Gelatin (জিলাটিন)

Gelatin কি?

Gelatin (জিলাটিন) মূলতঃ একটি রঙ বিহীন, স্বাদবিহীন খাদ্য উপাদান যা সাধারণত ব্যবহার করা হয় খাবারকে জমাতে কিংবা ঘন করতে। এই উপাদানটি সাধারণত Collagen থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। আমরা সকালে যে অরেঞ্জ জেলি দিয়ে পাউরুটি খেয়েছি কিংবা বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় যে মার্সমেলো কিনে বাড়ি ফিরছি তার সবটাতেই জিলাটিন আছে। 

জিলাটিন এমন একটি পদার্থ যা সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে বিভিন্ন জিনিসকে জমিয়ে ফেলতে পারে এবং চাইলে জেলির মতো অবস্থাতেও নিয়ে যেতে পারে। যেহেতু এর উৎস কোলাজেন তাই এটি প্রস্তুত করতে প্রয়োজন বিভিন্ন প্রাণির চামড়া, হাড়। এই প্রাণির মাঝে গরু, শুকর প্রধান হলেও ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য মাছ থেকে প্রস্তুতকৃত জিলাটিনও পাওয়া যায়। 

নানা রকমের খাদ্য সামগ্রী তৈরি করতে এর ব্যাপক প্রচলন থাকলেও ঔষধ উৎপাদনেও এটি ব্যবহৃত হয়। 

Gelatin এর গঠন

গাঠনিক দিক থেকে Gelatin মূলতঃ প্রোটিন কোলাজেন থেকে উৎপন্ন হওয়ার কারনে এর প্রোটিনের ধরণেও মিল আছে। কোলাজেনকে হাইড্রোলাইসিস করে ছোট ছোট পেপটাইডে পরিণত করা হয়ন এই পেপটাইডগুলো থেকেই তৈরি হয় জিলাটিন। 

Gelatin এর ব্যবহার

খাদ্যমানের দিক থেকে জিলাটিনের নানা উপকারিতা আছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। 

  • ডেসার্ট জাতীয় খাদ্য যেমন জেলি, পুডিং,  মার্সমেলো, নাটা জেলি ড্রিংক্স, আইসক্রিম ইত্যাদি। 
  • জেলিং এজেন্ট হিসেবে কসমেটিক্স, ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিতে। 
  • ফটোগ্রাফিক ফিল্ম এবং কিছু ধরণের কাগজ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। 

Gelatin এর উপকারিতা

স্বাস্থ্যগত দিক থেকে জিলাটিনের বেশকিছু গুণাগুণ রয়েছেঃ

  1. ২০১৭ সালের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সব সাপ্লিমেন্টে জিলাটিন এবং ভিটামিন-সি রয়েছে তা টিস্যুর ক্ষয়পূরণে সাহায্য করে। 
  2. এটি শরীরে কোলাজেনের অভাব পূরণে সাহায্য করে এবং এর উৎপাদন ত্বরান্বিত করে।
  3. ত্বকের ইলাস্টসিটি ধরে রাখতে সহয়তা করে।
  4. এতে গ্লুটামিক এসিড রয়েছে যা পরিপাকে সাহায্য করে। 
  5. ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্লাইসিন টাইপ-২ ডায়বেটিস এর বিপক্ষে ভালো কাজ করে আর জিলাটিনের মূল গাঠনিক উপাদানের একটি হলো গ্লাইসিন।
  6. এতে লাইসিন রয়েছে, এটি হাড়ের ক্ষয়রোধ করে এবং একে আরো মজবুত করে।
  7. নিদ্রাহীনতা দূর করতে সহয়তা করে। 
  8. এতে ক্যালোরি খুব কম থাকে তাই ওজন কমাতে সহায়তা করে। 
  9. লিভার এবং ক্ষুদ্রান্তের সুরক্ষায় সাহায্য করে।
  10. জিলাটিন হয়ত ক্যান্সারের সংক্রমনকে ধীর করতে সাহায্য করে। তবে এই ব্যাপারে আরো গবেষণা প্রয়োজন। 
  11. মস্তিস্কের কোষের সুরক্ষা করে। 

এর খারাপ দিকঃ

জিলাটিন এর মূল উৎস প্রাণিজ কোলাজেন। তাই প্রস্তুতিতে কোনো সমস্যা থাকলে জিলাটিন নানা জীবানুতে সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে। এছাড়া এর নিজস্ব স্বাস্থ্য ঝুঁকি না থাকলেও এটি দিয়ে তৈরি অনেক খাবারেই উচ্চমাত্রায় চিনি এবং চর্বি থাকে। তাই খাবার গ্রহণের পুর্বে এদের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

Gelatin খাওয়া কি ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ?

ইসলাম এবং ইহুদি ধর্ম মোতাবেক শুকর খাওয়া নিষিদ্ধ। তাই নিয়ম মেনে জবাই করা গবাদি পশু অথবা মাছ থেকে প্রাপ্ত জিলাটিন ব্যবহার করা যেতে পারে। পণ্যের গায়ে এই ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া থাকে। হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মের অনেকে এবং শিখজৈন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রাণিজ উৎস থেকে খাবার গ্রহণ নিষিদ্ধ। তাই জিলাটিনের বিকল্প হিসেবে আগার-আগার অথবা পেকটিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

এটি কি Gluten free (গ্লুটেন ফ্রি)?

জিলাটিন সম্পুর্ন গ্লুটেন ফ্রি। কিন্তু এটি দিয়ে তৈরিকৃত খাদ্যে গ্লুটেন আছে কিনা তা নির্ভর করবে অন্যান্য কাচামালের উপরে। 

Gelatin কি Vegan অথবা Vegetarian?

না, এটি পুরোপুরিই প্রাণিজ উৎস থেকে প্রস্তুতকরা হয়। তবে এর বিকল্পও সহজলভ্য। 

এটি কি প্রোটিন?

এটির প্রায় ৯৮% থেকে ৯৯% পুরোটাই প্রোটিন। 

পরিশেষে বলা যায়, জিলাটিন প্রোটিনের একটি বিশাল ভান্ডার, এর নিজস্ব এমাইনো এসিডের সংগ্রহ আমাদের শরীরের নানারকমের ক্ষয়রোধ করতে পারে। এটি আমরা যেহেতু নিজেরাও ঘরে প্রস্তুত করতে পারি সেহেতু এটি খুব সহজেই আমাদের খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে৷ এটিকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা এটাই নির্দেশনা দেয় ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাবে। তবে আমাদেরকেও এ দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাবারের চিনি এবং চর্বির পরিমান নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।