ক্যাফেইন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্নায়ু উদ্দীপক পদার্থ। এটি কফি, চা, সোডা, চকোলেট এবং এনার্জি ড্রিংক্স এ পাওয়া যায়। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই প্রতিদিন কোনো না কোনো মাধ্যমে এটি গ্রহণ করে। কিন্তু এটি এমন একটি পদার্থ যার ভালো দিক ও খারাপ দিক দুইটিি রয়েছে। অতএব এর সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা দরকার।
ক্যাফেইন (Caffeine) কি এবং কীভাবে কাজ করে?
Caffeine একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক যা আমাদের স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে কিছু সময়ের জন্য মনোযোগ, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি জ্যান্থাইন নামক একটি গ্রুপের অন্তর্গত। এটি বিশ্বব্যাপী ৬০ টিরও বেশি উদ্ভিদে পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে কফি বিন, চা পাতা এবং কোকো।
অ্যাডেনোসিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটার রয়েছে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে ধীর করে দেয় এবং আমাদের ঘুমের অনুভূতি দেয়। Caffeine এর কাজ বন্ধ করে দেয়। এটি করার মাধ্যমে সতর্কতা, শক্তি এবং ফোকাস বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরকে অন্যান্য উপায়েও প্রভাবিত করে, যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, রক্তচাপ এবং মেটাবলিজমকে প্রভাবিত করা ইত্যাদি।
ক্যাফেইনের উপকারিতা
শরীর ও মনের জন্য এর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। কিছু ইতিবাচক প্রভাবে মাঝে অন্যতম হলো:
- বর্ধিত সতর্কতা এবং একাগ্রতা
- অধিক শারীরিক কর্মক্ষমতা এবং সহনশীলতা
- মন মানসিকতার উন্নতি
- পারকিনসন এবং আলঝেইমারের মতো নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি হ্রাস করা
- মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের ব্যথার উপশম
- ওজন হ্রাস এবং ক্ষুধা দমন
ক্যাফেইনের অপকারিতা
Caffeine আমাদের শরীরের উপরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা এই পদার্থটি প্রতি সংবেদনশীল । সবচেয়ে সাধারণ কিছু নেতিবাচক প্রভাব এর মাঝে রয়েছে:
- অনিদ্রা এবং ঘুমের ব্যাঘাত
- অস্থিরতা এবং উদ্বেগ
- হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি
- পেট খারাপ এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স
- ডিহাইড্রেশন এবং অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া
- আসক্তি
মানসিক স্বাস্থ্য এর সাথে এটির সম্পর্ক
Caffeine মানসিক স্বাস্থ্যকেও ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি, Caffeine বিষণ্নতার ঝুঁকি কমাতে, জ্ঞান আহরণ উন্নত ও সহজ করতে এবং স্মৃতিশক্তি এবং শেখার প্রক্রিয়ার উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যদিকে, অত্যধিক Caffeine গ্রহণ উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সাথে সম্পর্কিত। এটি ঘুমের সাথেও হস্তক্ষেপ করতে পারে, যা মনের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ বাড়াতে পারে।
গ্রহণের প্রস্তাবিত দৈনিক সীমা
এর প্রস্তাবিত দৈনিক সীমা বয়স, ওজন, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং সহনশীলতার মতো বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ক্যাফেইনের প্রস্তাবিত দৈনিক সীমা ঠিক করেছেন। নিচে তা দেওয়া হল:
- বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০মিলিগ্রাম পর্যন্ত
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত
ক্যাফেইনযুক্ত কোন পানীয় কতটুকু গ্রহণ করা উচিৎ
প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রাম Caffeine গ্রহণ করা যাবে এই তথ্যটি আমরা তখনই ব্যবহার করতে পারবো যখন আমরা জানতে পারবো কোন পানীয়তে কি পরিমানে এই উপাদান বিদ্যমান। তবে আমাদের একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে ৪০০ মিলিগ্রামের যে সীমা আমাদের সামনে নিয়ে আসা হয়েছে এটি সর্বোচ্চ সীমা। অতএব এর থেকে কম পরিমাণে গ্রহণ করাই উত্তম। নিচে তালিকাকারে কোন খাবারে কি পরিমাণে Caffeine রয়েছে তা দেওয়া হলো, একই সাথে এটিও অন্তর্ভুক্ত করা হলো এই পানীয় কিংবা খাবার সর্বোচ্চ কি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ:
