প্রোটিন বা আমিষ কি?
Protein বা আমিষ হলো আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। আমাদের শরীরের বৃদ্ধি, পেশীর গঠন, হাড়ের গঠনে Protein এর কোনো বিকল্প নেই। নানা রকমের প্রাণিজ উৎস প্রোটিনের বড় যোগানদাতা। এছাড়াও উদ্ভিজ্জ উৎসও কম গুরুত্বপূর্ণ না।
আমিষের জাতীয় খাবার যখন আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে পাকস্থলীতে গিয়ে পৌঁছায় তখন হাইড্রোক্লোরিক এসিড আমিষের ভাঙ্গণ শুরু করে কিন্তু এর মূল ভাঙ্গন ঘটে ক্ষুদ্রান্তে। প্রোটিয়েজ এনজাইম বৃহৎ Protein অণুকে ভেঙ্গে ছোট লম্বা এমাইনো এসিডের চেইনে পরিণত করে। যা ট্রিপসিন সহ নানা রকম আমিষের ভাঙ্গনে ব্যবহৃত এনজাইমের প্রভাবে আরো ক্ষুদ্রতর অংশে পরিণত হয় এবং আমাদের শরীর তা গ্রহণ করে।
প্রোটিনের কাজ ও গুরুত্ব
মানুষের দেহের জন্য প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি শরীরের মাংসপেশীর গঠন থেকে শুরু করে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখা সহ বিভিন্ন ভাবে কাজ করে থাকে। আমাদের চলাচল সহ নানা রকম কাজে এটির এর ভূমিকা আছে।
প্রোটিনের বিভিন্ন কাজ ও গুরুত্ব নিম্নে দেওয়া হলো :
- মাংসপেশীর গঠনে।
- হাড়ের মেটাবলিজমে।
- স্যুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে।
- বয়সের ছাপ কমাতে।
- চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে।
- পেশীর বল প্রয়োগে সহায়তা।
- হৃদরোগ কমাতে।
- ইমিউন সিস্টেমের উন্নতিতে।
- ত্বকের সুস্থতায়।
- হরমোনের ব্যালেন্স রক্ষায়, ইত্যাদি।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বা উৎস
প্রোটিন প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ উভয় উৎস থেকে পাওয়া যায়।
প্রাণিজ উৎস সমূহ:
- চর্বিহীন মাংস - গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ভেড়ার মাংস, মহিষের মাংস
- পোলট্রি - মুরগি, হাঁস, টার্কি, কবুতর ইত্যাদি।
- মাছ - মিঠা পানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, ঝিনুক ইত্যাদি।
- ডিম
- দুগ্ধজাত পণ্য - দুধ, টক দই, পনির, চীজ ইত্যাদি।
উদ্ভিজ্জ উৎস সমূহ:
- বাদাম - চীনা বাদাম, কাঠ বাদাম, আখরোট, হ্যাজেলনাট, কাজু ইত্যাদি।
- বীজ (সীড) - কুমড়ার বীজ, তিলের বীজ, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি।
- শিম ও ডাল জাতীয় শস্য - মটরশুটি, মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদি।
আমিষের আধিক্যজনিত সমস্যাঃ
- উচ্চ কোলেস্টেরল লেভেল
- হৃদরোগ
- হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি
- উচ্চ রক্তচাপ
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস
- কিডনি সমস্যা
প্রোটিনের ঘাটতিজনিত সমস্যাঃ
- হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া।
- পেশীর গঠনে সমস্যা হওয়া।
- খাদ্যাপাদানের সমন্বয় নষ্ট হয়ে যাওয়া।
আমিষের ঘাটতির কারণ
- সিসিয়াক ডিজিস।
- ওয়েট লস সার্জারি।
- অগ্নাশয়ের ক্ষত অথবা অসুখ।
- ক্ষুদ্রান্ত্রে জটিলতা।
- কিডনির রোগ।
- শৈশবকালের অপুষ্টিজনিত সমস্যা।
- ইটিং ডিসঅর্ডার ইত্যাদি।
আমিষ বা Protein আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় একটি খাদ্যাপাদান। শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেলস, ডায়েটারি ফাইবার ও পানির সাথে প্রোটিনের সমন্বয় করা সম্ভব হলে আমাদের শরীরবৃত্তীয় নানা রকম কাজ সম্পাদন সহজতর হবে।
বিভিন্ন আলাদা আলাদা উৎস আলাদা আলাদা রকমের Protein সরবরাহ করে থাকে, তাই প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ উৎসের মাঝে সমন্বয়ও খুবই প্রয়োজন। নানা রকমের ডায়েট প্ল্যান এখানে আমাদের সহায়তা প্রদান করতে পারে। কিন্তু মূল ব্যাপার একটাই আর তা হলো আমাদের সুস্থ্য থাকতে হবে আর তা হলেই আমরা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবো।