- Organic Food কি বা কাকে বলে?
- মানদণ্ড ও শর্তাবলী
- Organic Food এর উপকারিতা
- এর মন্দ দিক
- অর্গানিক খাদ্যে নিয়ে তর্ক বিতর্ক
- অর্গানিক খাদ্য নিয়ে কিছু প্রশ্নত্তর
Organic Food বা অর্গানিক ফুড কি?
অর্গানিক ফুড বা Organic Food বলতে আমরা সাধারণত সেই খাবার গুলোকেই বুঝে থাকি যা কৃত্রিম সার, কীটনাশক, এন্টিবায়োটিক, হরমোন এবং Genetically Modified অনুজীবমুক্ত।
"Organic Food" এই লেভেলটি গায়ে জড়ানোর জন্য একটি খাবারকে আরো কিছু জিনিস থেকে মুক্ত হতে হবে৷ এর ভিতরে রয়েছে নানা রকমের ক্যামিকেল প্রিজারভেটিভ, ফুড কালার, ফ্রেগরেন্স এবং কৃত্রিম সুইটনার।
অর্গানিক উপায়ে তৈরিকৃত শস্যে কৃত্রিম সার প্রয়োগ করা হয় না। জৈব্যসার, সবুজ সারসহ নানা রকমের প্রাকৃতিক পন্থা অবলম্বন করা হয়। কীটনাশক ব্যবহার না করে ফেরোমন ট্রাপ জাতীয় প্রযুক্তির সামনে আসছে।
যেমনঃ অর্গানিক ড্রেইরির মূল আকর্ষণ হলো এন্টিবায়োটিক এবং মোটা তাজাকরণের ট্যাবলেট ছাড়া গবাদিপশু। এতে করে আমরা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারছি।
অর্গানিক ফুড হওয়ার মানদণ্ড ও শর্তাবলী:
বিভিন্ন দেশে অর্গানিক ফুডের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও তাদের মানদণ্ড থাকে, যা অনুসরণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে USDA (United States Department of Agriculture) এবং ইউরোপে EU Organic Logo ব্যবহার করে খাবারের অর্গানিক স্ট্যাটাস নির্ধারণ করা হয়।
অর্গানিক ফুডের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও শর্ত পূরণ করতে হয়, যার মধ্যে কিছু প্রধান শর্ত হলো:
- রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করা: অর্গানিক চাষে কৃত্রিম সার, কীটনাশক বা হরমোন ব্যবহার করা হয় না। এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক সার, কম্পোস্ট, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়।
- জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম (GMO) মুক্ত: অর্গানিক ফুডে Genetically Modified Organism ব্যবহার করা যায় না।
- প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি: ফসল চাষের ক্ষেত্রে ফসলের crop rotation পদ্ধতি, গ্রীন ম্যানুর (green manure), এবং বায়োফার্টিলাইজার ব্যবহার করতে হবে। কোনো ধরনের কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।
- পশুপালনের ক্ষেত্রে: প্রাণিসম্পদের লালন পালনের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক বা গ্রোথ হরমোন দেওয়া যাবে না। প্রাণীদের মুক্তভাবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে পালন করতে হবে।
- প্রাণিসম্পদের খাদ্য: প্রাণিসম্পদের খাদ্যেও অর্গানিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। তার মানে তাদের খাদ্যও অর্গানিক হতে হবে।
- প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ: অর্গানিক চাষে মাটি, পানি ও পরিবেশের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাটির উর্বরতা রক্ষা এবং পানির দূষণ প্রতিরোধ করা হয়।
- প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে: অর্গানিক ফুড প্রক্রিয়াজাত করার সময় কৃত্রিম রং, স্বাদবর্ধক বা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা যাবে না। এবং আলট্রা প্রসেসেড পদ্ধতি ও অনুসরণ করা যাবে না। প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সাধারণত প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং উপাদান ব্যবহার করতে হবে।
এই শর্তগুলো পূরণ করার পরই কোনো খাবারকে অর্গানিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অর্গানিক খাবারের উপকারিতা