পাণীয় | ক্যাফেইনের পরিমান (মি.গ্রা.) | প্রতিদিনের সর্বোচ্চ গ্রহণসীমা |
সাধারণ কফি (২৪০ মিলি) | ৯৫ -১৬৫ | ১-২ কাপ |
এসপ্রেসো (৩০ মিলি) | ৪৭-৬৪ | ১-২ শট |
ব্ল্যাক টি (২৪০ মিলি) | ২৫-৪৮ | ১ -৩ কাপ |
গ্রিন টি (২৪০ মিলিl) | ২৫-২৯ | ১-৩ কাপ |
কোলা (৩৫৫ মিলি) | ৩০ -৪৬ | ০- ১ ক্যান (অতিরিক্ত চিনির পরিমাণের জন্য না গ্রহনের প্রস্তাব দেওয়া হয়) |
এনার্জি ড্রিংক্স (২৪০ মিলি) | ২৭-১৬৪ | ০-১ ক্যান (অতিরিক্ত Caffeine ও চিনির পরিমাণের জন্য না গ্রহনের প্রস্তাব দেওয়া হয়)
|
ডার্ক চকলেট (২৪ গ্রাম) | ১২-৩০ | ১ থেকে ২ টি বার (অতিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ বার না খাওয়াই উত্তম) |
ক্যাফেইন সেনসিটিভিটি
কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় ক্যাফেইনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। তাদের ক্ষেত্রে কম মাত্রায়ও নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করতে পারে। Caffeine সংবেদনশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কারণগুলির মধ্যে রয়েছে জেনেটিক্স, বয়স, লিঙ্গ, ওষুধের ব্যবহার এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস।
উদাহরণস্বরূপ, ধূমপায়ীরা অধূমপায়ীদের তুলনায় দ্রুত Caffeine বিপাক করতে পারে, আবার মহিলারা তাদের মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট পর্যায়ে এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হতে পারে।
নিরাপদে ক্যাফেইন গ্রহণের সঠিক নিয়ম
যে কেউ Caffeine গ্রহণজনিত সমস্যা এড়াতে চাইবে। এর জন্য এই উপাদান গ্রহণের কিছু পরামর্শ রয়েছে ৷ নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
- নিজের সীমা জানতে হবে: একজন কতটুক এই উপাদান গ্রহণ করছেন তার খেয়াল রাখতে হবে এবং প্রস্তাবিত দৈনিক সীমার বাইরে যাওয়া যাবে না।
- উৎস বাছাইয়ে সচেতন হতে হবে: ক্যাফেইনের স্বাস্থ্যকর উৎসগুলি বেছে নিতে হবে, যেমন কফি এবং চা। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত বা উচ্চ প্রক্রিয়াজাতকৃত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
- সঠিক সময় নির্ধারন করতে হবে: দিনে খুব দেরি করে Caffeine খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এটি ঘুমের আনয়নের প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং সার্কাডিয়ান রিদমকে প্রভাবিত করতে পারে।
- হাইড্রেটেড থাকুন: এটি ডাইইউরেটিক। অর্থাৎ এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে এবং নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি কমাতে প্রচুর পানি এবং অন্যান্য তরল পান করতে হবে।
- বিরতি নিতে হবে: ক্যাফেইনের প্রতি সহনশীলতা পুনরায় ঠিক করতে এবং এর প্রতি নির্ভরতা এড়াতে মাঝে মাঝে বিরতি নিতে হবে।
- শরীরের কথা শোনা: এটি কীভাবে একজনের শরীর এবং মনকে প্রভাবিত করে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী গ্রহণের পরিমান সামঞ্জস্য করতে হবে।
সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন: ক্যাফেইন কি আসক্তি তৈরি করতে পারে?
উত্তর: Caffeine থেকে আসক্তি হতে পারে। বিশেষ করে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে সেবন করা হলে। এটি মস্তিষ্ককে ডোপামিন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে, যা আসক্তি এবং নির্ভরতা তৈরি করে।
প্রশ্ন: Caffeine উইথড্রয়াল এর লক্ষণগুলো কি কি?
উত্তর: Caffeine Withdrawal এর উপসর্গগুলি এর মাঝে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং বিরক্তি।
প্রশ্ন: ক্যাফেইন কি ঘুমকে প্রভাবিত করে?
উত্তর: হ্যাঁ, Caffeine অ্যাডেনোসিনকে ব্লক করে ঘুমের প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। ক্যাফেইনের প্রভাব বেশ কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে, তাই ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময় এটি গ্রহণ এড়ানো ভাল।
প্রশ্ন: ক্যাফেইন কি হার্টের জন্য খারাপ?
উত্তর: Caffeine সাময়িকভাবে হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়াতে পারে, তবে বেশিরভাগ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ নয়। কিন্তু যারা হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত তারা এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হতে পারে।