Gluten Free Diet কি?
সেই সব খাবারকেই গ্লুটেন ফ্রি খাবার বলেন বুঝানো হয় যাদের মাঝে গ্লুটেন নেই।
গ্লুটেন মুলতঃ একধরণের প্রোটিন যা পাওয়া যায় গম এবং এক গোত্রীয় বিভিন্ন শস্যে, যার ভিতরে রয়েছে বার্লি, রাই। খাবারের মাঝে যেন গ্লুটেন এর উপস্থিতি না থাকে, এটি নিশ্চিত করতেই গ্লুটেন ফ্রি ডায়েটের প্রচলন হয়েছে। এখন দিন দিন প্যাকেটজাত খাবারের মাঝে "গ্লুটেন ফ্রি ট্যাগ" জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেকে মনে করেন এই ধরণের খাবার স্বাস্থ্যের জন্য গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় ভালো, এতে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই ব্যাপারে এখনো ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন।
এই কারনে বিশ্বজুড়ে অনেকেই গ্লুটেন ফ্রি খাবারের জন্য ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন৷ এখন বাইরের অনেক দেশেই গ্লুটেন ফ্রি খাবার সহজেই পাওয়া যায় এবং অনেকেই এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।
কেন Gluten free Diet এর প্রচলন হলো?
গম জাতীয় খাবার তো আমরা সাধারণভাবেই খেয়ে থাকি তাহলে গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট নিয়ে হঠাৎ এত উচ্চবাচ্চ্য কেনো? এর অন্যতম কারন হলো সেলিয়াক ডিসিস এবিং গ্লুটেন সেন্সিটিভিটি।
সেলিয়াক ডিসিস এর দিকেই প্রথমে আসা যাক। এটি একটি অটো-ইমিউন ডিসঅর্ডার। এটি হলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম আমাদের ক্ষুদ্রান্তের ভিতরের পর্দার ক্ষতি করা শুরু করে। একটা সময় ক্ষুদ্রান্ত এর পুষ্টিশোষণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
গ্লুটেন সেন্সিটিভিটি হলো গ্রুটেন হজম করার ক্ষমতা না থাকা। এর ফলে গ্লুটেন আছে এমন খাবার খেলে এরা অসুস্থ হয়ে পড়ে৷
কি কি খাবারে গ্লুটেন আছে?
গ্লুটেন ফ্রি ডায়েটে অভ্যস্ত হতে হলে আমাদের বেশকিছু প্রকারের গম জাতীয় খাবার বন্ধ করে দিতে হবে। এর ভিতরে আছে আটা, ময়দা, বার্লি দিয়ে তৈরি বেশির ভাগ খাবার। শাক সবজি, ভাত, আলু, মাছ, মাংস এর সবই গ্লুটেন ফ্রি। তবে আমরা নানা রকমের প্রসেসড খাবার খাই যাতে গ্লুটেন আছে৷ যেমন রুটি, বার্গার, পিজ্জা, সিরিয়েল। এমনকি সয়া সস, আইসক্রিম থেকে শুরু করে অনেক মেডিকেশনেও গ্লুটেন পাওয়া যায়৷ তাই এই খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত হতে হলে আমাদের অবশ্যই গ্লুটেন ফ্রি ট্যাগ দেখে নিতে হবে।
গ্লুটেন ফ্রি খাবার নিয়ে কিছু ধারণা নিয়েঃ
১. আমাদের সবারই গ্লুটেন ফ্রি খাবার খাওয়া উচিত কি?
উত্তর হলো না। আমরা চাইলে যে কেও গ্লুটেন ফ্রি খাবার খেতে পারি কিন্তু এটা বাধ্যতামূলক নয়। কারন উপরে উল্লেখিত এই অসুখগুলো সবারই যে হয় এমন না। যাদের হয় তাদের গ্লুটেন ফ্রি খাওয়া উচিত কিন্তু অন্যদের এটি না করলেও হয়৷ যেমনঃ যে ডায়বেটিক সে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা গ্রহণে সতর্ক থাকে, যে ল্যাকটোজ ইনটলারেট সে দুধ গ্রহণে সতর্ক থাকে।
২. কার্বোহাইড্রেট খেলেই গ্লুটেন খাওয়া হয় কিঃ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার সাথে গ্লুটেনের কোনো সম্পর্ক নেই। ভাত, আলু সহ এমন অনেক শর্করা আছে যা গ্লুটেন ফ্রি৷
৩. গ্লুটেন ফ্রি মানে কি বেশি স্বাস্থ্যসম্মতঃ এই পুরো প্রশ্নটাই অনেক আলোচনার জায়গা রাখে। গম, বার্লি, যব সবচেয়ে সহজপাচ্য খাবারগুলোর কিছু। এতে যেমন অনেক ভিটামিন আছে তেমন আছে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। যা হয়ত অন্য অনেক খাবারে আমরা পাই না। গ্লুটেন ফ্রি ডায়েটের জন্য এই পুষ্টি উপাদানগুলো থেকে আমাদের শরীর বঞ্চিত হতে পারে। আবার আমাদের মাঝে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য হোল গ্রেইন খুবই উপকারী। সেখানে গ্লুটেন ফ্রি ডায়েটে চলে যাওয়া মঙ্গল থেকে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভবনাকেই ত্বরাহ্নিত করে।
গ্লুটেন ফ্রি খাবার এর জন্য আমরা কি কি খাবার খেতে পারিঃ
১. হোল গ্রেইনের মাঝে এমন অনেক গ্রেইনই আছে যা গ্লুটেন ফ্রি এবং পুষ্টিমানেও অনন্য। এর মাঝে আছে ব্রাউন রাইস, তাপিওকা, গ্লুটেন ফ্রি ওটস, ভুট্টা।
২. প্রায় সব ধরণের ফলমুল, শাক-সবজি আমরা খেতে পারবো। কিন্তু ক্যানড খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।
৩. মাছ মাংস গ্লুটেন ফ্রি। কিন্তু বেসন দিয়ে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন তাতে গ্লুটেন না থাকে। প্রসেসড মিট খাওয়ার সময় নিশ্চিত হতে হবে এবং খাবারে সয়াসস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সব কথার শেষ কথা, Gluten free diet এ যাওয়া না যাওয়া একজনের নিজস্ব ব্যাপার। কেও চাইলে যেতেই পারেন। আবার কারো মনে হলে নাও যেতে পারেন। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে খাবার যেন সুষম হয়। না হলে কোনো প্রকার ডায়েটেই লাভ হবে না।