গবেষণায় উঠে এসেছে Organic Food পুষ্টিগত দিক থেকে উৎকৃষ্ট। এই খাবারগুলো Inorganic প্রকরণের তুলনায় এদের মাঝে ভিটামিন এবং মিনারেল এর পরিমান বেশি। এই সকল খাবারে নাইট্রেটের পরিমান ৩০% পর্যন্তও কম হতে দেখা গিয়েছে, নাইট্রেটকে বেশ কিছু রকমের ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়।
অর্গানিক দুধে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড যেমন ওমেগা-থ্রি অধিক পরিমানে রয়েছে। সেই সাথে আয়রণ ও ক্যারোটিনয়েডও অধিক পরিমানে উপস্থিত। এগুলো হার্টের অসুখে ঝুকি কমায়।
ভারি ধাতু যেমন ক্যাডমিয়াম আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষতি করে। Organic Food এ ক্যাডমিয়ামের পরিমান বেশ কম। একই সাথে Antibiotic Resistant ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকেও এই ধরণের খাবার আমাদের মুক্ত রাখে।
কিছু পরীক্ষা থেকে এমনটা প্রস্তাব করা হয়েছে যে যারা Organic Food খায় তাদের হয়ত এলার্জি যেমন একজিমার আক্রমণ কম হয়।
Organic Food এর মন্দ দিক
আমাদের জনসংখ্যা এখন বাড়তির দিকে। অর্গানিক পদ্ধতি সব সময় আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। একই সাথে এটি তুলনামূলক ব্যায়বহুল। তাই অর্গানিক খাবার সকলের গ্রহণ করা সম্ভব হয়৷
অর্গানিক খাবারে সেলেনিয়াম এবং আয়োডিনের পরিমান কম থাকে। যা আমাদের বিভিন্ন শারিরীক ক্রিয়া এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অর্গানিক সব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত এটি ভাবাও ঠিক না। অর্গানিক ফুড ট্যাগের আড়ালে অধিক চিনি দেওয়া, এবং ফ্যাট ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার বাজারজাতের একটি প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়।
অর্গানিক খাদ্য নিয়ে তর্ক বিতর্ক
একটি নতুন ধারণা যখন আমাদের সামনে চলে আসে তখন এটা স্বাভাবিক যে পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতবাদ আসবে। কারো কারো জন্য এটি শুধুমাত্র প্রপাগাণ্ডা আবার কারো কারো জন্য এটি ভালো জীবন যাপনের একটি সুযোগ। কিন্তু বিজ্ঞান ব্যবসার কথা বলে না, বিজ্ঞান শুধু তার নিজের বক্তব্য দেয় তা ফলাফল যাই হোক না কেনো।
আমরা সাধারণত যেসব খাবার খেয়ে থাকি বনাম অর্গানিক খাবার এর বিতর্কে একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে পরের গ্রুপটা রাসায়নিক পদার্থমুক্ত। আর এর পুষ্টিমানের ব্যাপারে অনেক গবেষণা আছে। কিছু গবেষণার ফলাফল পুরোপুরি পরিষ্কার আবার এমন অনেক গবেষণাপত্র আছে যেখানে আমরা একটি নির্দিষ্ট ফলাফলে পৌছাতে পারি নি এর অর্থ হলো আরো বড় বড় পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। একটা সময়ে আমরা হয়ত নিশ্চিত করে বলতে পারবো যে Organic Food এ পুষ্টি বেশি নাকি একই রকম।
তবে, আমদের এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অর্গানিক খাবারে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান অধিক পরিমানে রয়েছে এবং রাসায়নিক পদার্থ বেশ কম। এই সকল রাসায়নিক পদার্থের বেশির ভাগই কার্সেনোজেনিক অর্থাৎ এরা ক্যান্সার কোষ তৈরি করে৷ শুধুমাত্র এই একটা দিক বিবেচনা করলেও আমাদের যতটা সম্ভব অর্গানিক খাবার খাওয়া উচিত।
অর্গানিক খাদ্য সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
১. Organic Food আর Natural Food কি এক?
→ দুইটি ভিন্ন। অর্গানিক খাবারে বাইরের ক্যামিকেল ব্যবহৃত হয় নি। এবং ন্যাচারাল খাবার সাধারণত কোনো প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে যায় নি।
২. এই ধরণের খাবার কি অধিক উৎপাদনশীল?
→ যেহেতু জেনেটিক্যালি মোডিফাইড কিছু ব্যবহৃত হয় না সেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই এর উৎপাদনশীলতা কম
৩. অর্গানিক ফুড কি পরিবেশের জন্য ভালো?
→অবশ্যই। এটি মাটি দূষণ এবং মাটির ক্ষয় কমিয়ে দেয়
৪. অর্গানিক মানেই কি স্বাস্থ্যকর?
→মোটেও না। খাবার কেনার সময় নির্দেশিকা এবং ক্যালোরি চার্ট দেখে কেনা উচিত।