Aerobic Exercise কি? অ্যারোবিক এক্সারসাইজের প্রকার, উপকারিতা এবং সতর্কতা

অ্যারোবিক এক্সারসাইজ কার্ডিও নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি শরীর চর্চার প্রক্রিয়া যা হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়াতে সক্ষম। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হৃদরোগ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে এই ধরনের ব্যায়াম অপরিহার্য।

Aerobic Exercise কাকে বলে? 

অ্যারোবিক এক্সারসাইজ বা Aerobic Exercise হল যেকোনো ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ যা একজন মানুষের হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়িয়ে দেয়। এটি কম-তীব্রতা সম্পন্ন কাজ যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানো থেকে উচ্চ-তীব্রতা সম্পন্ন কাজ যেমন দৌড়ানো পর্যন্ত হতে পারে। 

এই Exercise এর মূল লক্ষ্য হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং রক্ত সংবহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করা।

উদাহরণ: হাঁটা, জগিং, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং, এবং নাচ।

কার্ডিও এক্সারসাইজ এর সাথে এর পার্থক্য:

কার্ডিও এর সাথে এর পার্থক্য হলো কার্ডিও এক্সারসাইজ হার্ট রেট বাড়ায় এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে কাজ করায়। তার মানে হলো অ্যারোবিক এক্সারসাইজ শরীরের সামগ্রিক সহনশীলতা এবং স্ট্যামিনা বাড়ায়, আর কার্ডিও এক্সারসাইজ মূলত কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করে।

অ্যারোবিক এক্সারসাইজ এর প্রকার (Types of Aerobic Exercise)

বিভিন্ন ধরণের কার্ডিও রয়েছে যা আমরা আমাদের হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখতে এবং সামগ্রিক ফিটনেস উন্নত করতে প্রয়োগ করতে পারি। বিভিন্ন রকমের অ্যারোবিক এক্সারসাইজ রয়েছে। নিচে পাঁচটি উল্লেখ করা হলো:

দ্রুত হাঁটা: 

দ্রুত হাঁটা কার্ডিও শুরু করার একটি ভালো তরিকা হতে পারে। নিয়মিত হাটলে শরীরে সতেজ থাকে, রক্ত চলাচল ভালো হয়, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে, অপ্রয়োজনীয় ক্যালরিও খরচ হয়।

দৌড়ানো: 

উচ্চ-তীব্রতার ওয়ার্কআউট এর মাঝে দৌড়ানো একটি দুর্দান্ত উপায়। এটি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং পায়ের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

সাইকেল চালানো: 

সাইকেল চালানো একটি চমৎকার কার্ডিও যা শরীরের জয়েন্টগুলোর জন্য উত্তম। এটি বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে উভয়ই করা যেতে পারে।

সাঁতার: 

সাঁতার একটি লো ইন্টেনসিটি বা কম তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম যা জয়েন্টের সমস্যাযুক্ত লোকদের জন্য দুর্দান্ত। এটি পেশীকে শক্তিশালী করতে এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।

নাচ: 

নাচ হৃদপিণ্ডকে পাম্প করার এবং ফিটনেসের স্তর উন্নত করার একটি কার্যকর উপায়। এটি একা বা একটি দলগতভাবে করা যেতে পারে। নানা রকম নাচের ধরণ থেকে মানুষ তার নিজের উপযোগী ধরণ বেছে নিতে পারে।

কিভাবে শুরু করতে হয়:

যেকোন অ্যারোবিক ব্যায়াম শুরু করার আগে হালকা ওয়ার্ম-আপ করা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারেঃ

  • হালকা ওয়ার্ম-আপ দিয়ে শুরু করতে হবে, যেমন কয়েক মিনিটের জন্য হালকা গতিতে হাঁটা বা জগিং।
  • স্ট্রেচিং শরীরের পেশীকে টান লাগা থেকে রক্ষা করে। তাই যেকোনো শরীরে চর্চা এর আগে স্ট্রেচিং গুরুত্বপুর্ণ। 
  • আরামদায়ক ও সহনীয় গতিতে কার্ডিও শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়াতে হবে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস স্থির রাখতে হবে। শ্বাস ধরে রাখা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। 
  • ব্যায়াম শেষ হলে একইভাবে শ্বাস স্বাভাবিক পর্যায়ে এনে, ধীরে ধীরে তীব্রতা কমিয়ে ব্যায়াম শেষ করতে হবে। 

