জন্য ভিটামিন সি অপরিহার্য। তাই একই সাথে ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খেতে হবে। 

পরিশেষে, কোলাজেন আমাদের জন্য অপরিহার্য্য। এর অভাবে আমরা আমাদের সৌন্দর্য এবং কর্মক্ষমতা দুইই হারিয়ে বসতে পারি৷ তাই আমাদের উচিত কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং এর ঘাটতি লাঘবে সর্বদা সতর্ক থাকা।