Cold Press বা কোল্ড প্রেস মানে কি?
কোল্ড প্রেস বা Cold press মুলতঃ বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ থেকে উচ্চচাপ ব্যবহার করে জ্যুস বা তেল আহরনের উপায়কে বলা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার মুল বিষয় হলো এখানে উচ্চতাপের ব্যবহার হয় না এবং প্রসেসিং এর সময়েও কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার হয় না।
কোল্ড প্রেস প্রক্রিয়ার ব্যবহার
বিভিন্ন ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে কোল্ড প্রেসিং এর মাধ্যমে নানা রকমের তরল খাদ্য প্রস্তুত করে থাকি। এবং দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্ততকৃত খাবারের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া গিয়েছে।
সাধারণত তিন রকমের খাবারে এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়ঃ
- তেল
- জুস
- উন্নত গৃহপালিত প্রাণির খাবারে
এছাড়া কসমেটোলজিতে কোল্ড প্রেসিং এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
কীভাবে করা হয়?
Cold press প্রক্রিয়ার জন্য বিশাল সিলিন্ডারের ব্যবহার করা হয়। এরপর এতে যে পণ্য থেকে তেল বা জ্যুস বের করা হবে না তাকে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপরে হাইড্রোলিক প্রেসের মাধ্যমে প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন তরলের জন্য কিংবা বিভিন্ন কাচামালের জন্য চাপের পরিমান কম বেশি হতে পারে। তবে সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার পাউন্ড চাপ প্রয়োগ করা হয়৷ এখানে কোনো প্রকারের তাপ প্রয়োগ করা হয় না, হলেও তা খুবই সামান্য। সেই সাথে অক্সিজেনের ব্যবহার নেই। এই কারনে উচ্চ তাপমাত্রা কিংবা পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ার সময়কালীন নিউট্রিয়েন্ট (পুষ্টি) লস এখানে হয় না বললেই চলে।
কোল্ড প্রেস এর সুবিধা
১৷ আমরা জানি ভিটামিন উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু কোল্ড প্রেসড জ্যুস বা তেলে উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয় না, তাই এই ভিটামিন লস অনেকটাই কমানো সম্ভব। একই কথা মিনারেলসের বেলাতেও প্রযোজ্য
২। রিফাইনড জ্যুস বা তেলের মাঝে তাপের কারনে অনেক অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের হয়ে আসে। নানা রকমের ফসফেট এর ভিতরে একটি। অতিরিক্ত ফসফেট শরীরের ক্ষতি করতে পারে
৩। কোল্ড প্রেসড তেলের সুগন্ধ তুললামুলক বেশি এবং ঘনত্ব কিছুটা কম। তাই এর এসথেটিক ভ্যালু রয়েছে।
৪। যেসব খাবার অল্প আচে রান্না করা যায়, এই সময় খাবার তৈরিতে কোল্ড প্রেস তেল খুবই উপযোগী
৫। অনেকে এই প্রক্রিয়ায় তৈরিকৃত জ্যুসকে ডিটোক্স হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। যদিও এখনও এই ব্যাপারে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
৬. প্রিজারভেটিভ এর ব্যবহার হয় না।
৭. যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় তৈরিকৃত জ্যুস ৭২ ঘন্টার বেশি সংরক্ষন করা যায় না সেহেতু এটি সব সময়ই সতেজ এবং টাটকা অবস্থাতেই পাওয়া যায়।
৮. Cold pressed তেলে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। তাই এই ধরণের তেল ত্বকে ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
কোল্ড প্রেস এর অসুবিধা
১। এই ধরণের জ্যুস কিংবা তেল তৈরিতে কোনো প্রকার প্রিজারভেটিভ ব্যবহৃত হয় না। এমনকি পাস্তুরাইজেশন কিংবা UHT (Ultra Heat Treatment) প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়েও যেতে হয় না। এই কারনে এই প্রক্রিয়ায় তৈরি খাবারের Shelf life কম তাই দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
২। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা তুলনামূলক কম
৩। নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবং কম উৎপাদনের কারনে এর পণ্যগুলো উচ্চদামে বিক্রি হয়।
৪। এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত তেলের স্মোকিং পয়েন্ট কম। তাই উচ্চতাপে যেসব খাবার তৈরি করা হয় এবং প্রাচ্যের Gourmet শিল্পে যেখানে উচ্চতাপে রান্না হয় সেখানে এই ধরণের তেল অনেক সময়ই ব্যবহারের অনুপযোগী।
উপরের আলোচনা থেকে একটা ব্যাপার নিশ্চিতভাবে বলা যায়, cold pressed এই মুহুর্তে যুগের চাহিদা কিন্তু এর স্বাস্থ্যগত সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে এখনো টানা গবেষণার প্রয়োজন। এর স্বল্প সেলফ লাইফ এবং অত্যাধিক দাম একে সাধারণ মানুষের নাগালের কিছুটা বাইরেই রেখেছে। এখন এটি আমাদের বিবেচনা হওয়া উচিত, আমরা কি cold pressed খাবারের দিকে ঝুকবো নাকি সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য রিফাইন্ড তরলকেই বেচে নিবো।