অ্যারোবিক এক্সারসাইজ এর উপকারিতা:

Aerobic Exercise অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। যার মধ্যে রয়েছে:

কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি: অ্যারোবিক ব্যায়াম হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

শরীরের চর্বি কমানো: নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম ক্যালোরি পোড়াতে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে ওজন কমে যায়।

মনকে সতেজ রাখে: অ্যারোবিক ব্যায়াম এন্ডোনেফ্রিন নামের নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ করে, যা প্রাকৃতিকভাবে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে। এতে মন ভালো থাকে এবং চাপের মাত্রা কমে যায়।

কর্মউদ্দীপনা বৃদ্ধি: অ্যারোবিক ব্যায়াম ডোপামিন নামের হরমোন ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে কর্ম উদ্দীপনা বেড়ে যায়। 

হাড় মজবুত করে: অ্যারোবিক ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

Aerobic Exercise বিষয়ক সতর্কতা:

যদিও অ্যারোবিক ব্যায়াম সাধারণত নিরাপদ এরপরেও সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। নিচে কিছু সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হলো:

ধীরে ধীরে শুরু করুন:

কেও যদি নতুন নতুন ব্যায়াম করা শুরু করে থাকে তবে কম তীব্রতার ওয়ার্কআউট দিয়ে শুরু করা উত্তম এবং ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়ানো উচিৎ।

উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করা: 

এমন জুতা বেছে নেওয়া উচিৎ যা পায়ের উপরে চাপ কমাতে সাহায্য করে। যেমন: জগিং এ জগিং সু ব্যবহার করা।

হাইড্রেটেড থাকা: 

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে ওয়ার্কআউটের আগে, চলাকালীন এবং পরে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে।

শরীরের সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে: 

ব্যায়ামের সময় যদি কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয় তবে, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। একেক জনের শরীরের সীমাবদ্ধতা একেক রকম। কারো সাথে তুলনা করা যাবে না, নিজের শরীরের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাকে নিজেরই বুঝতে হবে। 

অ্যারোবিক এক্সারসাইজ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর: 

  • প্রশ্ন: কত ঘন ঘন Aerobic Exercise করা উচিত?

উত্তর: প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি-তীব্রতার Aerobic Exercise বা প্রতি সপ্তাহে ৭৫ মিনিটের উচ্চ-তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

  • প্রশ্ন: জয়েন্টে সমস্যা থাকলে কি এই ব্যায়াম করা যাবে?

উত্তর: হ্যাঁ, জয়েন্টে সমস্যা থাকলে কম তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং সাঁতার কাটা করা যেতে পারে।

  • প্রশ্ন: অ্যারোবিক এক্সারসাইজের জন্য কি কোন বিশেষ সরঞ্জাম দরকার?

উত্তর: না, এই ব্যায়ামের জন্য কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। হাঁটা, জগিং, এবং নাচ কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই করা যাবে। কিছু ধরণের অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন সাইক্লিং বা রোয়িং এর জন্য নির্দিষ্ট সরঞ্জামের প্রয়োজন হতে পারে।

  • প্রশ্ন: অ্যারোবিক ব্যায়াম সেশন কতক্ষণ হওয়া উচিত?

উত্তর: একবারে কমপক্ষে ১০ মিনিট Aerobic Exercise করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে ওয়ার্কআউটের সময়কাল বাড়ানো যেতে পারে। 

  • গর্ভাবস্থায় অ্যারোবিক ব্যায়াম করা কি নিরাপদ?

উত্তর: গর্ভাবস্থায় কম এবং মাঝারি-তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম করা সাধারণত নিরাপদ। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।