টানা বেশ কয়েকদিন না খেয়ে থাকার পুরো ব্যাপারটা হাস্যকর ও ভিত্তিহীন বলে মনে হলেও ব্যাপারটি আসলে এমন না। যখন পুরো ব্যাপারটাই সময় নিয়ে, পরিকল্পিত উপায়ে নিরাপদভাবে করা হয় তখন এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার বয়ে নিয়ে আসতে পারে। এসময় আমাদের শরীর তার অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ঠিক করে নিয়ে পুনরায় নানা রকমের মেটাবলিক এক্টিভিটি শুরু করে যার ফলে শরীরে অনেক সতেজতা আসে।
Prolonged Fasting কি?
Prolonged Fasting বলতে আমরা বুঝি ৪৮ ঘন্টা বা তার বেশি সময় লাগিয়ে ফাস্টিং বা উপবাস চালিয়ে যাওয়া। এই ধরণের ফাস্টিং ৩, ৫, ৭ দিন থেকে শুরু করে ২১ দিন পর্যন্তও হতে পারে।
এই সময় আমাদের শরীর সারভাইবাল মোডে চলে যায় এবং জমিয়ে রাখা চর্বি খরচ করা শুরু করে, অপ্রয়োজনীয় উপাদানকে বের করে দেয়। আমাদের পরিপাক তন্ত্র একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশ্রাম লাভ করে। যার ফলে আমাদের শরীরে অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়।
Prolonged Fasting করার নিয়ম ও সতর্কতা
Prolonged Fasting কিছু নিয়ম মেনে করতে হয়। কারণ এটি যেহেতু একটি কঠোর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সেহেতু এর প্রক্রিয়াতে ভুল থাকলে বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে। নিচে এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- প্রথমে ডাক্তার কিংবা ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া বিশেষ করে তাদের জন্য যারা কোনো ঔষধ নিয়মিত খাচ্ছেন।
- কত সময়ের জন্য এটি চলবে তা ঠিক করা।
- নিয়মিত পানি খাওয়া।
- সামুদ্রিক লবণ ও মাল্টি ভিটামিন গ্রহণ করা যেন শরীরে এগুলোর ঘাটতি না তৈরি হয়।
- খুবই হালকা ব্যায়াম।
- নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখা।
- উপোষ শেষ করার পর ধীরে ধীরে ভারি খাবার গ্রহণের দিকে যাওয়া।
- যে কোনো সময় খারাপ লাগা শুরু হলে পুরো প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসা।
Prolonged Fasting এর উপকারিতা
এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে: আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতি কমে আসে। দীর্ঘ সময় উপবাস এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো নতুন করে তৈরি হয়, এতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা হয় এবং স্মৃতিহ্রাস কমিয়ে দেয়।
- স্টেম সেলের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে: স্টেম সেল আমাদের শরীরের নানা রকমের কোষ তৈরির কাজ করে। এই ফাস্টিং স্টেম সেলের রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করে।
- ইনফ্লেমেশন কমাতে: এই Fasting আমাদের শরীরে নানা রকমের ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে।
- অটোফ্যাগি: এই সময় শরীর তার অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোকে অটোফ্যাগি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঝেড়ে ফেলে।
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে: ফ্রি রেডিক্যাল কমিয়ে দেয়, ফলে কমে যায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
- এন্টি এজিং: ফাস্টিং এর সময় আমাদের শরীর গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ করে। এর ফলে শরীরে বয়সের ছাপ দেরিতে পড়ে।
- ওজন কমাতে: যদিও অনেকেই হয়ত এই কারণটাকে সামনে রেখেই Prolonged Fasting কে বেছে নিবেন, তবুও এই কারণটিও আমাদের জীবনকে উপভোগ্য করতে কম গুরুত্বপূর্ণ না।
- পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম: আমাদের জন্মের পর থেকে আমাদের পরিপাক তন্ত্র একটানা কাজ করে যাচ্ছে। Prolonged Fasting আমাদের পরিপাক তন্ত্রকে এর খুবই প্রয়োজনীয় বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
Prolonged Fasting এর ক্ষতিকর দিক
প্রতিটা জিনিসেরই ভালোর সাথে সাথে খারাপ দিকও আছে। Prolonged Fasting ও এর ব্যতিক্রম না। নিচে এর কিছু ক্ষতিকর দিকে দেওয়া হলো:
- প্রচণ্ড ক্ষুধা: এটা বলার অপেক্ষা রাখে না Prolonged Fasting এর সময় অবর্ণনীয় ক্ষুধার উদ্ভব হয়। তবে এই অনুভূতি দ্বিতীয় দিন শেষ হবার পর থেকে ধীরে ধীরে কমে আসে।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া: ক্ষুধা লাগার সাথে মেজাজ মর্জি খারাপ হয়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক আছে।
- ডিহাইড্রেশন ও ইলেক্রলাইটিক ইম্বেলেন্স: খাবার গ্রহণ না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পানি গ্রহণের পরিমাণও কমে আসে। কারণ আমরা আমাদের খাবার থেকেও পানি পেয়ে থাকি। একই সাথে নানা রকমের ইলেক্ট্রোলাইটের কমতি দেখা দিতে পারে। তবে এই পরিস্থিতি দূরে রাখার জন্য মাল্টি ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
- মুখে দুর্গন্ধ: ফাস্টিং এর সময়ে ক্ষুধা জনিত কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
এই ফাস্টিং এর সময় যা খাওয়া যাবে
এই ধরণের ফাস্টিং এ কিছু খাবার খাওয়া যায়। নিচে এর তালিকা দেওয়া হলো:
- পানির বিকল্প নেই। প্রচুর পানি খেতে হবে।
- চিনি ছাড়া চা, কফি, সামুদ্রিক লবণ খাওয়া যেতে পারে।
- যারা উপোষ চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে তাদের অনেক সময় “bone broth” গ্রহণ করতে বলা হয় ।
- অনেকে এই প্রক্রিয়াকে কিছুটা পরিবর্তন করে দৈনিক ২০০-৫০০ ক্যালরি পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট ছাড়া খাবার খাওয়ার কথাও বলে। যেমন: রান্না ছাড়া শাক সবজি।
যাদের Prolonged Fasting করা উচিৎ না
Prolonged Fasting সবার জন্য উপযোগী নয়। নিচে যাদের এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিৎ না তাদের তালিকা দেওয়া হলো:
- গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী
- যাদের ইটিং ডিসঅর্ডার আছে বা ছিলো
- যাদের BMI ১৯ এর নিচে। (এই ক্ষেত্রে ওজন এমনিতেই প্রয়োজনের থেকে কম, এর থেকে কমে গেলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে)
সবশেষে বলা যায়, Prolonged Fasting একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে সুস্থ জীবন যাপনের দিকে এগিয়ে যেতে। এটি ওজন কমায়, ইনফ্লামেশন থেকে বাচায় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে দীর্ঘতর ফাস্টিং এর দিকে আমাদের ধাপে ধাপে পৌছাতে হবে আর একই সাথে প্রচুর পানি খেতে হবে। নিয়ম মাফিক নিরাপদ ফাস্টিং আমাদের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে।